পানি থই থই করছে মাঠের চারদিকে। পানিতে ফুটে আছে নানা জাতের ফুল।
পানিতে খেলা করছে অসংখ্য মাছ। বর্ষায় মাছের মৌসুম হওয়ায় মাছের ছুটোছুটিও এখন চোখে পড়ার মতো।
মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ বাঙালির আবহমান কালের ঐতিহ্য। বিশেষ করে গ্রামের দরিদ্র মৎস্যজীবী-অমৎস্যজীবী সবাই এই মৌসুমে নানাভাবে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।
এ মৌসুমে ধরা পরে কাঁচকি, চান্দা, পুঁটি, টেংরা, বজরি, বাইন, পাবদা, ড্যালা, মলা, চিংড়ি, ঘুইত্যা, দারকিলা ইত্যাদি ছোট মাছ। এসব মাছ শিকারে তারা ব্যবহার করেন নানা উপকরণ। যেমন: চাঁই, খলসুন, ভইর, বিত্তি, চবিজাল, পলই, বানা, ঘোপ ইত্যাদি। বাঁশ দিয়ে নদী-নালা, খাল-বিলে গেড়ে দেওয়া হয় এসব মাছ ধরার সরঞ্জাম।
এসব উপকরণের প্রবেশমুখ বাবুই পাখির বাসার মতো করে তৈরি করা হয়। তাতে ছোট ছোট মাছগুলো অতি সহজেই ধরা পড়ে।
শিকার করা মাছ নিজেরা খাওয়ার পাশাপাশি বিক্রি করে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি লাভ করেন গ্রামের মানুষজন। পাশাপাশি রোদে শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করে সংরক্ষণ করেন তারা।
বড় ও মাঝারি মাছ ধরতে ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন ধরনের জাল। যেমন- বেড় জাল, খরা জাল, তোরা জাল, ঠেলা জাল, কারেন্ট জাল, সুতি জাল, বওয়া জাল, পাংটি জাল ইত্যাদি। জাল বোনাও বাংলার কুটিরশিল্পের অংশ। অনেক দরিদ্র পরিবার জাল বুনে তা বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে।
বড়শি, টেঁটা ইত্যাদির মাধ্যমেও মাছ শিকার করা হয়। ছোট্ট একটি বড়শিতে যখন বিশাল বড় মাছ ধরা পড়ে, তখন অবাক না হয়ে পারা যায় না। বড়শির মধ্যে রয়েছে টানা বড়শি ও ছিপ বড়শি।
বড়শি দিয়ে মাছ ধরা কিছুটা সহজ বলে শখেও বড়শি দিয়ে মাছ ধরে থাকেন অনেকে। এক্ষেত্রে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে টিকিটের বিনিময়ে মাছ শিকারের ব্যবস্থা রয়েছে। টিকেটের দাম ১ হাজার টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। মৎস্যক্ষেত্র হিসেবে রয়েছে লেক, দিঘি ও পুকুর। যেমন- ধানমণ্ডি লেক, ঢাকা টিড়িয়াখানা লেক, নওয়াব বাড়ি পুকুর, জাতীয় সংসদ ভবন লেক, বংশাল লেক ইত্যাদি।
শিকারের দিন হিসেব করা হয় সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত। এক টিকিটে সর্বোচ্চ চারটি বড়শি ফেলা যায়।
টেঁটা মাছকে ক্ষত-বিক্ষত করে ওপরে তুলে আনে। গ্রাম বাংলায় রাত যখন গভীর হয়, মানুষগুলো নীরব হয়ে পড়ে, তখন কিনারায় আসে মাছগুলো। রাতে এক হাতে লাইট ও ডুলা, অন্য হাতে টেঁটা নিয়ে মাছ শিকারে বের হন মৎস্যজীবীরা। এভাবে মাছ শিকার ব্যাপক অভিজ্ঞতা ছাড়া সম্ভব না। পানির মধ্যে লাইটের আলোর অপরূপ দৃশ্য গ্রামের সৌন্দর্যকে আরেকটু ফুটিয়ে তোলে।
এছাড়া পানির স্রোত যেদিক দিয়ে যায়, সেখানেও প্রচুর মাছের দেখা মেলে। আর তা শিকারের জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েন গ্রামের জেলেরা। কার চেয়ে কে বেশি মাছ ধরবেন-সেটিও প্রতিযোগিতার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। যে জেলে মাছ বেশি ধরতে পারেন, তার আয়ও সেদিন ভালো হয়। পরিবারের মুখে দু’মুঠো অন্ন তুলে দিতে পারেন তিনি। তাতে অনাবিল সুখ নেমে আসে।
মাহবুব আলম: ২য় বর্ষ, ইতিহাস বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০১, ২০১৬
এএসআর