ছবি কথা বলে। কোনো কোনো ছবি আবার হাজার শব্দের কথা বলে (‘A picture is more eloquent than thousand words.’)।
১৯৪০ সালে কাপ সামনে রেখে কিশোর ফুটবলার বঙ্গবন্ধু।
বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। এদেশেও আলোকচিত্র অতীত সময় ও ইতিহাসের মূর্ত সাক্ষীর ভূমিকাটাই পালন করেছে। আলোকচিত্রশিল্পীরা এ কাজটি করেছেন এবং এখনো করে চলেছেন ঈর্ষণীয় দক্ষতা ও যোগ্যতার সঙ্গে। তাদের তোলা আলোকচিত্র বাংলাদেশের প্রতিদিনের জীবন, প্রকৃতি, নিসর্গের রূপ যেমন তুলে ধরে, তেমনি জাতীয়তার উন্মেষ ও বিকাশের ধারাবাহিকতার সাক্ষ্যও দেয়। সেইসঙ্গে আলো ফেলে বাংলাদেশের ইতিহাসের নানা পর্যায়ের ওপরও।
পিতা-মাতা ও স্ত্রীর সঙ্গে বঙ্গবন্ধু
এরই ধারাবাহিকতায় যোগ হলো আরও একটি প্রশংসাযোগ্য কাজ-- ‘‘আলোকচিত্রে বঙ্গবন্ধু’’। এটি একটি আলোকচিত্র অ্যালবাম। ২২৬ পৃষ্ঠার এই অ্যালবামটি ধারণ করেছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘটনাবহুল, কর্মময় জীবনের নানান পর্যায়ের কয়েক শ আলোকচিত্র।
১৯৪৯ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে যুবনেতা বঙ্গবন্ধু
এর উৎসর্গপত্রে লেখা হয়েছে:
‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর পরিবার ও বাংলাদেশকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে সকল আন্দোলন-সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী বীর শহীদের প্রতি। ’
১৯৫২ সালে চীন সফরে বঙ্গবন্ধু
প্রতিটি পৃষ্ঠার পটভূমি মাল্টিকালার হলেও অ্যালবামের সব ছবিই সাদাকালো। অ্যালবামটির একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো, প্রতিটি ছবির নিচে ক্যাপশনের পাশাপাশি ডানপাশে আছে ছবির পটভূমি, প্রেক্ষাপট ও পরিপ্রেক্ষিতের বর্ণনা। আবার প্রতিটি পৃষ্ঠার ডানপাশে একদম নিচে বড় হরফে ছবি তোলার বছরটি। আবার কখনোবা ছবির বিষয়বস্তুর নাম। যেমন, প্রথম আলোকচিত্রটি বঙ্গবন্ধুর গ্রামের বাড়ির। আলোকচিত্রের নিচের ক্যাপশন ও ডানপাশে দেওয়া বর্ণনার পাশাপাশি ডানে একদম নিচে আছে বড় হরফে লেখা ‘১৯২০’। কখনোবা ‘পারিবারিক’ । কখনোবা ‘বঙ্গমাতা’—এভাবে।
১৯৫৪ সালে মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে শেরে বাংলা এ. কে ফজলুল হকসহ অন্যদের সঙ্গে
‘১৯২০’ নামাঙ্কিত পৃষ্ঠায় ছবির ডানপাশে বর্ণনাংশের শেষ দিকে লেখা হয়েছে : ‘...তাঁর (বঙ্গবন্ধুর) ডাক নাম ‘খোকা’। স্কুলে ছোট বড় সকলেই তাঁকে ‘মিয়াভাই’ বলে ডাকত। ’ এভাবে শুধু গতানুগতিক ক্যাপশন না দিয়ে অলোকচিত্রটির মর্মার্থ তুলে ধরার জন্য জুড়ে দেওয়া হয়েছে বর্ণনা। এর ফলে যোগ হয়েছে আলাদা মাত্রা। ফলে যারা এই অ্যালবামটি নিজেদের সংগ্রহে রাখবেন তারা ছবির পাশাপাশি বাড়তি অনেক, ক্ষেত্রবিশেষে আগে-না-জানা, তথ্যও পাবেন।
১৯৫৭ সালে কাগমারি আফ্রো-এশীয় সাংস্কৃতিক সম্মেলনে মাওলানা ভাষানী, সোহরাওয়ার্দী ও তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার সঙ্গে বঙ্গবন্ধু
বঙ্গবন্ধুর মহাকাব্যিক জীবন ও তাঁর সংগ্রামমুখর, ঘটনাবহুল রাজনৈতিক পরিচয়ের উল্টোপিঠে তাঁর ব্যক্তিমানুষ পরিচয়টিও পাওয়া যায় এতে। একজন পিতৃমাতৃভক্ত অনুগত সন্তান হিসেবে, সন্তানদের স্নেহশীল পিতা হিসেবে, দায়িত্ববান স্বামী হিসেবে, আত্মীয়পরিজন-বন্ধুদের প্রতি সদা অনুরক্ত এক খোলামনের মানুষ হিসেবে, পথপ্রদর্শক ও বিপদের বন্ধু হিসেবে ---কতো পরিচয়েই তাকে পাওয়া যাবে এই অ্যালবামটিতে! যেমন, ১৯৪০ সালে কিশোর বয়সে ফুটবল কাপ সামনে রেখে ফুটবলার বঙ্গবন্ধুর যে ছবি অ্যালবামের শুরুতে, তাতে খেলাধুলার প্রতি তাঁর আশৈশব টানের ব্যাপারটি টের পাওয়া যায়।
১৯৬৫ সালে বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলকে কোলে নিয়ে বঙ্গবন্ধুতনয়া শেখ হাসিনা
এভাবে ২২৬ পৃষ্ঠার অ্যালবামটি হয়ে উঠেছে বঙ্গবন্ধুর জীবনের নানা সময়ের, নানা পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ সচিত্র এক আলেখ্য। তাঁর পারিবারিক জীবন আর রাজনৈতিক জীবন দুটোই উঠে এসেছে ছবির পর ছবিতে। পিতামাতার স্নেহচ্ছায়ায় যেমন, স্ত্রী-পুত্র-কন্যা-আত্মীয়পরিজন আর বন্ধু সুহৃদদের সান্নিধ্যে যেমন, একই সঙ্গে নেতৃত্বের উন্মেকালে কলকাতার বেকার হোস্টেলজীবনের দিনগুলিও ছবি-ছবিতে কথা বলে উঠেছে অ্যালবামে।
(চলবে)
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০১৬
জেএম/
** যে অ্যালবামে ইতিহাস কথা বলে!