ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

হিটলারই কি ঠিক ছিলেন?

মনোয়ার রুবেল, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৯ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০১৪
হিটলারই কি ঠিক ছিলেন?

হিটলারকে একটি কারণে দারুন পছন্দ করা যেতে পারে। হিটলারের লেখা যারা পড়েছেন তারা জানেন তার দর্শন চমকে দেওয়ার মত।

যেমন হিটলার রক্তের শুদ্ধতায় বিশ্বাসী ছিলেন। হিটলার ব্যাখ্যা করেন স্বগোত্রের পুরুষ স্বগোত্রের নারীর সাথে যৌন সম্পর্ক করবে, এটার ব্যতয় প্রকৃতি পছন্দ করেনা। প্রকৃতি পছন্দ করেনা বলে নিম্ন শ্রেনীর প্রাণীরা তা মেনে চলে।

যেমন ঘরের পুরুষ ইদুর মেঠো মহিলা ইদুরের সাথে যৌনতায় যায় না। এটা প্রকৃতি বিরুদ্ধ। তারা মেনে চলে। কিন্তু মানুষ মানেনা। মানেনা বলেই আর্যরা অনার্যদের বিয়ে করে। জার্মানরা জাপানিদের বিয়ে করে। সাদা চামড়া কালোদের বিয়ে করে। প্রকৃতি এতে ক্ষুব্ধ হয়। এতে তৈরি হয় দুর্বল জাতির। সে জাতি মিশ্র রক্তে স্বকীয়তা হারায়। ধ্বংস হয়। অপেক্ষা কৃত দুর্বল জাতি তৈরি হয়।

হিটলার শুধু রক্তে নয় সংস্কৃতির স্বকীয়তায়ও বিশ্বাসী ছিলেন। আজকে যারা আধুনিকতার নামে বিদেশী ভাষা বা সংস্কৃতি নিয়ে নাচানাচি করে তাদের তিনি তুলোধুনো করেছেন। তার দর্শনটা এমন- কোন জাতি যদি তার সংস্কৃতির মূল উপাদান অন্য কোন বিদেশী সংস্কৃতি থেকে ধার করে তবে তারা ক্রমশঃ সেই সংস্কৃতিতে গ্রাস হয়।

এক দেশ আরেক দেশের নদীর পানি যেমন বন্ধ করে দেয় তেমন ভাবে যদি কখনো সেই বিদেশী সংস্কৃতি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায় তবে সেই জাতির সংস্কৃতির ধারা স্তব্ধ হয়ে যায়। তাদের সংস্কৃতি স্টাচু হয়ে যায়। বিনাশ ঘটে। এটা হিটলারের কথা।

তার মতে, সেই জাতি দ্রুত উন্নতি করবে যে তার সংস্কৃতির স্বকীয়তা ধরে রাখবে, সংস্কৃতির লালন করবে। আগ্রাসন রুখবে। আবার সভ্যতাও টিকে থাকে এর ভিত্তিতে। কোন সভ্যতা ঠিক ততদিন দীর্ঘায়িত হয় যতদিন তারা নিজেদের সংস্কৃতিকে দূষণমুক্ত রাখ ততদিন।

হিটলার সবচেয়ে চমকপ্রদ আবিষ্কার হচ্ছে ইহুদি সমস্যা। হিটলার চিহ্নিত করেছিলেন ইহুদী সমস্যা পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহৎ সমস্যা। সেই সমস্যার একমাত্র সমাধান ইহুদী হত্যা। এ জন্য তিনি একটি যজ্ঞ চালান। এই অপারেশন এর নাম ছিল দি ফাইনাল সলুশন অব জিউস প্রবলেম। ইহুদী সমস্যার শেষ সমাধান। বলা হয়ে থাকে তিনি ৬০ লাখ ইহুদী নিধন করেন। যা ওই সময়ের ইহুদীর ৩৭% প্রায়!

ইহুদীরা যুগ যুগ ধরে মার খাওয়া পৃথিবীর চিরন্তন যাযাবর। এরা সর্বত্র বিতাড়িত। নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে এরা কৌশলী হয়। চামচামী তাবেদারী বাটপারি নানা চাতুর্যতায় তারা টিকে থাকার সংগ্রাম করে। তারা কচুরিপানার মতো ভেসে বেড়ায়। যেখানেই যায় সমস্যা সৃষ্টিকারী হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের তাড়ানো হয়। এই হচ্ছে তাদের আড়াই হাজার বছরের ইতিহাস।

ইহুদীরা বহু বছর আগে জার্মানিতে প্রবেশ করে। তারা সুদের ব্যবসা করত। কালক্রমে জমি কিনে খাজনার বিনিময়ে জমি ভাড়া দিত। উচ্চহারে খাজনা দিতে গিয়ে মানুষ গরীব হয়ে পড়ল। একসময় খাজনার প্রথার বিরুদ্ধে মানুষ আন্দোলন করে ইহুদিদের সব জমি দখল করে নেয়। ইহুদীরা কিছু বছর বাদে শাসকদের প্রচুর উপঢৌকন এবং উৎকোচ দিয়ে ফিরে আসে। ততদিনে জার্মানে ইন্ডাস্ট্রি কলকারখানা দাড়িয়ে গেছে। মানুষ ইহুদীদের ঘৃণা করতে শুরু করেছে।

সাধারণ মানুষের কাছাকাছি যাওয়া এবং একই সাথে কলকারখানায় নিজেদের আধিপত্য তৈরি করতে তারা একটি কৌশল খুঁজতে থাকে। তখন ইহুদী দার্শনিক কার্ল মার্ক্সের মাধ্যমে মার্ক্সবাদ নামে একটি তত্ত্ব প্রচার করানো হয়। ট্রেড ইউনিয়ন বানানো হয়। ট্রেড ইউনিয়নের নামে প্রভাব খাটিয়ে ধ্বংস করা হয় জার্মান শিল্প কারখানা। মেইন ক্যাম্পে হিটলার এভাবেই বলেছেন মার্ক্সবাদ সম্পর্কে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগ পর্যন্ত খ্রিস্টানরা ইহুদীদের চরম অপছন্দ করতো। ইহুদীদের যন্ত্রনায় বিরক্ত হয়ে একসময় তাদের জন্য ইজরাইল নামে একটি ভুখণ্ডের তৈরি করে খ্রিস্টান রাষ্ট্রগুলো। এটা ইসরায়েলের শানে নুযুল। ইজরাইল ধর্মের ভিত্তিতে গড়া পৃথিবী প্রথম রাষ্ট্র। তাদের সংবিধানে বলা পৃথিবীর যে কোন দেশের ইহুদী এর নাগরিকত্ব নিতে পারবে। পশ্চিমারা নিজেদের ঘাড় থেকে সরিয়ে ইহুদী আপদ মধ্যপ্রাচ্যে গেড়ে দিলো। মধ্যপ্রাচ্য ছয় দশক ধরে জ্বলছে।
সম্প্রতি আলজাজিরার এক ছবিতে এসেছে ইসরায়েলের একটা পাহাড়ে উঠে বসে আছে কিছু ইহুদী। সেখান থেকে গাজার মুসলিম বসতি দেখা যায়। গাজায় মুসলিমদের উপর বিমানে বোমা ফেলা হচ্ছে আর তারা হাত তালি দিচ্ছে। বোমা ফেলার পর গাজার আহত নরনারীদের আর্তচিৎকারের শব্দে তারা উল্লাসে ফেটে পড়ছে, নাচছে। এই হচ্ছে বর্বর ইহুদী।

এটা একটা নমুনা চিত্র মাত্র। হাজার হাজার বছর ধরে বিভিন্ন মানুষের প্রত্যক্ষন ও পর্যবেক্ষণই তাদের চরিত্র সম্পর্কে নেতিবাচক বলে গেছেন। অতএব এগুলো সংকীর্ণবাদী চিন্তা বলে উড়িয়ে দেবার সুযোগ নেই।

ইহুদীদের চরিত্রগত সমস্যার কারণেই একটা সময় আরেকটা 'ফাইনাল সলুশন অব জিউস প্রবলেম' তৈরি হবে না কে জানে। কেউ একজন চাইবে ইহুদীরা সমূলে বিনাশ হোক। এই মুহুর্তে অন্তত মুসলমানরা চাইছে ইহুদী বিনাশ হোক। তাদের মনে দগদগে ক্ষত।

আমার কিছু বন্ধুকে বলতে শুনি, ফিলিস্তিনের উপর হামলা ধর্মের ভিত্তিতে বিবেচনা না করে মানবতার ভিত্তিতে বিবেচনা করতে। তারা ইহুদীদের প্রতি তাদের ভাষায় 'বিদ্বেষ' ছড়ানো নৈতিক মনে করছেন না। এটা স্রেফ ভন্ডামী মনে হয় আমার কাছে। যে রাষ্ট্রই অস্বাভাবিক, যে রাষ্ট্র শুধুমাত্র ধর্মের ভিত্তিতে তৈরি, তাকে ধর্মীয় ভাবে দেখবেন না বলাটা কেমন যেন নয় কি? ইসরাইল রাষ্ট্র মানেই ইহুদী জাতি। ইসরায়েলের সমালোচনা করলে ইহুদী জাতি সত্তা সামনে চলে আসবে। এটাই ঠিক। ইহুদি এবং ইসরাইল এর মাঝে বিভাজন করেন কিভাবে আপনারা। এতটা সুশীল কিভাবে হতে পারেন মাথায় আসেনা।

এই রাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আনেনি। অশান্তি এনেছে। এখানে শান্তি শুধু একভাবেই আসতে পারে তা হলো এর উৎখাত বা অন্য কোথাও স্থানান্তর। ইসরাইলীরা মধ্যপ্রাচ্যের মূল স্রোতের সাথে মিশে যাবে এমনটাও সম্ভব নয়। তাদের আড়াই হাজার বছরের ইতিহাস বলেনা।

শেষের গদ্য: অনেকে জানেন ইসরায়েল বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় নি। ব্যাপারটা তা না । ১৯৭২ সালের ৭ ই ফেব্রুয়ারি ইসরায়েল তাদের কেবিনেট বৈঠকে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। এই মর্মে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তারা একটি চিঠিও পাঠায়। বাংলাদেশ এর উত্তর দেয় নি। উল্টো বঙ্গবন্ধু সরকার ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে অস্বীকার করেছে। তাই আজও আমাদের পাসপোর্টে লেখা থাকে '' ইসরায়েল ছাড়া পৃথিবীর সব দেশ''! বঙ্গবন্ধুর কল্যাণে আমরা আজও বর্বর ইসরায়েলের অস্তিত্বের বিরোধীতা করে স্মারক বয়ে চলছি নিত্য।

* মনোয়ার রুবেল, ইমেইল: monowarrubel@yahoo.com

বাংলাদেশ সময়: ১৪১০ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।