ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

প্রসঙ্গ: শেকৃবি’র কিষাণ টাওয়ার ভাঙ্গা

ড. নারায়ন চন্দ্র পাল (তিতাস), অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২২ ঘণ্টা, অক্টোবর ৮, ২০১৪
প্রসঙ্গ: শেকৃবি’র কিষাণ টাওয়ার ভাঙ্গা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বাংলাদেশের প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু স্থান বা স্থাপনা থাকে যেগুলো ছাত্র-ছাত্রীদের স্মৃতিতে আজীবন বেঁচে থাকে। গল্পে, আড্ডায়, অবসরে স্মরণ কিংবা অকারণে এসব স্থাপনা বা স্থানের কথা ওঠে আসে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলা বা মধুর ক্যান্টিনকে জড়িয়ে স্মৃতি নেই ঢাবি’র এমন প্রাক্তণ বা বর্তমান ছাত্র-ছাত্রী খুঁজে পাওয়া যাবে না। ঠিক এরকম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চ বা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় ৭১। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কথা এলেই এই স্থাপনাগুলো চোখে ভাসে।

বলছি ঢাকার বুকে সত্যিকারের গ্রামের পরিবেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা। এ’কথা অবধারিতভাবেই বলা যায়, ঢাকায় সবথেকে আকর্ষণীয় আর সৌন্দর্য্যে ভরপুর প্রাকৃতিক পরিবেশের একটুকু আবেশ এই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে রয়েছে। কি নেই এখানে, সারি সারি আম গাছের ছায়াতল, কিংবা মেহগিনির সমারোহ, অথবা যদি নবান্নে নতুন ধানের পরশ আর ঘ্রান পেতে চান তবে একটু ঘুরে আসুন শেকৃবি ক্যাম্পাসে একবার। নাকি শীতে নতুন সবজির নতুনত্ব দেখতে চান? তো ঘুরে আসুন একবার ওখান থেকে। ছেলে-মেয়েরা কত যত্ন করে লাগিয়ে রেখেছে, পরীক্ষা করছে বা গবেষণার কাজ করছে।

এই শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সবথেকে সুন্দর আর আকর্ষণীয় যে স্থাপনাটা সবার নজর কাঁড়ে অথবা আমরা প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীরা যখন স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ি তখন এই কিষাণ টাওয়ারটি চোখে ভাসে।

মনে পড়ে টাওয়ারের প্রতিটা লাল ইটের সাথে কত গল্প জড়িয়ে রয়েছে আমাদের। মাঠের গবেষণা প্লটে কাজ করতে যেয়ে ঘর্মাক্ত হয়ে যখন সামান্য বিশ্রামের দরকার পড়ত তখন কতইনা সান্নিধ্য নিয়েছি এই টাওয়ারের ছায়াতলে অথবা কোন এক সুন্দর সিক্ত বিকেলে বা বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায় টাওয়ারের ভেতরে বসে বৃষ্টি দেখা কিংবা সন্ধ্যারাতে আকাশের পানে তাকিয়ে স্বপ্নবুনন। কত কিছুর সাথে মিশে আছে এটি। অনুপম আর অনন্য স্থাপত্যশৈলীর মিলনে গড়ে ওঠা কিষাণ টাওয়ার আগন্তুকের প্রথম চোখেই এটিকে ক্যামেরাবন্দি করতে বাধ্য করে বা করত।

এতো ভুমিকার অবতারণা করছি এ কারনে যে, ক’দিন ধরে খেয়াল করছি এই অপূর্ব সুন্দর টাওয়ারটি ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এটিকে ভেঙ্গে ফেলবেন। কি কারণে করছেন এটা আমার জানা নেই। দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কৃষিবিদদের অনেকেই আমার মতো করে যেমন অবাক আর বিষ্মিত হয়েছেন, এরকম একটি সিদ্ধান্তে ঠিক তেমনি বর্তমানের ছাত্র-ছাত্রীরাও হতাশ হয়েছেন। যে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্তৃপক্ষ দ্বারা যখন কোন অনৈতিক কার্যক্রম চলে তখন তারা কাজটি করেন ছাত্র-ছাত্রীদের অগোচরে। যেমনটা হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে। ছাত্র-ছাত্রীদের ছুটিতে রেখে শতবর্ষী শত শত গাছ কেটে ফেলা হয়, অপূর্ব সুন্দর রাস্তাটির সৌন্দর্য্য হারিয়ে যায়, আর ফিরে আসেনি, আর আসবেও না কোনদিন। ঠিক এরকম ঈদের ছুটিতে যখন ছাত্র-ছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়েছে তখন ভাঙ্গাভাঙ্গির কাজটা শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। ছেলে-মেয়েরা ছুটি থেকে ফিরে এসে দেখবে তাদের ছায়া দিয়ে যাওয়া সুন্দর কিষাণ টাওয়ারটি বেঁচে নেই আর।

জানিনা এ লেখাটি কর্তৃপক্ষের চোখে পড়বে কিনা। যদি চোখে পড়েও আসলে নজরে আসবে না সেটা বোধগম্যই। কর্তৃপক্ষের কাছে আমার জিজ্ঞাস্য-আপনাদের অনেকেই বাইরের দেশের অনেক নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর শিক্ষা অর্জন করেছেন। আপনারা কি দেখে এসেছেন-তারা কি ঐতিহ্য সংরক্ষণ করে নাকি ধ্বংস করে? ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য তারা কি অনেক কিছুই ছাড় দেয়না? প্রাক্তণ ছাত্র হিসেবে আপনাদের কাছে আমার মিনতি- এরকম একটি সুন্দর ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখুন, ধ্বংস করে দেবেন না। আপনাদের এরকম একটি হঠকারী ও ভুল সিদ্ধান্ত আমাদের স্মৃতির মাঝে আঘাত করবে নিয়তঃ।

ড. নারায়ন চন্দ্র পাল (তিতাস): প্রবাসী লেখক ও প্রাক্তণ ছাত্র, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশ সময়: ১৭২২ ঘণ্টা, অক্টোবর ৮, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।