ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

ম্যাজিস্ট্রেটে মুশকিল-আসান শাহজালাল বিমানবন্দরে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৭
ম্যাজিস্ট্রেটে মুশকিল-আসান শাহজালাল বিমানবন্দরে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর/ফাইল ফটো

ব্যক্তিগত প্রয়োজনে প্রায়ই সিলেট থেকে ঢাকা যাতায়াত করা হয় প্লেনে। নিয়মিত যাতায়াতে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্পর্কে জন্ম নিয়েছে নতুন ধারণা। অবশ্য ধারণা না বলে এটাকে বাস্তবতা বলাই শ্রেয়। পাঁচ বছর আগে-পরের হিসাব মেলালে বলতে হবে এখন অনেক বন্ধুভাবাপন্ন বিমানবন্দরে কর্মরতরা। আর এর মূলে রয়েছেন দুজন ম্যাজিস্ট্রেট। নিয়মিত যাতায়াতের অভিজ্ঞতা থেকে অন্তত ব্যক্তিগতভাবে এমনটাই মনে হয়েছে আমার।

এই দুই ম্যাজিস্ট্রেটের নাম মো. ইউসুফ ও শরীফ মো. ফরহাদ হোসেন।

এখন বিমানবন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে সেবামূলক মনোভাব লক্ষ্যণীয়।

তারপরও কোনো বিষয়ে সেবা পেতে অসুবিধার সম্মুখীন হলে আছেন দুজন মুশকিল-আসান ম্যজিস্ট্রেট। সহায়তা চাইলেই পাওয়া যায় তাদের কাছে।

একটি ঘটনা বলি। প্রায় ৬ মাস আগে বাংলাদেশ বিমানের সকালের একটি ফ্লাইটে সিলেট থেকে ঢাকা যাই এবং ঢাকার কাজ শেষ করে একইদিনের বিকেলের অন্য একটি ফ্লাইটে চট্টগ্রাম যাওয়ার জন্য বিমানবন্দরে যাই। গিয়ে শুনি ফ্লাইট বাতিল হয়ে গেছে। জরুরি কাজের শিডিউল ব্রেক হওয়ার শঙ্কায় মাথায় বাজ!

তখন সেলসম্যান বললেন আপনাকে ৪ ঘণ্টা পর আমাদের অন্য ফ্লাইটে দিয়ে দেবো। তবে আরও একটি কথা আছে। চিটাগাং থেকে আপনার আগামীকালের ফ্লাইটিও বাতিল হয়ে গেছে।

তখন সেলসম্যানের পাশে দাড়ানো বিমানের ফ্লাইট অপারেশন বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আমার দিকে ধমক দিয়ে তেড়ে আসেন। সবশেষে বলি, আপনি আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছেন। এজন্য আমি এই মুহূর্তে বিমানবন্দর ম্যাজিস্ট্রেটকে কল করছি। তারপর ম্যাজিস্ট্রেট ফোন ধরেন এবং আমি সবকিছু ওনাকে বলি। তখন ম্যাজিস্ট্রেট আমার কাছে জিজ্ঞাসা করেন, আপনি ওনার নামটা জেনে আমাকে বলেন। তখন আমি ওই লোকের কাছে গিয়ে নাম জিজ্ঞাসা করতেই দৌড় দিয়ে এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে যান।

পরে ম্যাজিস্ট্রেটকে বলি, উনি বুঝতে পেয়ে ভয়ে এয়ারপোর্ট থেকে দৌড় দিয়ে বের হয়ে গেছেন। তখন বলেন, কোনো অসুবিধা নেই, আমরা সিসি ক্যামেরা দেখে ওনাকে খুঁজে বের করবো। যাইহোক তারপর বিমানের ওই সেলসম্যান আমার কাছে মাফ চান টিকিটের ব্যবস্থা করে দেন।

এরকম আরও অনেক ঘটনা রয়েছে ম্যাজিস্ট্রেটকেন্দ্রিক।

এবার অন্য একটি ঘটনা বলি। গত কয়েক মাস আগেও পরিবার নিয়ে সন্ধ্যা ৬টার ফ্লাইটে ঢাকা থেকে সিলেট আসবো। বিকেল ৫টায় এয়ারপোর্ট গিয়ে বোর্ডিং পাস নিয়ে ভিতরে বসে থাকি। আমাদের ফ্লাইট নম্বর ছিল বিজি-৬০৩। তবে বিজি-৬০৩ এর আগে সিলেটগামী আরও দুটি ফ্লাইট ছিলো। যার ফ্লাইট নম্বর হল বিজি-৬০১ ও ৬০২ এবং সময় ছিল যথাক্রমে ৫টা ৩০ ও ৫টা ৪৫। তখন বিমানের কর্মকর্তারা প্রথমে বিজি-৬০১ ও পরে বিজি-৬০২ এর যাত্রীদের ডেকে নিয়ে গাড়িতে তোলেন। আমরাও অপেক্ষা করছিলাম কখন আমাদের ডাকা হবে।

আমাদের ফ্লাইটের সময় যখন একদম কাছাকাছি, তখন বিমানের কাউন্টারে গিয়ে বলি আমাদের ফ্লাইট বিজি-৬০৩ কি ডিলে? তখন উল্টো জিজ্ঞাস করা হয় আমাদের ডাকা হয়েছে কিনা। আমি বলি না। তখন তারা বলেন, তাড়াতাড়ি ভিতরে গিয়ে আমাদের লোককে জানান। আমিও ভিতরে গিয়ে যিনি বোর্ডিং পাস দেখে যাত্রীদের গাড়িতে তোলেন তাকে বলি। প্রথমে উনি না দিতে চাইলেও পরে নিজে গাড়িতে করে নিয়ে আমাদের ফ্লাইটে তুলে দেন।

এখন বিমানবন্দর হকারমুক্ত। ফলে যাত্রীদের ল্যাগেজ নিয়ে আর কেউ টানাটানি করতে পারে না। বরং এখন দেখা যায় বিমানবন্দরে কোনো কিছু ভুলে ফেলে এলে বিভিন্ন সংস্থার লোক ওইসব মালামাল প্রকৃত মালিককে ফেরত দেন। যার মধ্যে দামিদামি মোবাইল, ল্যাপটপ, ল্যাগেজসহ অনেক কিছুই থাকে।

আর ইমিগ্রেশনের কথা বললে বলা যায়, আমি নিজে দেখেছি প্রায় ৪শ যাত্রীর ইমিগ্রেশন মাত্র ৩০ মিনিটে সম্পূর্ণ হয়েছে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল। আমি তাও দেখেছি ল্যান্ড করার ২০-২৫ মিনিটের মধ্যে যাত্রীরা ইমিগ্রেশন শেষ করে ল্যাগেজ নিয়ে বের হতে পারছেন।

ল্যাগেজ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে কিছুটা দেরির সমস্যা এখনও রয়ে গেছে। এমন সামান্য কিছু বাদ দিলে শাহজালালের পরিষেবা এখন আগের চেয়ে ভালো বলেই প্রতীয়মান হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৭
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।