ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

যে অ্যালবামে ইতিহাস কথা বলে!

জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০১৬
যে অ্যালবামে ইতিহাস কথা বলে!

আরো আছে মহাত্মা গান্ধী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে তোলা ছবিও। মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে তোলা ছবিটি যে কতো তাৎপর্যপূর্ণ ও বিরল তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

গান্ধী ও বঙ্গবন্ধু দু’জনই ছিলেন অহিংসার বরপুত্র। এদিক থেকে ওই ছবিটার আছে এক অন্য রকম প্রতীকী তাৎপর্য। এছাড়া রাজবন্দি-জীবনের ছবিসহ গণতান্ত্রিক সংগ্রামের দীর্ঘ বন্ধুর পথের নানান পর্বের কতো না  স্মরণীয় আর ঐতিহাসিক ছবি আছে অ্যালবামটিতে!

৩ মার্চ ১৯৭১: দেশের পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধু
সেসব ছবিতে চীনা নেতা কমরেড মাও সে তুং, সোভিয়েত নেতা আলেক্সি কোসিগিন, লিওনিদ ইলিচ ব্রেজনেভ, বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডগলাস হিউম, ভারতের রাষ্ট্রপতি ভি.ভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, মজলুম জননেতা মাওলানা ভাষাণী, মুক্তিযুদ্ধকালে ভারতীয় বাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা, ভারতীয় চলচ্চিত্রের অন্যতম প্রাণপুরুষ সত্যজিৎ রায়, বিদ্রোহী কবি নজরুল, সঙ্গীতশিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, জাতিসংঘের মহাসচিব কুর্ট ওয়াল্ডহেইম, জাপানের প্রধানমন্ত্রী কাকুই তানাকা, কম্বোডিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান প্রিন্স নরোদম সিহানুক, তৎকালীন যুগোস্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট জোসেফ ব্রুজ মার্শাল টিটো, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ড, ইরাকের প্রেসিডেন্ট হাসান আল বকর, সাদ্দাম হোসেন, মিসরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সা’দাত, ভুটানের রাজা জিগমে সিংগে ওয়াংচুক, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী গফ্‌ হুইটল্যামসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার কতো না দিকপাল আছেন। নির্বাক ছবিগুলোসব যেন ইতিহাসের সবাক কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছে।

৭ মার্চ ১৯৭১: রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ
পিতা শেখ লুৎফর রহমান, মা সায়রা খাতুন, নিজের আমৃত্যু সঙ্গী ও সংগ্রামে-দুর্দিনে প্রেরণা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামালদের সঙ্গে পারিবারিক নানা আনন্দঘন মুহূর্তের দুর্লভ ছবিতে মানুষ শেখ মুজিবুর রহমানের গৃহী পরিচয়টি সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে।

২০ মার্চ ১৯৭১: ধানমণ্ডির বাড়িতে হাস্যোজ্জ্বল বঙ্গবন্ধু
আর বাঙ্গালির অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে সদা অগ্রগামী, ত্যাগী আর আপোসহীন নেতা শেখ মুজিবের আন্দোলন-সংগ্রামের কঠিন-বন্ধুর দিনগুলোর ছবিও অ্যালবামের পাতায় পাতায়। কখনো বক্তৃতামঞ্চে তর্জনী উঁচিয়ে ভাষণরত, কখনো রাজনৈতিক নেতা ও সতীর্থদের সঙ্গে বৈঠকরত, কখনোবা গ্রেফতার হয়ে জেলে যাওয়া মুহূর্তের ছবি ---এভাবে ছবি আর ছবিতে কথা বলে উঠেছে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস। অ্যালবামটিতে তাই পাওয়া যাবে একটি জাতির উন্মেষের গৌরবজনক নানা অধ্যায়ের ভেতর দিয়ে শ্বাসরুদ্ধকর এক আশ্চর্য ভ্রমণের রোমাঞ্চ।

২৩ মার্চ ১৯৭১: ধানমণ্ডির বাড়িতে জনতার অভিনন্দনের জবাব দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধু। পেছনে কন্যা শেখ হাসিনা
২২৬ পৃষ্ঠার মধ্যে ২২৩ পৃষ্ঠা পর্যন্ত ছবিগুলোর বেলায় একথা খাটে। যা তৃপ্তির আর গৌরবের। কিন্তু ২২৪ ও ২২৫ পৃষ্ঠা ওল্টানোর সঙ্গে সঙ্গে বজ্রাহত আপনি। হরিষে বিষাদ! হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নামের মহাপুরুষের স্পন্দনহীন নিথর রক্তাক্ত লাশের ছবি আর টুঙ্গিপাড়ায় তাঁর সমাধির ছবি!ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির সিঁড়িতে ঘাতকের বুলেটে ঝাঁঝরা বঙ্গবন্ধুর রক্তাক্ত ছবি। এ ছবি নিমেষে আনন্দের সূর্য নিভিয়ে দিয়ে মনকে ঢেকে দ্যায় নিকষ কালো আঁধারে।

২৫ মার্চের কালো রাত ১৯৭১: পাকিস্তানি বাহিনির নারকীয় হত্যাযজ্ঞের পর বঙ্গবন্ধুকে আটক করার দৃশ্য
সব মিলিয়ে প্রায় চারশোর মতো আলোকচিত্র। কিছু আলোকচিত্র আবার বিভিন্ন চিঠি ও দলিলের। কিছু চিঠি বঙ্গবন্ধুর নিজের হাতে লেখা। কোনো কোনোটি আবার টাইপ করা। ২৫ মার্চ দিবাগত রাত ১২টা ২০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু স্বহস্তে ইংরেজিতে যে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি লেখেন সেটিও স্থান পেয়েছে এই ফটো অ্যালবামে। এই বার্তায় বঙ্গবন্ধু রাজারবাগ পুলিশ লাইনে পাকিস্তান  হানাদার বাহিনির হত্যাযজ্ঞের কথা উল্লেখ করে প্রতিটি বাঙ্গালির কাছে আহবান জানিয়েছিলেন প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য।


১৯৭২ সাল। বিমানবন্দর থেকে রেসকোর্স ময়দানে যাওয়ার আগ মুহূর্তে মুক্তিযুদ্ধের সেনাপতি আতাউল গনি ওসমানীর সঙ্গে বঙ্গবন্ধু
এরকম আরো কিছু চিঠি ও দলিলের পাশাপাশি বাংলাদেশে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বড় মেয়ে শেখ হাসিনার কাছে হাতে লেখা বঙ্গবন্ধুর চিঠিও স্থান পেয়েছে এই অ্যালবামে। সব মিলিয়ে নানা-বৈচিত্রে-ঠাসা এই অ্যালবাম। ইতিহাস-চেতন প্রতিটি মানুষের সংগ্রহে রাখার মতো। বিশেষ করে ইতিহাসের ছাত্র ও গবেষকদের জন্য এই অ্যালবাম হতে পারে খুব সহায়ক আর বিশ্বস্ত এক সচিত্র দলিল।

২ অক্টোবর ১৯৭৪: যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে বঙ্গবন্ধুকে স্মারক সম্মাননা দেওয়া হয়
অ্যালবামটির গ্রন্থনা ও গবেষণা সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন ইফতেখার মোহাম্মদ ও আব্দুল্লাহ আল মামুন (তপন)। গ্লসি অফসেট পেপারে ছাপা বহবর্ণিল পটভূমি আর সাদাকালো ছবির এই অ্যালবাম। এতে আলোকচিত্রী আ. ন. ম শফিকুল ইসলাম স্বপন, রশীদ তালুকদার, পাভেল রহমান, আফতাব আহমেদ, জহিরুল হক, লুৎফর রহমান, কিশোর পারেখ, তারাপদ ব্যানার্জীসহ আরো অনেকের তোলা আলোকচিত্র স্থান পেয়েছে।

অ্যালবামটির দৃষ্টিনন্দন প্রচ্ছদ করেছেন রফিক উল্যাহ। অঙ্গসজ্জায় ছিলেন ইউসুফ খসরু, রফিক উল্যাহ ও মো: কবির হোসেন। এর দাম রাখা হয়েছে বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৫০০ টাকা (৩৫ মার্কিন ডলার)। আমরা অ্যালবামটির ব্যাপক প্রচার ও প্রসার কামনা করি।

(সমাপ্ত)

 বাংলাদেশ সময়: ১১৩২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০১৬
জেএম/

** যে অ্যালবামে ইতিহাস কথা বলে ওঠে!

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।