রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ১৯৯৯ সাল থেকে রুশ রাজনীতিতে এই নামটি উচ্চারিত হয়ে আসছে।
যে ভবন থেকে রাশিয়ার ক্ষমতা নিয়ন্ত্রিত হয় সেই সেন্ট পিটার্সবার্গ এলাকাতেই এক সময় পুতিনের শৈশব কেটেছিল। রিচার্ড সাকভা তার ‘পুতিন : রাশিয়ান চয়েস’ নামের বইতে দাবি করেছেন, সেন্ট পিটার্সবার্গের সেইসব ভবনের সিঁড়িতে দৌড়াদৌড়ি করে একসময় ইঁদুর মারতেন পুতিন।
বিশ্বের দ্বিতীয় পরাশক্তি রাশিয়া। কিন্তু এর পেছনে যাদের ঐতিহাসিক ভূমিকা রয়েছে তাদের প্রধান পথিকৃত হলেন ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন। সেই মহান লেনিনের বাড়িতে দীর্ঘদিন শেফ’এর কাজ করতেন পুতিনের দাদা। পরে যখন স্টালিন রাশিয়ার ক্ষমতায় অাসেন তখন তারও রান্নার কাজ করতেন তিনি। নিজ বাড়িতে লেনিন (১৮৭০-১৯২৪)
নিয়মিত ব্যায়াম করে শরীরের ফিটনেস রক্ষা করেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা পুতিন। কারণ তিনি যে জুডো ও কারাতের কৌশল জানা একজন দক্ষ পুরুষ। আঠারো বছর বয়সেই পুতিন জুডোতে ব্ল্যাক বেল্ট অর্জন করেন। এখনো তিনি প্রায় প্রতিদিন মার্শাল আর্ট অনুশীলন করেন। ২০০৯ এর ১৮ ডিসেম্বর, সেন্ট পিটার্সবার্গে জুডো প্রাকটিস করছেন।
ফ্রি হলেই বই পড়েন পুতিন। তবে গোয়েন্দা কাহিনী পড়তে বেশি পছন্দ করেন। এ সম্পর্কে পুতিনের বিখ্যাত একটি উক্তিও আছে—‘আমাকে সবচেয়ে বেশি বিস্মিত ও মুগ্ধ করে ওই বিষয়টি, যখন কোনো একটি কাজ পুরা সেনাবাহিনী মিলে করতে পারে না, অথচ সেই কাজই করে ফেলে গুটি কয়েকজন ব্যক্তি। ’ ২০০৭ এর ২৬ অক্টোবর, পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে একটি বইমেলায় ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট জোসে বরেসোর পাশে বই দেখছেন পুতিন।
শৈশব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকানোর পর পুতিনের রাজনৈতিক পাঠ ও প্রশিক্ষণ গড়ে উঠেছে রাশিয়ার নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠানে। আশির দশকে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দুনিয়ার বিরুদ্ধে গুপ্তচর বাড়াতে লোকবল সংগ্রহে সোভিয়েত গোয়েন্দা পুলিশকে ব্যাপকভাবে সহায়তা করেন পুতিন। পরবর্তীতে নব্বইয়ের দশকে কেজিবির কাঠামোয় গড়ে তোলা এফএসবির প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন পুতিন। ১৯৯৯ সালে এফএসবি’র দায়িত্ব গ্রহণের পর মস্কোয় এক বৈঠকে।
রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে প্রতিদিনই কোনো না কোনো আলোচনা সভা, বৈঠক ও কনফারেন্সে যান পুতিন। যেখানেই যান তবে সঙ্গে তার দেহরক্ষী থাকলেও একজন সঙ্গী কিন্তু থাকবেই। আর সেই সঙ্গী হল তার প্রিয় পোষা কুকুর কনি। ২০০৭ সালে জার্মান চেন্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেলের সাথে এক বৈঠকে।
পুতিন বেশ কয়েকটি ভাষা জানেন। সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর বেশ কয়েকটিরই ভাষা জানেন। তবে বিস্ময়কর হল আন্তর্জাতিক ভাষা ইংরেজি হলেও ভাষাটা কিন্তু পুতিন বেশি একটা জানেন না। অবশ্য জার্মান ভাষায় তিনি খুবই স্বচ্ছন্দ। ২০১৩ সালের জুনে সেন্ট পিটার্সবার্গে অ্যাঞ্জেলা মার্কেলের সাথে বৈঠকে পুতিন জার্মান ভাষায় আলাপ করছেন।
বিয়ে-দাম্পত্য মানুষের সবচেয়ে একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু এই একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপারই ৩০ বছর শেষে ভেঙে গেল। ২০১৩ সালের জুনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন চলাকালে স্ত্রী লিউডমিলা ওয়াককে ডিভোর্স দেন। স্ত্রী লিউডমিলা।
পুতিনের সবচেয়ে গোপন দুনিয়া ছিল তার দুই কন্যা মারিয়া ও ইয়াকেতেরিনার জীবন। কন্যাদ্বয়ের পড়ালেখা, ঘুরাফেরা সবই ছিল খুবই গোপন ও অত্যন্ত সুরক্ষিত। কলেজে ছদ্মনামে তারা পরিচিত ছিল। এমনকি বসবাসের ঠিকানা ছিল একেবারে অজ্ঞাত। তবে স্ত্রীকে ডিভোর্স দেয়ার পর পুতিনের এই গোপন জগত ভেঙে পড়ে। ১৯৮৫ সালে সন্তানকোলে স্ত্রী লিউডমিলা ওয়াক।
ধর্মীয় বিশ্বাসে পুতিন একজন অর্থডক্স খ্রিষ্টান। রাজনীতিতে যেমনই হোন ধর্মীয় বিশ্বাসে তিনি মোটেও উদার নন। যেখানে পশ্চিমা দুনিয়ার অনেকেই এখন সমকামী নারী ও পুরুষের বিয়েকে বৈধতা ও সমর্থন দিচ্ছে সেখানে পুতিন সমকামী বিয়েকে শয়তানের সাথে তুলনা করেছেন। মস্কোর বাইরে তুরগিনভ গ্রামের এক অর্থডক্স গীর্জায় নিজের বুকে ক্রস এঁকে প্রার্থনা করছেন পুতিন।
লিউডমিলাকে ডিভোর্স দেয়ার পর ২৪ বছরের তরুণী অলিমপিক জেমনিস্টেক অ্যালিনা কাবায়েভের সঙ্গে ঘনিষ্ট হয়ে ওঠেন পুতিন। ধারণা করা হচ্ছে নতুন এই বান্ধবীর সঙ্গেই তিনি নতুন করে সংসার পাততে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১৪