একটা বিশ্ববিদ্যালয় কখন পত্রিকার শিরোনাম হয় সেটি নিয়ে ভাবছিলাম। পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম দিয়ে গুগল সার্চ করে দেখলাম, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুব একটা পত্রিকার শিরোনাম হয় না।
এই যেমন- কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী দল হয়তো ইবোলা ভাইরাসের কোনো একটা প্রতিকার অবিষ্কার করতে পেরেছে। কোন বিশ্ববিদ্যালয় হয়তো প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক কোন আবিষ্কার করে ফেলেছে, এগুলো পত্রিকার সংবাদ শিরোনাম হচ্ছে। সাধারণ অর্থে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পত্রিকার শিরোনাম হওয়ার কথা না। যদিওবা হয়, বেশীরভাগ ক্ষেত্রে সেটি ভালো কোন সংবাদই বয়ে নিয়ে আসে!
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে অবশ্য বিষয় ভিন্ন! রোববার সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ ক’জন শিক্ষককে মারধর করা হয়েছে- এ সংবাদ এখন প্রায় সব গণমাধ্যমের শিরোনাম!
শিক্ষকরা আন্দোলন করছিলেন, সেই শিক্ষকদের উঠিয়ে দেয়ার জন্য হামলা চালানো হয়। মনে করার চেষ্টা করছিলাম, এই বিশ্ববিদ্যালয়টি শেষবার কবে পত্রিকার শিরোনাম হয়েছে। জাফর ইকবাল স্যার মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে পদত্যাগ করছেন- এই ধরনের একটা সংবাদ বেরিয়েছিলো। একটি ছাত্র সংগঠনের দুই গ্রুপের মারামারিতে ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে- এ ধরনের খবরের জন্যও বিশ্ববিদ্যালয়টি খবরের শিরোনাম হয়েছে। অর্থাৎ কোনো ভালো সংবাদের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি সংবাদের শিরোনাম অন্তত অতি সম্প্রতি হয়নি।
অথচ এই বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রথম থেকে নিজেদের স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের কারণে শিক্ষার্থীদের প্রিয় একটি বিদ্যাপীঠ হিসেবেই পরিচিতি পেয়েছিলো। দেশের প্রথম বাংলা সার্চ ইঞ্জিন পিপীলিকা, মোবাইল ফোনে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়েছিল জাফর স্যারের হাত ধরে শাবিপ্রবি থেকে। আর আজ সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র জাফর স্যারের স্ত্রীর উপর হাত তুলেছে। যিনি নিজেও বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক।
শুনেছি, জাফর স্যার বলেছেন- “জয় বাংলা বলে এরা শিক্ষকদের গায়ে হাত তুলেছে। এই দৃশ্য দেখার আগে আমার মরে যাওয়া ভালো ছিল”! যে মানুষটি বিশ্ববিদ্যালয়টিকে একটি অন্য উচ্চতায় নেয়ার জন্য কাজ করে গেলেন, তাকেই আজ এ কথা বলতে হলো!
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এ ধরনের ঘটনা অবশ্যই অনভিপ্রেত। তবে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, এসব ঘটনায় শিক্ষকদের রাজনীতিও কাজ করে। শিক্ষকরা অনেক সময় ছাত্রদের উস্কেও দেন। রোববার শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে যা ঘটেছে সেটা অবশ্যই নিন্দনীয়।
একটি বিশ্ববিদ্যালয় ভালো কাজের জন্য পত্রিকার শিরোনাম হবে এটি কাম্য! এ ধরনের অনভিপ্রেত কাজের জন্য যদি বার বার বিশ্ববিদ্যালয়টি পত্রিকার শিরোনাম হয় তখন বুঝতে হবে প্রশাসন ও শিক্ষকরা নিশ্চয়ই কিছুটা হলেও দায় এড়িয়ে যাচ্ছেন।
যে ছাত্ররা আজ এই কাজে জড়িত ছিল তাদের যেমন উপযুক্ত শাস্তি হওয়া উচিত, ঠিক তেমনি কোন শিক্ষক যদি এই কাজকে উস্কে দিয়ে থাকেন তাহলে তাদেরও আইনের আওয়তায় আনা উচিত। আর এ জন্য শিক্ষকদের যে অ্যাসোসিয়েশন রয়েছে তাদেরই এগিয়ে আসতে হবে। নইলে দেখা যাবে, শেষে শিক্ষক, ছাত্ররা মিলে নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয়টিকে নিজেরাই হত্যা(ধ্বংস) করছে! হত্যা না বলে এটিকে আত্মহত্যা বলা যেতে পারে, কারণ নিজেরাই নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয়টির ধ্বংস ডেকে আনছে! সব রকম দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে তাকিয়ে হলেও এ ঘটনার দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও নিষ্পত্তি হওয়া দরকার। নইলে জাফর ইকবালের মতো শিক্ষকদের হয়তো শেষ বয়সে এসে আত্মহত্যার কথা বলে যেতে হবে! আর তার মতো শিক্ষক যখন মরে যাওয়ার কথা বলেন, তখন বিশ্ববিদ্যালয় আর বেঁচে থাকে কি করে!
আমিনুল ইসলাম: শিক্ষক ও গবেষক, tutul_ruk@yahoo.com
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৮ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০১৫
জেডএম/