বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বেশ কিছুদিন ধরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন। কিন্তু হুমকি শুধু হুমকিই থেকেছে— ফল হয়েছে শূন্য।
বতর্মানে বিএনপির কর্মকাণ্ড অনেকটাই বিবৃতিতে সীমাবদ্ধ। সেই বিবৃতি দেয়া নিয়েও ধোঁয়াআ রয়েছে। বিবৃতি দিয়ে আবার তুলে নেয়া হচ্ছে, আবার পরে সেই একই বিবৃতি গণমাধ্যমে পাঠানো হচ্ছে— এমনি নানা কাণ্ডকীর্তি করে যাচ্ছে। আগস্ট মাসের শেষ বৃহস্পতি ও শুক্রবার, একই বিবৃতি দুইবার পাঠানো হয়। এর আগেও এ বছরের ১৭ জানুয়ারি অবরোধ চলাকালে খালেদা জিয়ার পক্ষে গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি দিয়ে পরে তা প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন দলের এক যুগ্ম মহাসচিব। একই দিনে একই সময়ে চেয়ারপারসনের পক্ষ থেকে ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমানও বিবৃতি পাঠান। বিএনপির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্বনয়হীনতা প্রকটভাবে নেতাকর্মীদের মাঝে হতাশার জন্ম দিয়েছে। মানুষ পুড়িয়ে মেরে, পরীক্ষার সময় হরতাল দিয়ে বিএনপির জনসমর্থন তলানিতে। এর ভেতর দলের মাঝে অনৈক্য নেতাকর্মীদের হতাশা সৃষ্টি করছে এবং তারা বাধ্য হয়ে দল ত্যাগ করছে।
এক বিএনপি নেতার মেয়ের বিরুদ্ধে যখন হামজা বিগ্রেডের মতো জঙ্গি গোষ্ঠীকে অর্থায়নের অভিযোগ ওঠে। তখন এটাই বলা সমীচীন যে, জঙ্গিবাদ আর বিএনপির আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেছে। এর মাঝে তাদের নানা অপতৎপরতা তো আছেই; যেমন— বিদেশীদের দারস্থ, সরকারের ভাল কাজে বিঘ্ন ঘটানো, ভোগান্তি সৃষ্টি করা— এমনকী নানা নেতিবাচক কর্মকাণ্ড। এসব জনবিরোধী কাজ করে বিএনপি কূলহারা অবস্থায় নিমজ্জিত, তাই বহুবার বহু কথা বলেও নেতাকর্মীদের মাঝে আস্থার জন্ম দিতে পারছে না বিএনপি। বরং নেতাদের কোন পরামর্শ না শুনে ২০১৫-এর ৭ জুলাই সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে খালেদা জিয়া উল্টো বলেন, যাঁরা দল ভাঙতে চান ইচ্ছা করলে তাঁরা বিএনপি থেকে চলে যেতে পারেন। পারলে সরকারে গিয়ে মন্ত্রীত্ব নেন; এতে বিএনপির কোনো ক্ষতি হবে না।
২০০৪ সালে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার তখনকার বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ধামাচাপা দিতে চাইলেও নিরপেক্ষ তদন্তে বেরিয়ে এসেছে মূল পরিকল্পনার কথা। ২০০৪ সালের ১৪ আগষ্ট হাওয়া ভবনে বসেই ২১ আগষ্টের হামলার মূল পরিকল্পনা করা হয়। গ্রেনেড হামলার দুই-তিন দিন আগে তৎকালীন উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর বাসায় পরিকল্পনা-সভা করেছিলেন নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের (হুজি) নেতারা। পিন্টু ছাড়াও ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর। হাওয়া ভবনে বসেই তারেক রহমান, লুৎফুজ্জামান বাবর, হারিস চৌধুরী, আব্দুস সালাম পিন্টু, শাহ কায়কোবাদ, জামাত নেতা মুজাহিদ ও জঙ্গী হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতী হান্নান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলার পরিকল্পনা করে। ২০১৫ সালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনা একটি জঘন্য ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম। ২০১৫ সালে এসে উল্টো সুরে কথা বলছে বিএনপি, এর কারণ গ্রেনেড হামলার বিচার হবেই, এতে দোষীরা শাস্তি পেলে ভয় বিএনপিরই। কারণ, প্রমাণিত হবে বিএনপি সুষ্ঠু তদন্ত করেনি, তাদের নেতারাই যে জড়িত ছিল।
খালেদা জিয়া নিজেও একেক সময় একেক বক্তব্য দিচ্ছেন, এতে ভুল বার্তা পাচ্ছে জনগণ ও দলের নেতাকর্মীরা। খালেদা জিয়া বললেন, তার কাছে খবর আছে এই সরকার বেশি দিন নাই। আবার বললেন, গণতন্ত্র রক্ষায় একসাথে কাজ করবেন। ’ বিএনপির নেতাকর্মীরা একবার দাবী করছে মধ্যবর্তী নির্বাচন, আবার নতুন নির্বাচনের দাবীতেও কথা বলছে। একেক সময় একেক কথা আসলে উদ্দেশ্যহীন যাত্রা ব্যতিরেকে আর কিছু নয়। বিএনপির নেতৃবৃন্দ ও বিএনপির শুভাকাঙ্খীরা জামায়াতের সংশ্রব ত্যাগ করার দাবী জানালেও খালেদা জিয়া কর্ণপাত করেননি। উল্টো বলেছেন, ২০ দল যেমন আছে তেমনই থাকবে।
বিএনপির সঙ্গে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের সখ্যতা যথাযথ, পাশাপাশি জঙ্গি সম্পৃক্তার বিষয়টিও আগের মতো পুনরায় সামনে আসছে। এসব বিষয়ে জনগণের বিরূপ মনোভাবের বরফ গলাতে হয়তো বিএনপি নেতৃবৃন্দ ঐক্য বা একসাথে কাজ করা কথা বলছেন। কিন্তু বিএনপির অতীত কর্মকাণ্ডই প্রমাণ করে বিএনপি নেতৃবৃন্দের কথার কোন ভিত্তি নাই। বিএনপি এখন না আছে সংসদে না আছে রাজপথে, পারছে না দলকে সঠিক পথে রাখতে। আর এ অবস্থার জন্য বিএনপির নীতিবিবর্জিত রাজনীতিই দায়ী। বিএনপির জামায়াতের নানা অপতৎরতা সত্ত্বেও সরকার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছে।
দেশের উন্নয়নে যথেষ্ট মনোযোগী, সাম্প্রতিক একটি জরিপেও সে বিষয়টিই উঠে এসেছে। উন্নয়নের পথে কাঁটা হয়ে বিএনপির ক্ষতির পাল্লাই ভারী হচ্ছে, এ দায় একান্তই বিএনপির। বিএনপির ঐক্যের কথা শুধুই বাগাড়ম্বর!
বাংলাদেম সময়: ১১৪১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৭, ২০১৫