উপমহাদেশের খ্যাতিমান সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের সাবেক এ অধ্যাপক পেয়েছেন একুশে পদকও।
বর্তমানে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন পরিচালিত প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে একসময়ের শিক্ষক ছিলেন কক্সবাজার জেলা আদালতের যুগ্ম জেলা জজ মো. মাহাবুবুর রহমান। জন্মজয়ন্তীতে কাছ থেকে দেখা ড. সেনকে নিয়ে লিখেছেন তিনি।
মানুষ! হ্যাঁ, তিনি মানুষই বটে। সমাজে যখন মানুষের আকাল, এর মধ্যে যে ক’জন খানিকটা শূন্যতা পূরণ করেছেন, তিনি তাদের একজন। তিনি ড. অনুপম সেন। তিনি আমার স্যার, আমাদের স্যার, তিনি আমাদের চেতনার বাতিঘর।
খুব ছোট্ট একটি বাক্য, বলতে পারি নিঃশঙ্কচিত্তে-আমি তাকে ভালোবাসি। তিনি যখন জ্যোর্তিময়, তখন তার আলোতে আমি আলোকিত হতে পারি। তার সামনে শ্রদ্ধায় মাথানত করতে পারি।
এসব ধারণ করেও বলছি-ভালোবাসি। কেন বলছি? অনেকগুলো কারণ আছে। সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে, তিনি মানুষকে ভালোবাসেন। এই যে শ্রদ্ধাবোধ, মানুষ যে তার সামনে শ্রদ্ধায় মাথা নত করে, সেটাও ভালোবাসার তাগিদেই। আমার তাগিদও সেখানেই।
তার স্ত্রী পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে কোমায় আছেন। বাসায় একটি রুম হাসপাতালের মতো হয়ে আছে। সেই রুমে স্ত্রীর চিকিৎসা চলে। পরম মমতায় স্যার স্ত্রীর সেবা করে যাচ্ছেন। কোনো ক্লান্তি নেই, নেই কোনো বিরক্তিও।
এই মানবতাবোধ, কর্তব্যের প্রতি অপার মমতা স্যারকে করেছে মহান। আমাদের সামনে আকাশসম উচ্চতায় স্যার। আমরা তো কখনোই ছুঁতে পারিনা। ছুঁয়ে দেখার স্পর্ধাও যেন কখনও না হয় !
এক মহাসাগরের চেয়েও বড় শোক এই যে, প্রিয়তমা স্ত্রীর অসহায়ত্ব দেখতে হচ্ছে তাকে। এতো বড় কষ্ট বুকে চেপে রেখে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরলস দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
ছাত্র-ছাত্রীরা আসছে, স্যার তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছেন। অভিভাবকরা আসছেন। তাদেরও সময় দিচ্ছেন। সেই সঙ্গে প্রশাসনিক কাজ তো আছেই।
এরইমধ্যে অনেকের আমন্ত্রণে বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও যোগ দিচ্ছেন স্যার। মানুষকে শোনাচ্ছেন ভালোবাসার বাণী, মানবতার বাণী। স্যারকে নিয়ে লিখতে গেলে অনেক কিছুই লেখা যাবে...। বুধবার ০৫ আগস্ট স্যারের জন্মদিন।
এজলাসে উঠার আগে স্যারকে ফোন করলাম। ফোন রিসিভ করে আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই বললেন, ‘মাহবুব, তুমি আমাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতেই ফোন করেছো। তোমাকে অনেক ধন্যবাদ। ’
বললাম, ‘স্যার, আমি কতো দূরে। ’
স্যারের মায়াভরা উত্তর, ‘তুমি দূরে নও, তুমি আছো হৃদয় জুড়ে। ’
চোখে পানি এসে যাচ্ছে। কী-বোর্ড থেকে হাত সরে যাচ্ছে। স্যার, আমি দূরে নই, আপনিও দূরে নন। স্যার, আমি দূরে যেতে পারিনা, আপনিও পারেন না।
ভরা পূর্ণিমার চাঁদের আলোক কী স্যার ঢেকে দিতে পারে মানুষ, আলোকরশ্মিকে কী কখনও দূরে সরিয়ে দেওয়া যায়?
বাংলাদেশ সময়: ২২৫৮ ঘণ্টা, আগস্ট ০৫, ২০১৫
এমএ/
মুক্তমত
মানুষ বটে…
মো.মাহাবুবুর রহমান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।