ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

বিজয়ে একাট্টা বাংলাদেশ

তুষার আবদুল্লাহ, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৩ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৫
বিজয়ে একাট্টা বাংলাদেশ ছবি : সংগৃহীত

বিশ্বের অন্য জাতির একান্নবর্তী হতে যতো হিসেব কষতে হয়, বাংলাদেশকে ততো ঘাম ঝরাতে হয় না। বাংলাদেশ এক হতে পারে যে কোনো উপলক্ষতেই।

আমি বরাবরই বলে থাকি এবং বিশ্বাসও করি, রাজনৈতিক সংকট বলতে বাংলাদেশে কিছু নেই। আছে ক্ষমতানীতির সংকট। রাজনীতির প্রধান দুই শক্তি ক্ষমতায় থাকতে স্বচ্ছন্দবোধ করে। ক্ষমতার আসন দখলে রাখতে পারলে গৌরব বোধ করে। এই সংকটটিই বাংলাদেশের একমাত্র সমস্যা ও সংকট। ক্ষমতায় যাওয়া বা ধরে রাখার আয়োজন হিসেবেই তারা আর সব সংকট তৈরি করেছে বা রাজনীতির মাঠে সাজিয়ে রেখেছে। সাধারণ মানুষকে বোঝানো যে দেশ গভীর সংকটের মধ্যে আছে। তারা বলতে যারা ক্ষমতার লড়াইতে আছেন। দেশের চিন্তক শ্রেণিও দু’পক্ষে বিভাজিত হয়ে রকমারি তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ দিয়ে ঐ সংকটকে সাধারণ মানুষের সামনে উপস্থাপন করছেন আরো জটিল করে। এখানে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি–বিপক্ষের শক্তি বলে দুইটি গ্যালারি তৈরি করা হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, ছাপান্ন হাজার বর্গমাইলের সবুজ গালিচাটিকে ঘিরে গ্যালারি একটিই। সেটি হচ্ছে বাংলাদেশ। ঐ সবুজ গালিচাকে যারা বিশ্বাস করে না,তাদের গ্যালারিতে প্রবেশের সুযোগ এবং অধিকার দেবো কেন?দেশের জনমানুষ তাদেরকে সেই অধিকারটি দেয়নি। দিয়েছে রাজনৈতিক শক্তিগুলোই। ঐ ক্ষমতায় যাওয়া এবং টিকে থাকার অঙ্ক মেলাতে। তাই ক্ষমতানীতি ধর্মানুষঙ্গ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। ধর্ম ব্যক্তিগত বিশ্বাস ও আচারের বিষয়। ক্ষমতার স্বার্থে এর রাজনীতিকরণ যেমন সারাবিশ্বে হয়েছে, ঠিক একই কারণে বাংলাদেশেও হয়েছে, হচ্ছে। ধর্ম অনুশীলনকারীমাত্রই জঙ্গি বা বাংলাদেশবিরোধী, এমন একটা মিথ তৈরির চেষ্টা চলেছে, চলছে। এগুলো ক্ষমতার সঙ্গে যুক্ত আছেন যারা, সেই বলয়ের লোকদেরই কর্ম।

উল্লিখিত ক্ষমতার বলয়টি ব্যর্থ হলেও, ব্যর্থ হয়নি বাংলাদেশ। বাংলাদেশের জনমানুষ অসাধারণ। ক্ষমতার বলয় এইসব মানুষকে সাধারণ বলেই গণ্য করে। আসলে ঐ অসাধারন জনমানুষেরা ক্ষমতাবাদীদের বোঝাতে পেরেছে, ক্ষমতানীতির বলয়ে বিভাজন আছে। কিন্তু এর বাইরের যে বিশাল জনগোষ্ঠি, বিভাজনটি তাদের মধ্যে সেই নেই। ফলে তারা ক্ষমতানীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে, যার যার অবস্থান থেকে বাংলাদেশকে গড়ার লড়াইয়ে যুক্ত হয়েছেন। মাঠের কৃষক, কারখানার শ্রমিক আর শিল্পের উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে খেলার মাঠের যারা তারা কেউই পিছিয়ে নেই। সবাই সমান গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। এই গতির কাছে ক্ষমতানীতির কোনো আলাপ-প্রলাপ, হুঙ্কার-হুঁশিয়ারি, আহবান কোনোটাই পৌঁছাচ্ছে না। ক্ষমতায় কে এলো আর কে গেলো, গুটিকয় অবিশ্বাসীর আস্ফালনে ‘টিম বাংলাদেশ’র কিচ্ছু যায় আসে না। কারণ তার এখন একের পর এক অর্জনের মাইলফলক ছোঁয়ার সময়। পেছনে তাকাবে না ‘অসাধারণ’ জনমানুষ। সেই অসাধারণদের অসাধারণ কীর্তি আমরা দেখলাম বিশ্ব ক্রিকেটে। ইংরেজ দুর্গ গুঁড়িয়ে দিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সফর শেষ হয়নি। এখনো বাকি কিছুটা পথ। অনিশ্চয়তার খেলায় ভারতকে হারানোর স্বপ্নও দেখছে বাংলাদেশ। তারপরও ইংরেজদুর্গ গুঁড়িয়েই উৎসবে মেতে উঠেছে বাংলাদেশ। সেই উৎসবে মেতে ওঠা জনগণের মধ্যে কোনো বিভেদ নেই। বিপরীত গ্যালারীর কোনো অবস্থান নেই এই উৎসবে।   শুরুতে বলছিলাম,যে কোনো উপলক্ষ, উৎসব গোটা বাংলাদেশকে এক করার ক্ষমতা রাখে। কেবল ব্যর্থ হয় ক্ষমতানীতি। সেই ক্ষমতানীতিকেই দেখলাম ‘অসাধারণ’দের কাছে নতজানু হতে। উৎসবে একাট্টা জনমানুষ দেখে, একটি পক্ষ ভীত হয়ে বা জনমানুষের শক্তির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়েই হয়তো তাদের হরতাল কর্মসূচি শিথিল করেছে। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিজয়ের আনন্দে শরিক হতে চায় তারাও। বের করবে বিজয় মিছিল।

সরকারের দিক থেকেও বিজয় মিছিল আয়োজনের আহবান এসেছে। ক্রিকেটের বিজয় বাংলাদেশকে একাট্টা করছে। ক্ষমতানীতিবাদীরা যদি ক্ষমতার পালা বদলের পদ্ধতিটা একবার ঠিক করে নেন, তাহলে একাট্টা না হতে পারার আর কোনো উপলক্ষই থাকবে না ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের এই পরিবারটিতে।

বাংলাদেশ সময় ১৪১৪ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।