মিডিয়াগুলোও তার খবরে বিষয়টি স্পষ্ট না করে বিনা কারনে ভয় ঢুকিয়ে দিচ্ছে। যা অমূলক।
প্রথমেই বলতে চাই সরকার আগেও ব্যাংক হিসাব থেকে আবগারি শুল্ক কেটে নিত। এটা নতুন কোন বিষয় না। এবছর কিছু বিষয় সমন্বয় করা হয়েছে। বলা হয়েছে বছরের কোনও একটি দিনেও যদি ব্যাংকে ১ লাখ টাকার উপরে এবং দশ লাখ টাকার নিচে অর্থ জমা থাকে তাহলে অ্যাকাউন্ট থেকে ৮০০ টাকা আবগারি শুল্ক বাবদ কেটে নেওয়া হবে।
বাজেট এখনো প্রস্তাবিত। পাশ হয়ে গেলে জুলাইয়ের ১ তারিখে ২০১৭-১৮ অর্থবছর শুরু হলে এই শুল্ক প্রযোজ্য হবে। তার আগে পর্যন্ত প্রচলিত ব্যবস্থায় এই ব্যাংক হিসাবের আবগারি শুল্কের চিত্রটি এমন:
হিসাবে ২০০০০/- (বিশ হাজার টাকা)’র কম থাকলে শুল্ক মুক্ত। কোন টাকা দিতে হয় না। হিসাবের স্থিতি ২০০০১ (বিশ হাজার এক টাকা) থেকে ১০০০০০ (এক লাখ) টাকার মধ্যে হলে শুল্ক ১৫০/- (একশত পঞ্চাশ টাকা) ৩. ১০০০০১ (এক লাখ এক টাকা) হতে ১০০০০০০ (দশ লাখ) টাকা মধ্যে জমা থাকলে শুল্ক বাবদ কাটা হচ্ছে ৫০০ টাকা।
নতুন বাজেট প্রস্তাবে প্রথম ও দ্বিতীয় স্ল্যাবটি এক করে বলা হয়েছে হিসাবে ১০০০০০ টাকার নিচে যে কোনও অংক পর্যন্ত শুল্কমুক্ত হবে। অর্থাৎ দ্বিতীয় স্ল্যাবে এতদিন ১৫০টাকা শুল্ক দেওয়া লাগতো যা এই বছর শুল্ক মুক্ত করা হলো। আর যাদের ১০০০০১ (এক লাখ এক টাকা) থেকে ১০০০০০০ (দশ লাখ টাকা) পর্যন্ত ব্যাংকে জমা থাকবে তাদের হিসাব থেকে বছরে ৮০০/- (আটশত টাকা) শুল্ক বাবদ কাটা হবে।
সে বিবেচনায় সরকার এক লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যাংক হিসাবে জমা থাকলে তা শুল্কমুক্ত করেছে। আর এক লাখের উপরে থেকে শুরু করে যাদের ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যাংকে জমা থাকবে তাদের আবগারি শুল্ক ৫০০ টাকার সাথে ৩০০ টাকা বাড়িয়ে ৮০০ টাকা করা হয়েছে।
এ অবস্থায় ব্যাংকে টাকা রাখাই দায়, ব্যাংকে টাকা রাখলে বিপদ, ব্যাংক টাকা রাখলেই ক্ষতি বলে যে কথাগুলো বলা হচ্ছে তা ভুল ও অতিকথন। যার মাধ্যমে জনমনে আতঙ্কই ছড়ানো হচ্ছে।
অনেকেই বলছেন, স্বল্প আয়ের মানুষের ওপর আবগারি শুল্কের বোঝা চাপানো হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে মানুষের আয় যেহেতু আগের তুলনায় বেড়েছে এবং তাদের হাতে কিছু টাকা থেকে যায় যা ব্যাংকে থাকে সে বিবেচনা থেকেই হয়তো এবারের বাজেটে শুল্কমুক্ত সুবিধার সিলিংটি ১ লাখ পর্যন্ত করে দেওয়া হয়েছে। যা আগে ছিলো মাত্র ২০০০০ টাকা।
অর্থনীতির অল্প জ্ঞানও যারা রাখেন তাদের পক্ষে ব্যাংকের সুদের হার কমিয়ে দেয়া এবং শুল্ক/কর বাড়িয়ে দেয়ার কারণটি কি তা অজানা থাকার কথা নয়।
এটা স্রেফ এই কারণেই যে ব্যাংকে যেনো অলস জমা পড়ে না থাকে। এতে বিনিয়োগের জন্য একধরনের চাপ সৃষ্টি হয়। সরকারের এই উদ্যোগের কারণেই গত কয়েক বছরে ব্যাংকগুলোতে সুদের হারও কমেছে। কমেছে সঞ্চয়পত্র সুদের হার। এর ফলে, জনগন ব্যাংকের বাইরে অন্যকোন লাভজনক খাতে বা ব্যবসায় বিনিয়োগ বাড়ানোর চেষ্টা করে। বিনিয়োগের নতুন ক্ষেত্রে খোঁজে।
সরকার চায় জনগণ অলস আয়ের মনোবৃত্তি থেকে বেরিয়ে আসুক। টাকায় টাকা আনে এই ধারণা তখনই প্রযোজ্য যখন তা বিনিয়োগ করা হয়। ঝুঁকি নেওয়া হয়। অলস অর্থ ব্যাংকে ফেলে রেখে নিশ্চিন্তে যারা বসে থাকতে চান, সরকার তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে চায় বিনিয়োগে। এতে অর্থনীতি সচল হয়, আর দেশের উন্নতি ত্বরান্বিত হয়।
আর অর্থব্যবস্থাকে শাসন করার একটা সাধারণ কৌশলও এটা।
তবে এটাও ঠিক যে, অর্থ ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে গেলে মুদ্রাস্ফীতির সম্ভাবনা প্রবল হয়। এই ঝুঁকিটা থেকে যায়। আবার শেয়ার বাজারের মতো ফটকা বাণিজ্যের ঝুঁকিও থাকে। তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে লগ্নিকারকরা। কিন্তু তাই বলে অর্থ অলস ফেলে রাখলেও কোনও কাজে আসে না। এজন্য বিনিয়োগকারীদের সচেতন বিনিয়োগ জরুরি।
একটি প্রধানসারির সংবাদপত্রে দেখলাম আবাগারী শুল্ক নিয়ে প্রকাশিত নিবন্ধে লেখক ব্যাংক লুটপাটের দুর্নীতির সাথে শুল্ককে মিলিয়ে ফেলেছেন। অথচ আবাগারি শুল্ক (এক্সাইজ ডিউটি), সোর্স ট্যাক্স (আয়কর), ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) এই তিনটি কর ব্যাংক আদায় করলেও তা সরাসরি সরকারের রাজস্ব হিসাবে জমা হয়।
এটা ব্যাংকের আয় নয়, এমনকি আমানতও নয়। এর সাথে লুটপাটের সম্পর্ক নেই।
এমন হুজুগে কিছু লেখা মূল ধারার সংবাদমাধ্য লিখছে। আর সামাজিক মিডিয়ার তো কথাই নেই। সেটিতো সবার জন্য খোলা। যে যার মতো করে যা খুশি তাই লিখে চলেছেন।
আমরা মিডিয়ার কাছে আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশা করছি। আবগারি শুল্ক নিয়ে সরকারের পদক্ষেপটি সাধারণ মানুষের ওপর কতটা প্রভাব ফেলবে তার সঠিক বিশ্লেষণ মিডিয়া প্রকাশ করলে তাতে ভুল ধারনার অবসান ঘটবে।
বাংলাদেশ সময় ১২২২ ঘণ্টা, জুন ০৩, ২০১৭
এমএমকে