রোববার (২৭ আগস্ট) দুপুরে চট্টগ্রামের রেডিসন হোটেলে ‘উন্নয়নের মহাসড়কে চট্টগ্রাম, নাগরিক দুর্ভোগ, সমন্বয় ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক আয়োজন করে বাংলানিউজ। এতে রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন সংস্থার কর্ণধার, সাংবাদিক, প্রশাসন, ব্যবসায়ীসহ চট্টগ্রামের নীতি প্রণয়ন ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়।
এতে বাংলানিউজের এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেনের সভাপতিত্বে গোলটেবিল থেকে বেশ কিছু তাৎপযর্পূণ পথ নির্দেশনা বের হয়ে আসে, যা উন্নয়নের মহাসড়কে চট্টগ্রামের গতিশীল অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বিত করবে।
‘সমন্বয় হলে সমস্যা সমাধান সময়ের ব্যাপার মাত্র’
বাংলানিউজের গোলটেবিল আলোচনা থেকে চট্টগ্রামের উন্নয়নে নিয়োজিত বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতার কথা ওঠে আসে। গুরুত্ব দেওয়া হয় সকলে এক সাথে বসে মিলিতভাবে কাজ করার। চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য দৃঢ় রাজনৈতিক অঙ্গীকারের প্রতিও গুরুত্বারোপ করা হয়। অভিযোগ আসে যে, অনেক কিছুই শুরু করা হয়, কিন্তু সেসব শেষ করা হয় না। দূরদৃষ্টিসম্পন্ন পরিকল্পনা ও চৌকস বাস্তবায়ন প্রচেষ্টার কথাও বলা হয়। সঠিক সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের তাগিদও দেওয়া হয়। জলাবদ্ধতা, যানজট, নদী-খাল দখল, পাহাড় কর্তন ইত্যাদি সমস্যার পেছনে অসাধু চক্র ও অবৈধ যানবাহনের তথ্যও আলোচনায় বের হয়ে আসে। মোটের উপর নাগরিক সমস্যা, সমন্বয়হীনতা ইত্যাদির পেছনে কার্যকর প্রায়-সকল কারণই উন্মোচিত হয় এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছা নিয়ে সমন্বিতভাবে উন্নয়ন কাজ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি বিশেষ তাগিদও দেওয়া হয় বাংলানিউজ আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনা থেকে।
এ কথা সত্য যে, উন্নয়নের জন্য চট্টগ্রামে বিশেষ বরাদ্দ ও নানা প্রকল্প দেওয়া হলেও চট্টগ্রামের জনদুর্ভোগের শেষ হচ্ছে না। সমন্বয়হীনতা, সঠিক সময়ে কাজ শেষ না করা, অনেক কাজ শুরু করে যথাসময়ে শেষ করতে না পারা ইত্যাদি নানা সীমাবদ্ধতায় বিদ্যমান নাগরিক সমস্যা লাঘব হচ্ছে না। ফলে উন্নয়নের মহাসড়কে চট্টগ্রামের গতিবেগও বৃদ্ধি পাচ্ছে না। বরং জলাবদ্ধতা ও যানজটে থমকে থাকছে মহানগরী।
একবিংশ শতাব্দীর উন্নত বাংলাদেশ গড়তে হলে চট্টগ্রামের মতো গুরুত্বপূর্ণ নগরীকে থমকে থাকলে চলবে না। উন্নয়নের মহাসড়কে তীব্র গতিবেগে চলতে হবে। বাংলানিউজের গোলটেবিল আলোচনার মাধ্যমে নাগরিক সমস্যাগুলো অতি দ্রুত দূরীভূত করে উন্নয়নে গতিবেগ সঞ্চারের প্রণোদনাই উচ্চারিত হয়েছে। পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয় সাধন করে কাজ করবার একটি পথও দেখানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত বলা দরকার যে, বর্তমান সময়ে বিশ্বব্যাপীই গণমাধ্যমের একটি সামাজিক দায়বদ্ধতার কথা আলোচিত হচ্ছে। শুধু সংবাদ সরবরাহ করাই নয়, গণমাধ্যম এখন উন্নয়ন ও নাগরিক অধিকারের মুখপত্রও বটে। বাংলাদেশের প্রথাগত প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াগুলো সামাজিক দায়বদ্ধতা পালনের ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকলেও এক্ষেত্রে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম বাংলানিউজ। বাংলানিউজ পাঠকের সামনে যেমনিভাবে সংবাদের বহুমাত্রিক রূপটিকে তুলে ধরে এবং অদেখা-অজানা জনগুরুত্বপূর্ণ সংবাদটিকেই জানানোর দায়িত্ব পালন করে; তেমনিভাবে বৃহত্তর পাঠক সমাজের সমস্যা ও দুর্ভোগ লাঘবের পথটিও খুঁজে বের করতে চায়। এই দায়বদ্ধতা ও দায়িত্ব থেকেই বাংলানিউজ অতীত ও বর্তমানে পরিবেশ, প্রকৃতি, বৃক্ষ, পুষ্প, বিহঙ্গ, প্রাকৃতিক ভারসাম্যসহ মানব জীবন-যাপনের জন্য প্রয়োজনীয় অনুসঙ্গগুলোকে অগ্রাধিকারের জায়গায় স্থান দিয়ে চলেছে।
বাংলানিউজের বিশিষ্টতা ও বহুমাত্রিকা নিহিত রয়েছে জীবন ও জগত সম্পর্কে প্রসারিত দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে। যে কারণে লাউয়াছড়ার বনের পাশে একটি অজগর রেলে কাটা পড়ে মারা গেলে বাংলানিউজ ঠিকই সে খবরটিকে গুরুত্ব দেয়। জলাশয়ে কোনও বিরল প্রজাতির মাছের মৃত্যু হলে সচকিত হয়। ঈদের বাজারে কৃত্রিমভাবে মোটা-তাজা করা গরুর মাধ্যমে সৃষ্ট সমস্যাকে ঠেকাতে চায়। এদেশের খামারিদের স্বার্থের পক্ষে দাঁড়ায়। মানুষের স্বাস্থ্য ও শিক্ষার অধিকারকে এগিয়ে নিতে চায়। এভাবেই আন্তর্জাতিক বা জাতীয় সংবাদ প্রবাহের গতানুগতিক ধারার বাইরে মানব স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সংবাদগুলোকে প্রাধান্য দেওয়ার মাধ্যমে বাংলানিউজ পরিণত হয়েছে বিশ্বব্যাপী বাংলাভাষি মানুষের প্রথম পছন্দের সংবাদ মাধ্যম এবং প্রধানতম-দ্রুততম সংবাদ উৎস।
চট্টগ্রামকে নাগরিক সমস্যা থেকে মুক্ত করে উন্নয়নের মহাসড়কে তীব্রবেগে চালিত করার জন্য বন্ধু ও সহযোগীর মতো এগিয়ে এসেছে বাংলানিউজ। বাংলানিউজের ‘চট্টগ্রাম প্রতিদিন’ পাতায় প্রতি মুহূর্তে নগরের সকল খবর আর স্বার্থের বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। পেশাগত দিক থেকেই চট্টগ্রামের সঙ্গে বাংলানিউজের সম্পর্ক ও সংযোগ নিবিড়, আন্তরিক।
বাংলাদেশে অনলাইন সাংবাদিকতার পথিকৃৎ, বাংলানিউজ-এর এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেন চট্টগ্রামকে অভিহিত করেছেন ‘ভালোবাসার শহর’ নামে। চট্টগ্রামের প্রতি হৃদয়ের গভীর থেকে উৎসারিত ভালোবাসার টানে বাংলানিউজ সিক্ত। যেজন্য চট্টগ্রামের প্রয়োজনে বাংলানিউজ সব সময়ই পাশে থাকে। বার বার এগিয়ে আসে চট্টগ্রামের নানা সমস্যা দূরীকরণের জন্য। উন্নয়নের মহাসড়কে চট্টগ্রামের গতিশীলতা বৃদ্ধিতে প্রণোদনা জাগায়। মনে প্রাণে, চিন্তায় চেতনায়, কাজে ও তৎপরতায় বাংলানিউজ চট্টগ্রামের উন্নয়নের প্রকৃত সহযাত্রী এবং বিশ্বস্ত বান্ধব।
ড. মাহফুজ পারভেজ: কবি-গল্পকার-গবেষক। অধ্যাপক, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
বাংলাদেশ সময়: ১০০৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০১৭
জেডএম/