ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

গাজায় হামলা: সোশাল মিডিয়ায় প্রতিবাদের ঝড়

সাইফ বরকতুল্লাহ, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৩ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০১৪
গাজায় হামলা: সোশাল মিডিয়ায় প্রতিবাদের ঝড়

এক.
গাজায় চলছে ইসলাইলি হামলা। শুক্রবার গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন আরো আট ব্যক্তি৷ ফলে সর্বশেষ সংঘাতে প্রাণহানির সংখ্যা একশো'তে পৌঁছেছে৷ আহত কমপক্ষে ৫০০ ব্যক্তি৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সহায়তার আগ্রহ প্রকাশ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

সিএনএন, বিবিসিসহ বড় বড় সংবাদ মাধ্যমে এ মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হয়েছে।

দুই.
এ হামলার প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে সোশাল মিডিয়ায়। গাজায় ইসরায়েলের হামলায় মৃতের সংখ্যা যত বাড়ছে, সাথে সাথে বাড়ছে নিহতদের ছবি আর খবর। নিমিষে ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক আর টুইটারে৷ বাংলাদেশ থেকে শুরু করে বিশ্বের সব জায়গায় ফেসবুক, ব্লগ, টুইটারে প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে।

তিন.
এপির বরাত দিয়ে প্রভাবশালী অনলাইন পত্রিকা হাফিংটন পোস্ট লিখেছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় হেরে যাচ্ছে ইসরাইল। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে ইসরাইল সরকার তরুণ ছাত্রদের টাকা দিয়ে সামাজিক মাধ্যমে প্রচারে নামাচ্ছে। পত্রিকাটি আরো লিখেছে, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর অফিস থেকে ইতিমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে, যেসব তরুণ ও ছাত্র ইসরাইলের পক্ষে প্রচার চালাবে তাদের স্কলারশিপ দেয়া হবে। পত্রিকাটি লিখেছে, Israel has announced it will pay university students to circulate pro-Israeli information on social media networks, without having to identify themselves as working for the government. The move was publicised in a statement from Israeli prime minister Benjamin Netanyahu's office, the Associated Press reported. Students will receive scholarships to "engage international audiences online" and combat anti-Semitism and calls to boycott Israel, it was alleged. (সূত্র:http://www.huffingtonpost.co.uk/2013/08/14/israel-pay-students-propaganda_n_3755782.html )

চার.
রাশিয়াভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আরটি টিভিতে গাজায় হামলা নিয়ে সংবাদ উপস্থাপিকার মন্তব্য সাড়া ফেলে দিয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে৷ বলা হচ্ছে, ফিলিস্তিনকে সমর্থন জানিয়ে কোন উপস্থাপকের এমন সাহসী মন্তব্য আর দেখা যায়নি৷ (সূত্র: ডয়চে ভেলে)
 
পাঁচ.
বাংলাদেশেও প্রতিবাদ থেমে নেই। একাত্তর টেলিভিশনের ডিরেক্টর নিউজ সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, গাজায় মারাত্মক মানবিক বিপর্যয়.... কিন্তু পৃথিবীর মানবাধিকারের ফেরিওলারা আজ নিরব..। Very much disturbed to see traumatic pictures from Gaza. ...।  

বিশিষ্ট ক্রীড়া লেখক দেবব্রত মুখোপাধ্যায় তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, সক্কাল বেলায় উঠে বিশ্বকাপ নিয়ে, আর্জেন্টিনা নিয়ে একটা লেখা লিখবো ভাবছিলাম। আরও অনেক লাইক পাবো, বেশ কিছু শেয়ার হবে; আমার কিছু ভাব হবে। হঠাৎ বৌ ডাক দিয়ে বললো- ছেলেটার জ্বর এসেছে। বৌয়ের পক্স। ভয়ে আমার বুকটা শুকিয়ে গেল-ছেলেটারও পক্স হবে না তো! এখনও ওকে কোলে নিয়ে হাঁটতে পারি না। বারবার গায়ে হাত দিয়ে দেখি, তাপ একটু বেশি হলেই আমার বুক শুকিয়ে যায়। মাথা ঠাণ্ডা করতে একটা সিগারেট ধরালাম। হঠাৎ বিদ্যুত চমকের মতো মনে হল, গাজায় যে শিশুগুলো অসহায়ভাবে মারা যাচ্ছে; ওরাও তো আমার কোনো বাবার সন্তান। ওদের ওবামার মতো, বুশের মতো বাবা নেই। ওদের বাবারা দুনিয়া কাঁপাতে পারে না। কিন্তু আমার মতো, আপনার মতো একজন অসহায় মানুষের সন্তান ছিল এরা। যারা মৃত্যুর হাত থেকে পালিয়ে বেঁচে আছে, ওরাও আমার ছেলেটার মতোই একটা ছেলে। মানুষ মরছে, মানুষ।

সাংবাদিক সাঈফ ইবনে রফিক তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, আরব জাতীয়তাবাদের বিক্রি বাড়িয়ে গণবিচ্ছিন্ন সরকারগুলো টিকে থাকার স্বার্থে ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধ করেছে, সন্ধি করেছে৷ ফিলিস্তিনিদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আরবরা ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধ করে নাই৷ আসলে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকটকে ধর্মযুদ্ধ বলারও উপায় নাই৷ ইয়াসির আরাফাত ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি করেছেন, ঈসা (আ.) যে বেথলেহেমে জন্মেছিলেন সেখানকার খ্রিস্টানরাও আরাফাতের পক্ষে৷ মধ্যপ্রাচ্য সংকটটা আসলে মানবিকতার সংকট, সাম্রাজ্যবাদের সংকট, সভ্যতার সংকট৷ এই সংকট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পাল্লা দিয়ে ব্যবসা করছে সৌদি আরব, জর্ডান, মিশর, লেবাননসহ আশপাশের আরব দেশগুলোর সরকার৷

সাংবাদিক আরাফাত এইচ বিপ্লব তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, হে ফিলিস্তিন, ক্ষমা করো আমাদের। আমরা বড়ই অপদার্থ, নিস্তেজ, কাপুরুষ।

তারেক মোরতাজা তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, কী সহিষ্ণু সময় তাদের! ফুরফুরে মেজাজে আলাপের আলাপ করেন বান কি মুন। সুগন্ধির ঝাঁঝালো গন্ধে নিখোঁজ যুবকের শরীর পোড়ানো গন্ধ মাড়িয়ে শান্তির পথ খোঁজার চেষ্টা বারাক ওবামার! আহা কী নিদারুণ মানবাধিকার!  তবুও জেগে থাকে গাজা, মৃত্যু উপত্যকা!

সাইফ বরকতুল্লাহ: সাংবাদিক, গবেষক ও কবি।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪১ ঘণ্টা, জুল‍াই ১২, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।