ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

তবে কি ‘মানুষ’ শব্দটি মিডিয়াসৃষ্ট!

আমিনুল ইসলাম, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০২ ঘণ্টা, আগস্ট ৭, ২০১৫
তবে কি ‘মানুষ’ শব্দটি মিডিয়াসৃষ্ট!

ঢাকা: শুক্রবার (৭ আগস্ট) ফের একজন ব্লগারকে হত্যা করা হলো। এ হত্যাকাণ্ড যে অতীতের হত্যাকাণ্ডগুলোর ধারাবাহিকতা সেটা বুঝতে বাকি নেই কারও।

কারণ হত্যাকাণ্ডের ধরন একদমই এক। যাকে হত্যা করা হয়েছে তিনি একজন ব্লগার ছিলেন। এখন যদি প্রশ্ন করা হয়, সেই ২০১৩ সাল থেকে এই পর্যন্ত যতজন ব্লগার হত্যার শিকার হয়েছেন তার একটিরও কি সুরাহা হয়েছে? বিচার হয়েছে? চোখ বন্ধ করে বলে দেওয়া যায়, হয়নি।

আপনি যদি হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে না পারেন, কোনো সুরাহা করতে না পারেন, তাহলে বিষয়টা আসলে এমনই দাঁড়ায়, হত্যাকারীরা হয়তো ধরেই নিয়েছে কাউকে হত্যা করলে পার পাওয়া যাবে। এর আগে ঢাকাতে এক ব্লগারকে হত্যা করে পালিয়ে যাওয়ার সময় লাবণ্য নামে একজন মানুষ সাহসের সঙ্গে এক হত্যাকারীকে হাতেনাতে ধরে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন। সেই হত্যাকারীর কাছ থেকেই তো অনেক কিছু জানা যেত। তাকে শাস্তি দেওয়া যেত। এর কিছুই হয়েছে বলে তো মনে হচ্ছে না। ওই হত্যাকারীর কোনো রকম শাস্তি হয়েছে কিনা সেটাইও আসলে জানা যায়নি।

একটা অদ্ভুত বিষয়, সব হত্যাকাণ্ডের পরই দেখা যায় যাকে হত্যা করা হয় তার ‘মানুষ’ পরিচয়টি ছাপিয়ে তিনি কি ছিলেন সেটিকে বড় করে দেখা হয়। তিনি কি লেখক ছিলেন, রাজনীতিবিদ ছিলেন, ডাক্তার ছিলেন, সাংবাদিক ছিলেন নাকি ব্লগার ছিলেন সেটি সামনে চলে আসে! তিনি কি আস্তিক ছিলেন নাকি নাস্তিক ছিলেন সেটা নিয়েও উঠে প্রশ্ন।

একজন মানুষ কি ছিলেন, তার কৃতকর্ম কেমন ছিলো, সে কি ভালো না মন্দ কাজ করছে সেটা তো দেশের আইনের মাধ্যমে নির্ধারণ হওয়ার কথা। তাহলে তাকে হত্যার পর এ ধরনের কথা ওঠার মানে কি! দেশের আইন তো কোনো ‘মানুষ’ হত্যা সমর্থন করে না। তাহলে এই ‘মানুষ’ পরিচয় ছাপিয়ে কেন অন্য পরিচয়গুলো হত্যাকাণ্ডের পর সামনে চলে আসে!

আসলে আমরা এমন এক সমাজে বাস করছি যেখানে সবাই নিজেদের পেশাগত পরিচয় আগ বাড়িয়ে দিতেই যেন পছন্দ করি। খেয়াল করে দেখবেন, কেউ একজন হয়তো ডাক্তার, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, শিক্ষক কিংবা অন্য কোনো পেশার মানুষ। হয়তো তিনি এমন এক জায়গায় গেলেন যেখানে কেউ তাকে চেনে না। দেখা যাবে তিনি নিজেই আগ বাড়িয়ে নিজের ওই পেশাগত পরিচয়টি দিচ্ছেন! অর্থাৎ, অন্য সবার মতো ‘নিজের’ মানুষ পরিচয়টি ছাপিয়ে নিজের পেশাগত দিকটি তুলে ধরলে যদি অন্যদের চেয়ে খানিক প্রাধান্য পাওয়া যায়, সেই প্রচেষ্টা থাকে।

আর এসব প্রচেষ্টা থেকেই আসলে এ ধরনের মনোভাব গড়ে উঠে, যেখানে কেউ একজনকে হত্যা করলে তার পরিচয় হয়ে ওঠে ‘ব্লগার’, ‘আস্তিক’, ‘নাস্তিক’, ‘ডাক্তার’, ‘সাংবাদিক’, ‘শিক্ষক’, ‘রাজনীতিবিদ’ ইত্যাদি ইত্যাদি। ‘মানুষ’ আর হয়ে ওঠা হয় না আমাদের। অনেক সময় তো মনে হয় এই ‘মানুষ’ শব্দটি কি তাহলে কেবল মিডিয়ার সৃষ্টি!

আমিনুল ইসলাম
শিক্ষক ও গবেষক
ইমেইল: tutul_ruk@yahoo.com  

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৩ ঘণ্ট‍া, আগস্ট ০৭, ২০১৫
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।