সাহসী তরুণ আতিকুল ইসলাম ছিলেন খুলনার অসৎ লোকের আতঙ্ক। তিনি ছদ্মবেশে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতেন।
২০১৩ সালের জানুয়ারিতে খুলনা জেলায় যোগদান করেন আতিকুল ইসলাম। এক বছর ঢাকায় প্রশিক্ষণ নিয়ে সর্বমোট চার বছর খুলনায় পার করেন। এছাড়াও জেলা প্রশাসনের এনডিসি ও আরডিসিসহ অন্যান্য শাখায় দায়িত্ব পালন করেন।
খুলনায় দায়িত্ব পালনকালে মোবাইল কোর্ট আইন ২০০৯ এর তফসিলভুক্ত ৩৩টি আইনের আওতায় সর্বমোট ২১৫ দিন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন এ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। ২০১৪ সালে মোট ৪৪৮ জনকে দণ্ড প্রদান, ২০১৫ সালে ১৩৬ জনকে এবং ২০১৬ সালে ৩৭৮ জনসহ তিন বছরে সর্বমোট ৮১০ জনকে অর্থদণ্ড প্রদান করেন এবং বিভিন্ন অপরাধে সর্বমোট ১০২ জন অপরাধীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান করে মোবাইল কোর্ট আইনে সর্বমোট ৯১২ জন অপরাধীকে দণ্ড প্রদান করেন।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো লবণচরা এলাকায় অবস্থিত রাইসমিলে এবং দৌলতপুর ও বড়বাজারে চালের আড়তে প্লাস্টিকের বস্তার পরিবর্তে পাটের বস্তার ব্যবহার নিশ্চিত করায় কার্যকরী ভূমিকা রাখেন। ফুলবাড়িগেট, খুলনা শিশু হাসপাতাল এবং হেরাজ মার্কেটে অবস্থিত ওষুধের ফার্মেসিতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ, ওষুধ অধিদপ্তরের অনুমোদনহীন ওষুধ, ফিজিশিয়ান স্যাম্পল বিক্রি এবং অনুমোদনহীন পট বা ফুড সাপ্লিমেন্ট বিক্রি বন্ধে ভূমিকা রাখেন।
চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশের অপরাধে একইদিনে ৫ জনকে কারাদণ্ড প্রদান করে এবং ৯০ মণ চিংড়ি বিনষ্ট করে পুশ বন্ধে ভূমিকা রাখেন। গত ঈদ-উল ফিতরে খুলনা শহরের বিভিন্ন শপিংমলে অতিরিক্ত মূল্যে পোশাক বিক্রির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আবুল ব্রাদার্সসহ নিউ মার্কেটের বিভিন্ন দোকানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করলে পোশাকের দাম কমে আসে এবং জনমনে স্বস্তি দেখা দেয়।
এছাড়াও খুলনা মহানগরীর সেইফ অ্যান্ড সেইভ, মিষ্টিমহল, সাতক্ষীরা যাদব ঘোষ ডেয়ারিসহ বিভিন্ন হোটেল-রেস্টুরেন্ট, মিষ্টির কারখানায় মোবাইল কোর্ট করে আলোড়ন সৃষ্টি করেন এবং সেগুলোর পরিবেশ উন্নত ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখেন। গত রোজায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও ভেজাল প্রতিরোধের লক্ষ্যে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন। গত কোরবানির ঈদে রুপসাঘাটে মাইক্রোবাসে যাত্রীদের কাছ থেকে ৩০০ টাকার ভাড়া ৬০০ টাকা আদায় করায় মোবাইল কোর্ট করে দণ্ড প্রদান করেন। এর ফলে দেশের বিভন্ন স্থানে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়কারীদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা শুরু করে। এছাড়াও খুলনা মহানগরী ও জেলায় ফিটনেসবিহীন বাস এবং অতিরিক্ত যাত্রী বহনকারী মাহিন্দ্রা সিএনজিতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন।
খুলনায় আসার পর জনবান্ধব এ মানুষটি খুলনায় বাংলানিউজের প্রতিনিধি খুঁজে ফোন দিয়ে পরিচিত হন। অনেক সময় নিজেই অভিযানের ছবি তুলে ও তথ্য লিখে পাঠিয়েছেন। দীর্ঘদিন এ মানুষটিকে দূর থেকে, কাছ থেকে দেখছি। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একই রকম ছিলেন। সদা নম্র, ভদ্র, বিনয়ী, নরম সুরের দিলখোলা, সৎ-সজ্জন, অতিথিপরায়ণ এ মানুষটি খুলনায় কাজের সময় শেষ করে সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় ঢাকায় ন্যাস্ত হয়েছেন। সোমবার (২ জানুয়ারি) খুলনা জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান তার কার্যালয়ে আতিকুল ইসলামকে বিদায়ী সংবর্ধনা জানান।
খুলনা থেকে আতিকুল ইসলামের বিদায় অসৎ লোকের কাছে আনন্দের হলেও সচেতনমহলের কাছে অত্যন্ত বেদনার।
আতিকুল ইসলাম বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার গারুড়িয়া ইউনিয়নের চরসমসদি বালিগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অনার্স এবং মাস্টার্স শেষ করে ৩১তম বিসিএসে উত্তর্ণী হয়ে কর্মজীবন শুরু করেন।
প্রশাসনের একজন বলিষ্ঠ দেশপ্রেমিক এবং আদর্শবান মানুষটি আশা করি তার নতুন কর্মস্থানেও জ্ঞান-গরিমা, মনন-মেধা, প্রজ্ঞা-পাণ্ডিত্য দিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে ভালো কাজের অগ্রপথিক হবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০১৬
এমআরএম/জেডএস