মাত্র অল্প ক’দিন আগের কথা। সে সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ছিলেন (সদ্য পদত্যাগকারী) প্রফেসর ড. আতিউর রহমান।
কী অবিশ্বাস্য কাণ্ড! এদেশের জনগণের টাকা, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স-হ্যাকাররা পাচার করে বিদেশ নিয়ে গেল, অথচ অর্থ মন্ত্রণালয়ের কোন খবর নেই! কথায় আছে -যার গেল, তার গেল; ধোপার গেল ছাই।
সাম্প্রতিক সময়ে আর্থিক কেলেঙ্কারিতে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ রেকর্ড করেছে। জনগণের আমানতের হাজার হাজার কোটি টাকা নব্য বর্গীরা হাতিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, তবু কারো বোধোদয় হচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংক তার দায় অবশ্যই এড়াতে পারে না। সে দায় মাথায় নিয়েই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান পদত্যাগ করলেন। দুজন ডেপুটি গর্ভনরকে সরে যেতে হলো। আর্থিক খাত ও ব্যাংক বিভাগের সচিবকে ওএসডি করা হলো। এসবই ঘটলো চেইন অব কমান্ডের বিধিবদ্ধ বাধ্যবাধকতা ও স্বীয় দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার কারণে। কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো, এখানেই কী শেষ। বিশ্লেষকরা বলছেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ও তার দায়িত্ব এড়াতে পারে না। কেননা দেশের রিজার্ভ চুরি হওয়ার এক মাস পর অর্থ মন্ত্রণালয় জানলো, তাও নিজেদের সোর্স থেকে নয়! তা কী করে সম্ভব? যদি ধরেই নেয়া যায়, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাদের জানায়নি; কিন্তু তাই বলে কি তারা জানবে না? তবে কী বুঝে নিতে হবে বাংলাদশে ব্যাংকের উপর ভর করে অর্থমন্ত্রণালয় চলে? বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধিনস্থ প্রতিষ্ঠানগুলোর মনিটরিং সিস্টেমের দুর্বলতার কথাও এখন মানুষের মুখে মুখে। এর সুষ্পষ্ট আভাস মিলে স্বয়ং অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যেও। গত ১৮ মার্চ প্রথম আলোর এক সাক্ষাৎকারে অর্থমন্ত্রীর নানা কথামালার মধ্যে তেমন ইঙ্গিত রয়েছে। এনবিআর চেয়ারম্যান প্রসঙ্গে তার মন্তব্য এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য। তার বক্তব্যকে সঠিক ধরে নিলেও এই ব্যর্থতার দায়ভার তো তারই! শুধু ব্যক্তি অর্থমন্ত্রীর সৎ থাকলেই হবে না, দরকার সততার সাথে দূর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান। দেশের অর্থ নিরাপত্তায় তার কার্যকর উদ্যোগও জনগণ দেখতে চায়।
প্রসঙ্গত, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত বহুল আলোচিত কিছু কেলেঙ্কারির কথা এখানে আলোকপাত করা যেতে পারে। শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির কথা কে না জানে, এই শেয়ার বাজারের কারণে ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সময়মতো প্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপের অভাবে কত হাজার হাজার পরিবার ধ্বংস হয়ে গেছে! তার হিসাব কি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আছে? ডেসটিনির কথা কী মানুষ ভুলে গেছে! জনগণের হাজার হাজার কোটি টাকা ডেসটিনি লুটি করে নিয়ে গেছে। কত-সহস্র মানুষকে যে সর্বস্বান্ত করেছে, তার হিসেব কি অর্থমন্ত্রণালয়ের আছে? এমনি সব ঘটনার মধ্যে হলমার্ক কেলেঙ্কারির চার হাজার কোটি টাকার লুঠপাটকে অর্থমন্ত্রী তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। অর্থমন্ত্রীর এই কথায় প্রকারান্তরে দুর্ণীতিবাজরাই বাহবা পেল! আর এভাবেই চলতে থাকলো একের পর এক বড় ধরনের আর্থিক কেলেঙ্কারি ঘটনা। যেন দেশটা লুটেরাদের রাজ্য। অথচ এসংক্রান্ত পুরো দেখ-ভালের দায়িত্ব অর্থ মন্ত্রণালয়ের।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি হওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা প্রবাহ ও এ সংক্রান্ত নানাবিধ সমালোচনা সরকারের ইমেজকে বিনষ্ট করেছে। তাই স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে, অর্থমন্ত্রণালয়ের এসব ব্যর্থতার দায়ভার প্রধানমন্ত্রীকেও নিতে হচ্ছে। আর এভাবে যদি সব মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের ব্যর্থতার দায়ভার প্রধানমন্ত্রীকে বহন করতে হয়, তবে দেশটা তিনি পরিচালনা করবেন কীভাবে? তাই আজ কোন মন্ত্রী বা হর্তা-কর্তার বড় বড় বুলি কিংবা বক্তৃতা নয়, কোন বেফাঁস কথা নয়, পুরো মন্ত্রণালয়কে দূর্নীতিতে নিমজ্জিত রেখে নিজে সৎ থাকার ব্যর্থ চেষ্টাও নয়, বরং এখন দরকার সততার সাথে দক্ষতা সংযুক্তি করে দেশটাকে দুর্নীতিমুক্ত করা। কথায় নয়, কাজেই মানুষ বড় হয়। এদেশের মানুষ বৃক্ষের পরিচয় নামে চিনে না, চিনে তার গুণের কদর- বিচারে।
লেখক: সহকারি অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, আঠারবাড়ি ডিগ্রি কলেজ, ময়মনসিংহ, mshahid11238@gmail.com
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩, ২০১৬
জেডএম/