ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি

ধনধান্য পুষ্প ভরা দেশের ডি এল রায়

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০১৫
ধনধান্য পুষ্প ভরা দেশের ডি এল রায়

‘ধনধান্য পুষ্প ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা’- কালজয়ী এ গানটি কানে এলেই হৃদয়ে সৃষ্টি হয় ভালোলাগা। গভীর ভালোলাগা।

সে ভালোলাগা ঘিরেই জন্ম নেয় দেশপ্রেম। দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা। দেশমায়ের প্রতি মুগ্ধ হতে চায় মন-মনন।

সেই কবে থেকে শোনা এ গানটি। তবুও পুরনো হতে চায় না। যতবার শুনি ততবারই গানটি কেন্দ্র করে কোথা যেন নীরবে হারিয়ে যাই। এমন অসাধারণ মনকাড়া সুর! এমন প্রাণ আকুল করা অসম্ভব চমৎকার বাণী! শিল্পীর আবেগী কণ্ঠসুধা। সবকিছুর সমন্বয়েই গানটি কালজয়ী একটি গানের তালিকাভুক্ত।
 
অমর এ গানটির রচয়িতা দ্বিজেন্দ্রলাল রায়। যিনি ডি এল রায় নামেই পরিচিত বেশি।

আমি যতবার শহর পেরিয়ে কোনো গ্রামের পথ ধরি অথবা পল্লীর পথে পা বাড়াই ততবারই এ গানটি গুনগুন প্রতিধ্বনি হৃদয়ে শুনতে পাই। প্রকৃতির দিকে তাকাতেই এ অনবদ্য গানের শব্দ ও বাক্য সব সার্থকতা নিজ চোখের সামনে প্রকাশিত হতে দেখি।

এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি, সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি– চরণটি বারবার ফিরে ফিরে এসে জানান দিয়ে যায় পৃথিবীর বুকে এমন সোনার বাংলা আর একটিও নেই। যা কিনা প্রকৃতির স্নেহ-মমতা আর প্রাণপ্রাচুর্যে ঘেরা।   

এখানেই একজন কালজয়ী গীতিকারের সফলতা। কত বছর আগের রচয়িতা সেই গানটির প্রেক্ষাপট বাংলার কাদা-মাটি-ধান-ফুল-পাখিরই জয়গান গাইছে বারবার। বাংলার পথে পথে এ গানেরই রেশ বাজে। হৃদয় তখন অনুভব করে এ দেশ সত্যিই আমার পুণ্যভূমি। স্বর্গতুল্য পুণ্যভূমি।

আজ (১৯ জুলাই) তার ১০২তম জন্মদিন। ১৮৬৩ সালের ১৯ জুলাই তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একাধারে নাট্যকার, কবি ও গীতিকার। কিশোর বয়স থেকেই তিনি গান রচনা শুরু করেন। তার মোট গানের সংখ্যা প্রায় পাঁচ শতাধিক। যা দ্বিজেন্দ্রগীতি নামে পরিচিত। ১৯১৩ সালে ১৭ মে মারা যান তিনি।

ধনধান্য পুষ্পভরা পুরো গানটি নিম্নে দেওয়া হলো:

ধনধান্য পুষ্পভরা আমাদের এই বসুন্ধরা
তাহার মাঝে আছে দেশ এক – সকল দেশের সেরা; –
ও সে, স্বপ্ন দিয়ে তৈরি সে-দেশ, স্মৃতি দিয়ে ঘেরা;
এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি,
সকল দেশের রানি সে যে – আমার জন্মভূমি।

চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা, কোথায় উজল এমন ধারা।
কোথায় এমন খেলে তড়িৎ এমন কালো মেঘে!
তার পাখির ডাকে ঘুমিয়ে উঠি, পাখির ডাকে জেগে;
এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি,
সকল দেশের রানি সে যে – আমার জন্মভূমি।

এত স্নিগ্ধ নদী কাহার, কোথায় এমন ধূম্র পাহাড়!
কোথায় এমন হরিৎক্ষেত্র আকাশতলে মিশে!
এমন ধানের উপর ঢেউ খেলে যায় বাতাস কাহার দেশে!
এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি,
সকল দেশের রানি সে যে – আমার জন্মভূমি।

পুষ্পে পুষ্পে ভরা শাখী; কুঞ্জে কুঞ্জে গাহে পাখি;
গুঞ্জরিয়া আসে অলি পুঞ্জে পুঞ্জে ধেয়ে –
তারা, ফুলের উপর ঘুমিয়ে পড়ে ফুলের মধু খেয়ে;
‌‌    এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি,
সকল দেশের রানি সে যে – আমার জন্মভূমি।

ভায়ের মায়ের এত স্নেহ কোথায় গেলে পাবে কেহ!
– ও মা তোমার চরণ দুটি বক্ষে আমার ধরি,
আমার এই দেশেতে জন্ম – যেন এই দেশেতে মরি –
এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি,
সকল দেশের রানি সে যে – আমার জন্মভূমি।



বাংলাদেশ সময়: ১২৪০ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০১৫
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।