ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

র‌্যাংকিং ক্রেজ অনলাইন মিডিয়ায়!

মাহমুদ মেনন, হেড অব নিউজ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬০৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৬
র‌্যাংকিং ক্রেজ অনলাইন মিডিয়ায়!

মাইওয়ে.কম, বেট৩৬৫.কম, সেভফ্রম.নেট, ক্রেজিএইচডি.কম, অ্যাডেক্স.কম। কি বলছেন? চেনেন না এরা কারা? কেনো চিনবেন না? এগুলো বাংলাদেশে খুবই জনপ্রিয় ওয়েবসাইট। অন্তত বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম’র চেয়ে বেশি।

মাইওয়ে.কম, বেট৩৬৫.কম, সেভফ্রম.নেট, ক্রেজিএইচডি.কম, অ্যাডেক্স.কম। কি বলছেন? চেনেন না এরা কারা?

কেনো চিনবেন না? এগুলো বাংলাদেশে খুবই জনপ্রিয় ওয়েবসাইট।

অন্তত বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম’র চেয়ে বেশি। আরও নাম শুনবেন- দারাজ.কম, ক্লিকসগিয়ার.কম, পোপ্যাডস.নেট, আস্ক.কম, অনক্লিকঅ্যাডস.নেট এরাও এগিয়ে র‌্যাংকিংয়ে।

হাস্যকর ঠেকলেও ঠিক এমনটাই দেখাচ্ছে অ্যালেক্সা র‌্যাংকিং।

অ্যালেক্সা অ্যামাজন.কম’র কোম্পানি। ভার্চুয়াল জগতের স্রষ্টাদের একটি এই অ্যামাজন। তারই সিস্টার কনসার্ন অ্যালেক্সা। সুতরাং বিশ্বাস না করার উপায় আছে?

ইন্টারনেট থেকে কিছু কথা তুলে ধরছি-

দিমিত্রি শারমেন নামে একজন এই প্রশ্নটিই ছুঁড়েছিলেন অনলাইনে- আচ্ছা অ্যালেক্সা র‌্যাংকিংয়ের ওপর আমি কি ভরসা করতে পারি? প্রশ্নটি ছুঁড়েই ক্ষান্ত থাকেননি- একটা অভিজ্ঞতাও তুলে ধরেছেন। একটি ওয়েবসাইটের কথা জানালেন যার অ্যালেক্সা র‌্যাংকিং ও ডেইলি রিচ কমে যাচ্ছে কিন্তু সার্চ ইঞ্জিনের ট্রাফিক সোর্সের হার বাড়ছে। এ থেকে কি বোঝা যাবে? প্রশ্ন ছিলো তার। সাইটটি যে অ্যালেক্সা সার্টিফায়েড, সে তথ্যও জানিয়ে রাখলেন শেরমান।

এরপর যে উত্তরগুলো এলো পড়ুন- ডিজিটাল মার্কেটিং বিষয়ক একটি কোম্পানির পরিচালক ও সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও) বিষয়ক পরামর্শকের কাজ করেন এমন একজন বললেন- অবশ্যই অ্যালেক্সা র‌্যাংকিংয়ে গলদ রয়েছে। এই র্যাংকিংয়ের ওপর আমি মোটেই ভরসা করতে রাজি নই। পাঠকের ট্রেন্ড ছাড়া এই র‌্যাংকিং আর কিছুই দিতে পারে না।

ই-কমার্স ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেন অপর একজনের উত্তর ছিলো- নিঃসন্দেহে অ্যালেক্সা খুবই ভুল র‌্যাংকিং করে। আর এর পদ্ধতিও সঠিক নয়। নিজের কম্পিউটারে অ্যালেক্সা টুলবার বসিয়ে স্রেফ নিজে নিজেও সাইট ব্রাউজ করে র‌্যাংকিং বাড়ানো যায়। সুতরাং অ্যালেক্সার ওপর ভরসা না করাই ভালো।  

এমন ডজন ডজন উত্তর এসেছে যার কোনওটিতে অ্যালেক্সাকে নিয়ে ইতিবাচক কিছুই নেই।

বাংলাদেশের দিকে আরেকটু তাকানো যাক। দেশে সবাই অনলাইন নিউজ সাইট হিসেবে কিছু ওয়েব সাইটকে চেনে। এর মধ্যে প্রধান দুটি বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম আরেকটি বিডিনিউজ২৪.কম। বাংলানিউজ প্রতিষ্ঠার সপ্তম বছরে পড়তে যাচ্ছে। আর বিডিনিউজ দেশের প্রথম অনলাইন সংবাদমাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠার এক যুগ পূর্ণ করেছে। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম’র এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেনই এই বিডিনিউজ২৪.কম’র প্রতিষ্ঠাতা। সেই ২০০৪ সালে যার যাত্রা শুরু। আর বাংলানিউজের যাত্রা শুরু ২০১০ সালে। দেশে-বিদেশে বাংলাভাষাভাষির মুখে মুখে আজ এই দুটি অনলাইন সংবাদমাধ্যমের নাম। বাংলাদেশের খবরের জন্য তাদের ভরসার স্থানও এই দুটি প্রধান অনলাইন।  

র‌্যাংকিংয়ে ফিরি। শুরুতে সবকিছু ঠিকঠাক ছিলো। দীর্ঘ একটি সময় ধরে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম দেশের নিউজ মিডিয়াগুলোর মধ্যে র্যাংকিংয়ে প্রথম ও বিডিনিউজ২৪.কম তৃতীয় অবস্থানে ছিলো। এ সময় দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলো দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদপত্রের অনলাইন ভার্সন।

মূলত বাংলা ভাষায় ওয়েব সাইট এই তিনটির র‌্যাংকিং ছিলো যথাক্রমে পঞ্চম, সপ্তম ও অষ্টম।

এসময় এক নম্বরে ছিলো গুগল.কম, দ্বিতীয় ছিলো ফেসবুক.কম, তৃতীয় গুগল.কম.বিডি চতূর্থ ইয়াহু.কম, ষষ্ঠ  ইউটিউব.কম।

মূলত সারা বিশ্বের দেশে দেশেই গুগল, ইয়াহু, ফেসবুক, ইউটিউব, উইকিপিডিয়া র‌্যাংকিংয়ে প্রথম দিকে থাকে। কারণ এগুলো আন্তর্জাতিকভাবেই প্রয়োজনীয় এবং জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন কিংবা সাইট। এবং কোনও দেশেরই নিজস্ব কোনও ওয়েবসাইট নেই যা এগুলোর চেয়ে বেশি ব্রাউজিং হয়।

এর মধ্যে সাইবার জগতে আরেকটি বিষয় সামনে এলো- অন লাইনের অর্থনীতি। বিশ্ববাসী যখন ভার্চুয়াল জগতে ঢুকে পড়েছে, ওয়েব সাইটগুলোর নির্ভরতাও যখন নিশ্চিত হয়েছে তখন, এতদিন যেসব সেবা ছিলো ফ্রি তা এখন অর্থ আয়ের পথ খুঁজতে লাগলো। ফলে যেসব প্রতিষ্ঠান র‌্যাংকিং করতো, অ্যালেক্সা যাদের অন্যতম, তারা পদ্ধতি বের করলো কিভাবে এই খাতে আয় করা যায়।

প্রথমে র‌্যাংকিং বাড়ানোর ক্রেজ সৃষ্টি করে পরে সেই ক্রেজকে পুঁজি করলো অ্যামাজন.কম এর এই কোম্পানি অ্যালেক্সা।

সবাই চায় র‌্যাংকিং... র‌্যাংকিং....র‌্যাংকিং।
অ্যালেক্সা র‌্যাংকিং সাইট

তো নতুন নতুন টুলস বাজারে আনলো অ্যালেক্সা... এই খরচ করলে র‌্যাংকিং বাড়বে... ওই খরচ করলে র‌্যাংকিং বাড়বে এমন সব। এটা কেনো ওটা ডাউনলোড করো, ইত্যাদি।

ততদিনে বাংলাদেশে শুরু হলো আরেক নতুন ক্রেজ। ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠতে শুরু করলো অনলাইন। অনলাইন বা ওয়েব সাইট হলে ক্ষতি ছিলো না, এদের অধিকাংশই হয়ে উঠলো অনলাইন সংবাদমাধ্যম নামধারী। হাজার হাজার অনলাইন সংবাদমাধ্যম আত্মপ্রকাশ করলো।

অফিসের কেরানি, রাজনৈতিক দলের পাতিনেতা, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, অসাধু ব্যবসায়ী এদের অনেকেই রাতারাতি হয়ে উঠলেন অনলাইনের মালিক-সম্পাদক- সাংবাদিক। এরাই দলে দলে ছুটলেন সচিবালয়ে। শত শত জমা পড়লো অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডের আবেদন। ফলে সরকার হিমশিম খেয়ে বললো- অনলাইনের জন্য নীতিমালা করা হবে।

সে অন্য কিসসা। আলোচনা র‌্যাংকিংয়েই থাক।

এই যে শত শত অনলাইন তার মধ্যে কিছু কিছু সাইট ভালো চিন্তা থেকেও হলো। ফলে তাদের আগ্রহ ছিলো প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার। সেক্ষেত্রে তারা প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে ব্যস্ত হলেন। অনলাইনগুলোতে মোটামুটি নাম রয়েছে এমন কিছু মধ্যম গোছের সাংবাদিক কেউ সম্পাদক, কেউ উপদেষ্টা সম্পাদক, কেউ, বার্তাপ্রধান, কেউ এডিটর ইন চিফ এমন গালভরা পদবী ধারন করলেন। এরা মালিকের (সামান্য হলেও যারা অর্থ লগ্নি করেছেন তারাই তো মালিক) কাছে গিয়ে নানা স্বপ্ন দেখাতে শুরু করলেন। আমি অনলাইন সংবাদ মাধ্যমকে অন্যতম উচ্চতায় নিয়ে যাবো... এটা সেটা।

সে যাই হোক এই যে, অপরিপক্করা কিছু কিছু জায়গায় দায়িত্ব পেলেন তারা অনলাইন সাংবাদিকতাকে করলেন কলুসিত (তাদের নিজেদের ভাষায় নতুন উচ্চতায়)।

কিভাবে কলুসিত? সে প্রশ্ন আসবেই।

এই দলটি অনলাইন সাংবাদিকতাকে কাট-পেস্ট জার্নালিজমে পরিণত করলেন। সাংবাদিকতায় নতুন মাত্রা বটে! তবে তা কোনও সাংবাদিকতা নয়, স্রেফ চুরি। অন্যের কনটেন্ট চুরি করে নিজের নামে চালিয়ে দেওয়া।

মূলধারার একটি অনলাইনে (বাংলানিউজ ও বিডিনিউজ) কোনও খবর এলেই এরা তা কাট-কপি-পেস্ট করে হুবহু নিজেদের নামে প্রকাশ করতে থাকে এই গজিয়ে ওঠা সংবাদমাধ্যমগুলো।

চৌর্য্যবৃত্তির পাশাপাশি এরা আরেকটি বিষয় চালু করে তা হচ্ছে- নোংরা কনটেন্ট। বিছানায় স্ত্রীকে খুশি করার ১০ উপায়, পুরুষাঙ্গের আকার বড় করার উপায়, নায়লা নাঈমের রাতের ক্ষুধা, সানি লিওনের যৌনজ্বালা এমন সব আইটেম তারা সংবাদ মাধ্যমের নাম ধারণ করেও প্রকাশ করতে থাকে। যা মূলত ‘চটি’রই নামান্তর।

এরই মধ্যে বাংলাদেশে আরেকটি ট্রেন্ড শুরু হয়। দৈনিক প্রথম আলোর অনলাইনে এগিয়ে যাওয়া দেখে আরও কয়েকটি সংবাদপত্র (এখন প্রায় সবগুলো) তাদের অনলাইন ভার্সন চালু করে। এই সংবাদপত্রগুলো তাদের নিজেদের সংবাদপত্রের কনটেন্ট দিয়ে অনলাইনে জনপ্রিয়তা অর্জনে সচেষ্ট না হয়ে (যা প্রথমআলো করেছে) উল্টোপথে অর্থাৎ সস্তা জনপ্রিয়তার পথে হাঁটতে শুরু করে।

মূল সংবাদপত্রের কনটেন্ট দিয়ে যদি অনলাইনে পাঠক আকৃষ্ট করা যেতো তাহলে দেশের সবচেয়ে বেশি সার্কুলেশনের সংবাদপত্রটির অনলাইন র‌্যাংকিংয়ে পিছিয়ে থাকতো না।

এক্ষেত্রেও দেখা যায় কিছু কিছু সংবাদপত্র তাদের অনলাইনের দায়িত্বটি সেই সব বাকপটু  অর্বাচীনদের হাতে দিয়েছে, যারা সাইটকে অল্প সময়ে, স্বল্প ব্যয়ে, অল্প আয়েশে দেশের সেরা বানিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে মালিক পক্ষের দৃষ্টি কেড়েছে।

এক্ষেত্রে তাদেরও পথ একটাই ওই কাট-কপি-পেস্ট। নিজেদের সংবাদপত্রে যা কিছু প্রকাশিত হয় তা অনলাইনে খাবে না সেটা জানা। অনলাইনের জন্য চাই তাজা খবর। কনটেন্টের ভ্যারাইটি। সেক্ষেত্রে কাট-পেস্টই ভরসা। কারণ এদের সংবাদকর্মীরা দ্রুততর সময়ে খবর সংগ্রহ ও তৈরিতে আগ্রহী যেমন নয়, যোগ্যও নয়।

এর পাশাপাশি ওইসব গজিয়ে ওঠা অনলাইনের মতো এরাও ভরসা করলো সেই দশ উপায়, পাঁচ উপায়, রাতের ক্ষুধার মতো সুরসুরিমূলক কনটেন্টের ওপর। বলিউড হলিউডের কিছু কিছু নোংরা ছবি এরা প্রকাশ করতে থাকে। যা তাদের প্রিন্ট ভার্সনে না থাকলেও অনলাইনে জায়গা পায়।

এর পাশাপাশি এরা আরেকটি কাজ করলো তা হচ্ছে অর্থব্যয়।

আগেই বলেছি অ্যালেক্সাসহ র‌্যাংকিং ওয়ালারা ততদিনে অর্থ আয়ের ধান্ধা শুরু করেছে। সেই ধান্ধায় সাড়া দিয়ে এরা অর্থ খরচ করে র‌্যাংকিং বাড়ানোর কাজে নেমে পড়লো। আর তাতে সনৈ সনৈ করে র‌্যাংকিংয়ে এগিয়ে গেলো।

অ্যালেক্সা র‌্যাংকিং বাড়ে কিভাবে: আপনি ন্যুনতম ১৪৯ ডলার খরচে অ্যালেক্সা ভেরিফায়েড হবেন। আর প্রতিমাসে ওই অংক পরিশোধ করে তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলবেন। তবেই আপনার র‌্যাংকিং স্টেডি থাকবে। অ্যালেক্সা টুলবার ডাউনলোড করে নেবেন। আছে অ্যালেক্সা উইডগেট ডাউনলোড করবেন তাতে সুবিধা পাবেন। সেই উইডগেটও আবার অবসরে গেছে গত অক্টোবরে। কিন্তু এগুলো করলেই যে এগিয়ে যাবেন তা নয়- এরপরেও প্রতিমাসে আপনি অ্যালেক্সার অফার পেতে থাকবেন। এসইও অডিট রিপোর্ট, কি ওয়ার্ড রিসার্চ ফর এসইও সাকসেস, গেস্ট ব্লগিং, নিউ অপরচুনিটি, গ্রোথ অপরচুনিটি, মিসড অপরচুনিটিস এমন সব ক্যাচি শব্দে আপনাকে ই-মেইল পাঠাবে। এসব পেতে ডলার লাগে। খরচ করলে র‌্যাংকিং বাড়ে।

অ্যালেক্সা তার সাইটে কিভাবে র‌্যাংকিং বাড়বে সে জন্য কিছু হিতপোদেশও দিয়েছে। যার মধ্যে ইউনিক কনটেন্ট লেখার জন্য বলেছে, আরও বলেছে নিয়মিত কনটেন্ট লেখার জন্য। এছাড়াও সোশ্যাল মিডিয়ায় কনটেন্ট পোস্ট দেওয়ারও উপদেশ রয়েছে।

মজার ব্যাপার হচ্ছে এই হিতপোদেশের পর নিয়মিত কনটেন্ট না লিখেও কিভাবে র‌্যাংকিং বাড়ানো যায় তার জন্যও অফার রয়েছে, যা অর্থ খরচ করে পাওয়া সম্ভব। দেখবেন আপনার মেইল বক্সে এসে হাজির- নতুন কনটেন্ট না দিয়েও কিভাবে অরগ্যানিক ট্রাফিক বাড়ানো যাবে তার অফার।

এসব সুবিধা নিয়ে কনটেন্ট মূল্য থাক না থাক, র‌্যাংকিংয়ে তো এগিয়ে, এই বলে বাংলাদেশের একটি দল বুক চিতিয়ে দেশের অনলাইন জগতের সেরা বলে নিজেদের ঘোষণা দিতে শুরু করে।

আর এই ইঁদুর দৌড়ে সামিল না হয়ে র‌্যাংকিংয়ে পিছিয়ে পড়ে মূল ধারার অনলাইন সংবাদমাধ্যমগুলো।

তবে তাতে কিছু এসে যায় না, দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা যত বাড়বে অনলাইন সংবাদমাধ্যমের পাঠকও তেমনই বাড়তে থাকবে। মানুষ খবর জানতে চায়, যখনকার খবর তখনই। আর সে জন্য এখনো বাংলানিউজকেই খোঁজে। কারণ বাংলানিউজ ব্রেকিং নিউজ দেয়। এই সাইটে প্রতিদিন তিন শতাধিক আইটেম প্রকাশিত হয়। বহু বিষয়ের কনটেন্ট এখানেই পাওয়া যায়।  

র‌্যাংকিংয়ে এগুনো যে অর্থ খরচে সম্ভব সে তথ্য নেটিজেনদের জানা। ফলে হামবড়া ভাব নিয়ে লাভ নেই। নিজের কনটেন্টকে সম্মৃদ্ধ করতে হবে। তাতেই সত্যিকারের পাঠক মিলবে।

যারা ‘চটি’ জাতীয় লুজ কনটেন্ট দিয়ে জনপ্রিয়তা ধরতে চান, তাদের জন্য তথ্য হচ্ছে- ডিজিটাল নিউজ রিপোর্ট-২০১৬ নামে রয়টার্স সম্প্রতি একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে তাতে এসব কারণে সংবাদমাধ্যমের ওপর পাঠক আস্থা হারাচ্ছে বলেই তুলে ধরা হয়েছে।

র‌্যাংকিং বাড়ানোর প্রবণতারও সমালোচনা এখন চলছে ব্যাপক হারে। র‌্যাংকিং যারা করছে তাদেরও রয়েছে নানা অসাধু ব্যবস্থা (শর্ষের মধ্যেই ভূতের অবস্থান যেমন)। ফলে অ্যালেক্সায় ভরসা নয়। আর অ্যালেক্সার র‌্যাংকিংয়ে মন খারাপও নয়।

একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যম সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য কতগুলো কাজ করে যেতে হবে তাতেই পাঠকের আস্থা অর্জন করা যাবে, পাঠকপ্রিয়তা মিলবে। নিজের কনটেন্ট নিজেই তৈরি করা, কনটেন্টের ভ্যারাইটি নিশ্চিত করা। অনলাইন সংবাদমাধ্যমটিকে সত্যিকার অর্থে মাল্টিমিডিয়া হিসেবে গড়ে তোলা, যাতে ভিডিওতে দিতে হবে সবচেয়ে বেশি জোর। অ্যালেক্সা র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশে এখন কিন্তু ইউটিউবই এক নম্বরে, হয়তো বিশ্বেও।

আরেকটি তথ্য দিয়ে রাখি (নিঃসন্দেহে অবিশ্বাস্য)। বাংলাদেশে এখন ফেসবুকের চেয়েও র‌্যাংকিংয়ে এগিয়ে রয়েছে একটি সংবাদপত্র।

ফেসবুকে এই সংবাদমাধ্যমটির লাইক এক কোটি। অর্থ খরচ করলে ফেসবুকও এখন লাইক বাড়ায়, সে নিয়ে অন্য সুযোগে লিখবো।

গত আগস্টে বিটিআরসির একটি তথ্যে বলা হয়েছে-বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৬ কোটি ৪০ লাখ। অপর একটি খবরে এর আগে দেশের প্রধান ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার জানায় দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ৮০ শতাংশ ফেসবুক ব্যবহার করে। সেই হিসেবে ৫ কোটি ১২ লাখ বাংলাদেশি ফেসবুকে রয়েছে।

দেশের মানুষ ওই সংবাদপত্রটি বেশি পড়ে নাকি ফেসবুক বেশি দেখে সে প্রশ্ন করাই বাহুল্য। তাহলে বলাই যায় এসবই র‌্যাংকিংয়ের কারসাজি। ঘাবড়াবেন না।

বাংলাদেশ সময় ১২০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৬
এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।