স্বাধীনতার আগে ও পরে ঢাকা চলচ্চিত্রের প্রথম মেগাস্টার রাজ্জাক। জুটি গড়ার দক্ষতায় তিনি অনেক নায়িকার সঙ্গে উপহার দিয়েছেন স্মরণীয় অনেক চলচ্চিত্র।
বিতর্ক, স্ক্যান্ডাল, অপরিমিতিবোধ যেখানে চলচ্চিত্রে নিত্যসঙ্গী, সেখানে রাজ্জাকের ছিল পরিচ্ছন্ন ইমেজ। ভুলেও তার সম্পর্কে কালিমা লিপ্ত প্রতিবেদন প্রকাশের সুযোগ পায় নি কোনো সাংবাদিক। রাজনীতি বা দলাদলি থেকেও তিনি ছিলেন বহু দূরে। প্রকৃত পেশাজীবী অভিনেতা বা প্রফেশনাল বলতে যা বোঝায়, তিনি ছিলেন তা-ই। স্ত্রী লক্ষ্মীকে নিয়ে সুখের স্বচ্ছ জীবন-যাপন করেছেন তিনি। চলচ্চিত্রের মানুষদের সামনে অম্লান আদর্শ তিনি।
জীবনে একটি মাত্র বিতর্ক তাকে নিয়ে হয়েছিল বলে স্মৃতি থেকে বলতে পারি এবং সেটাও ছিল খুবই ভুল বোঝাবুঝি থেকে। খোকা ভাই আহমেদ জামান চৌধুরী তখন ‘চিত্রালী’র দাপুটে সম্পাদক। স্মরণীয় সম্পাদক এস.এম. পারভেজের মৃত্যুর পর খোকা ভাই দেশের তৎকালীন শীর্ষ বিনোদন সাপ্তাহিকের হাল ধরেন। আশি দশকের শেষ দিকে সম্পাদক খোকা ভাইয়ের সঙ্গে নায়করাজ রাজ্জাকের একটি তিক্ত ঘটনা ঘটে। কিন্তু রাজ্জাকের বিচক্ষণতা ও মানবিকতায় ঘটনাটি বেশি দূর যেতে পারে নি। শান্তিপূর্ণ ও সম্মানজনক সমাধানের জায়গায় পৌছে গিয়েছিল। খোকা ভাই আগেই প্রয়াত হয়েছেন, আজ হলেন নায়করাজ রাজ্জাক। কিন্তু তারা যে বড়ত্ব ও উদারতার ছাপ রেখে গেছেন, সেটা অনাগতকালের শিল্পী-অভিনেতাদের জন্য অনুকরণীয় হয়ে থাকবে।
কঠোর পরিশ্রম করে রাজ্জাক নিজের জায়গা করে নিয়েছিলেন। কলকাতা থেকে এক প্রকারের খালি হাতে তিনি এসেছিলেন ঢাকায়। জহির রায়হান, খান আতাউর রহমান, কাজি জহিরের স্নেহ পেয়েছিলেন। সুযোগ পেয়ে নিজের দক্ষতার প্রমাণও পেশ করেন তিনি। বাংলাদেশের এক নম্বর নায়কের জায়গাটি পাকা করেছিলেন স্বকীয় যোগ্যতায়। পেশা ও সমাজ জীবনে হয়েছিলেন শতভাগ সফল। পরিশ্রম, নিষ্ঠা, অধ্যাবসায় থাকলে যে জীবনে শূন্য থেকে শীর্ষদেশ পর্য়ন্ত পৌছা যায়, রাজ্জাক তার প্রমাণ। পরিমিতিবোধ ও মিতাচার থাকলে যে ম্যারাথন দৌড়ের মতো বহু বছর সম্মানের সঙ্গে টিকে থাকা যায়, নায়করাজ রাজ্জাক নিজের জীবন ও কাজে সে প্রমাণও দিয়েছেন।
রূপালি জগতের চটক ও চমক এবং ছোট ও বড় পর্দার জৌলুস আজকাল যেভাবে পেশাজীবনের শুরুতেই নতুন নায়ক ও নায়িকাদের লাগামছাড়া করছে এবং সম্ভাবনা থাকার পরেও অবিমিষ্যকামিতার জন্য মাঝপথেই নিঃশেষ করে দিচ্ছে, তারা নায়করাজ রাজ্জাকের পরিশ্রমী ও শুদ্ধ জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করলে উপকৃত হবেন। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে বিরাট বড় এক নক্ষত্রের বিদায় ঘটলো। কিন্তু এটাও সত্য যে, মৃত্যুতেই তিনি নিঃশেষ হয়ে যাবেন না। বহুকাল ঢাকার চলচ্চিত্র ও দর্শকরা মনে রাখবে নায়করাজ রাজ্জাককে। তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। কামনা করি বিদেহী আত্মার শান্তি ও কল্যাণ।
ড. মাহফুজ পারভেজ, কবি-লেখক-গল্পকার। অধ্যাপক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১৭
জেডএম/