কপি-পেস্ট সাংবাদিকতা নিয়ে অনেক কথা চলে। একটি সংবাদমাধ্যমের কনটেন্ট অপর সংবাদমাধ্যম কপি করে হুবহু পেস্ট করে নিজেদের নামে বেশ চালিয়ে দিচ্ছে।
আগেই আলোচনায় এসেছে, স্যোশাল মিডিয়া যেভাবে নিউজফিড দিচ্ছে তাতে করে মূলধারার সংবাদমাধ্যম কিছুটা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত। ফেসবুক যখন কথা তুললো তারা নিজেরাই খবর দেবে তখন সে নিয়ে সমালোচনাও কম হয়নি। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ সে আইডিয়া থেকে কিছুটা সরেও গেছে। তবে কাজটি কিন্তু থেমে থাকেনি। এখানে ভিলেন রূপে আবির্ভূত হয়েছে ‘ফেসবুক সেলিব্রেটি’ নামের একটি চরিত্র। এরা এখন সংখ্যায় অনেক। তারা স্ট্যাটাস দিয়ে লাইক, রিয়্যাক্টের জোয়ারে ভাসেন। জনপ্রিয় হতে হতে এক পর্যায়ে সেলিব্রেটি হয়ে ওঠেন। তাদের শত-সহস্র অনুসারী। রাজনৈতিক সেলিব্রেটি, শোবিজের সেলিব্রেটিদের অনেকের চেয়েও এরা বেশি জনপ্রিয়।
তা বেশ! সামাজিক মিডিয়ার জগতে তাদের বিচরণ। সমাজের ট্রেন্ড বুঝে বুঝে তারা ফলোয়ার জোগাড়ে ব্যস্ত থাকবেন। তাদের নিয়ে মূলধারার মিডিয়ার কীই বা যায় আসে।
কিছুই হয়তো যেয়ে আসতো না, যদি তারা মূলধারার মিডিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত না করতেন। ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে এই সেলিব্রেটিরা মূলধারা থেকে কনটেন্ট চুরি করছেন।
নিউজ পেগ বলে সাংবাদিকতায় একটা কথা আছে। আর সামাজিক মাধ্যমকে এখনকার মূলধারার সংবাদমাধ্যমের জন্য নিউজপেগ’র বড় উৎস বলেও বিবেচনা করা হয়।
সামাজিক মিডিয়া থেকে তথ্য নিয়ে বড় বড় খবর প্রকাশ করছে মূলধারার সংবাদমাধ্যম সে এখন প্রচলিত কথা। এবং দুটি মাধ্যম পরস্পর পরস্পরের পরিপূরকও হয়ে উঠছে। সামাজিক মাধ্যমেও এখন একটা বড় অংশ জুড়ে স্থান পাচ্ছে মূল ধারার অনেক খবরের লিংক।
সামাজিক মাধ্যমে যেমন সমাজের অনেক খবর পাওয়া যায়, যা মূলধারার সংবাদমাধ্যম ব্যবহার করতে পারে, তেমনি মূলধারার সংবাদমাধ্যমের কাছেও থাকে অনেক খবর যা প্রকাশিত হওয়ার পর তার লিংক সামাজিক মাধ্যমে তুলে দেওয়া হয়। ফলে কনটেন্ট দেওয়া নেওয়ার একটা সম্পর্ক দুই মাধ্যমের মধ্যে ক্রমে দৃঢ় হচ্ছে।
কিন্তু সামাজিক মাধ্যমের সেলিব্রেটিরা বিষয়টিকে পছন্দ করছেন না। তারা বেছে নিয়েছেন অন্যপথ। তারা মূলধারার খবরগুলোর লিংক নয়, বরং কনটেন্ট চুরি করে তাদের স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। তারা মূল ধারার খবরকে তাদের স্ট্যাটাসের পেগ হিসেবে বেছে নিচ্ছেন। তাতে তাদের লাইক বাড়ে, রিঅ্যাক্ট বাড়ে। ভালোবাসা, বিস্ময়ের সিম্বলে ভরে ওঠে তাদের ফেসবুকের পাতা। এতে তাদের ফলোয়াররা হয়তো ভাবছেন- বাব্বা... আমাদের সেলিব্রেটি কত্ত খবর রাখেন!
কিন্ত এই সেলিব্রেটি হয়তো কোনও খবরই রাখেন না... তিনি যে মূল ধারার খবর থেকে কনটেন্ট চুরি করে স্ট্যাটাস দিয়েছেন তাতো আর উল্লেখ থাকে না.. ফলে তা ফলোয়ারদের বোঝার উপায় নেই।
একটা উদাহরণ তুলে ধরছি...
“ঈদে নতুন মডেলের মোটরসাইকেল কিনে দিতে হবে। কিন্তু, ১৭ বছরের ছেলের এই আবদার না মানায় মা ও বাবাকে আগুনে পুড়িয়ে খুনের চেষ্টার অভিযোগ উঠল ফারদিন হুদা মুগ্ধ নামে এক কিশোরের বিরুদ্ধে। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ফরিদপুরে এই ঘটনা ঘটে। সিলভিয়া হুদা এবং তাঁর স্বামী এটিএম রফিকুল হুদা ফরিদপুরের কমলাপুর ডিআইবি বটতলা এলাকার বাসিন্দা। রফিকুল প্রাক্তন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এটিএম শামসুল হুদার ছোট ভাই। দগ্ধ অবস্থায় রফিকুল হুদা এখন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন। শরীরের প্রায় ৫০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছে। তাঁর ভগ্নিপতি আকরাম উদ্দিন আহমেদ জানান, এ বছর ফরিদপুর জেলা স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ মুগ্ধ তার বাবার কাছে নতুন মডেলের একটি মোটরসাইকেল দাবি করে। কিন্তু, বাবা কিনে দিতে রাজি না হওয়ায় সে ক্ষুব্ধ হয়। একটা সময়ে মুগ্ধ ঘরের মধ্যে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় মা-বাবার গায়ে। এতে রফিকুলের শরীরের বিভিন্ন জায়গা এবং সিলভিয়ার পায়ের কিছু অংশ পুড়ে যায়। পুড়ে যায় মুগ্ধরও পায়ের কিছু অংশ। তাঁদের উদ্ধার করে প্রথমে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় রাতেই রফিকুলকে ঢাকায় স্থানান্তরিত করা হয়। শুক্রবার বিকেলে তাঁকে আইসিইউতে স্থানান্তরিত করা হয়। সিলভিয়াকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। মুগ্ধ তার মায়ের সঙ্গেই আছে।
রফিকুলের ভাগ্নে ইফতেখার আলম বলেন, নতুন মডেলের মোটরসাইকেল কেনা নিয়ে মামা-মামির সঙ্গে মুগ্ধর ঝগড়া চলছিল। হঠাৎই ঘরে থাকা পেট্রোল দিয়ে সে আগুন ধরিয়ে দেয় তাঁদের গায়ে। পরে তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাই।
তিন তলা একটি বাড়ির দোতলায় একমাত্র ছেলেকে নিয়ে থাকেন রফিকুল-সিলভিয়া দম্পত্তি। ছেলের জন্য ৫ লক্ষ টাকার একটি মোটরসাইকেল কিনে দিয়েছিলেন। সেটি পাল্টে নতুন মডেলের বাইক দাবি করে মুগ্ধ।
অন্য দিকে, নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে মুগ্ধ লিখেছে, ‘যদি বাচঁতে হয়, বাঘের মতো বাচঁব। কাউকে ভয় করি না। মৃত্যুর কোনও ভয় নেই আমার। আল্লাহ ইজ এনাফ ফর মি!’ ঈদের রাতেও তার ফেসবুকে স্ট্যাটাসে মুগ্ধ লিখেছে, ‘পৃথিবীতে নিজে ভাল থাকতে হলে স্বার্থপর হতে হবে। আর অন্যকে ভাল রাখতে গেলে নিঃস্বার্থ হতে হবে। এটাই সত্য। ’কোতোয়ালি থানার ওসি মো. নাজিম উদ্দিন জানান, এ ঘটনায় কেউ থানায় অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ”
উপরের এটি একটি স্ট্যাটাস। এতে শতাধিক লাইক-রিঅ্যাক্ট আর অর্ধশতাধিক কমেন্ট পড়েছে।
একটি কমেন্ট এমন: ‘দাদা, থু,, থু,, ফেলা দরকার এরকম ছেলে-মেয়ের প্রতি । ’
এই কমেন্টদাতা স্ট্যাটাসদাতাকে সম্বোধন করেই তার কমেন্টটি দিয়েছেন। কিন্তু স্ট্যাটাস দাতার কনটেন্টের সঙ্গে এই খবরের কনটেন্টটি মিলিয়ে দেখুন:
নতুন মোটরসাইকেল কিনে না দেয়ায় মা-বাবাকে আগুনে পোড়ালো ছেলে
এই সোশ্যাল মিডিয়া সেলিব্রেটি কিন্তু সহজেই তার স্ট্যাটাসে খবরের লিংকটি শেয়ার করতে পারতেন একটি ছোট্ট নোটসহ। যা দুনিয়া জোড়া প্র্যাকটিস। কিন্তু সেটা না করে, এই সেলিব্রেটি পুরো কনটেন্টটিকে নিজের স্ট্যাটাস বানিয়ে বাজারে ছাড়লেন।
ধারণা করলে ভুল হবে, এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এমনটা এখন অহরহ ঘটছে। দিন দিন এমন ঘটনা বেড়েই চলেছে।
কপি পোস্ট এই স্ট্যাটাস পদ্ধতির ইতি ঘটা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ সময় ১৪৪৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৬
এমএমকে