একুশ শতকের অভিযাত্রায় দিনবদল ও জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার একজন কাণ্ডারী। তার জন্মদিন ২৮ সেপ্টেম্বর (শনিবার)।
১৯৪৭ সালের এই দিনে (২৮ সেপ্টেম্বর) বর্তমানে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গীপাড়া গ্রামে তার জন্ম হয়। তার বাবা বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখন কলকাতায় ভারত ভাগের পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও দাঙ্গা প্রতিরোধ এবং লেখাপড়া নিয়ে ব্যস্ত।
দাদা ও দাদীর স্নেহ-আশীর্বাদ নিয়ে শুরু হয় শেখ হাসিনার জীবন। দাদা তার নাম রাখেন ‘হাসিনা’। এভাবেই দিন যাচ্ছে, বাবা শেখ মুজিব তখনও মেয়েকে দেখেননি। মমতাময়ী মা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছার স্নেহেই বেড়ে ওঠছেন তিনি।
প্রথম সন্তান মেয়ের জন্মের খবর পেয়ে হঠাৎ একদিন বাড়ি আসেন বাবা শেখ মুজিব। বাড়ি এসে মেয়েকে কোলে তুলে নিয়ে ‘হাচুমণি’ ডেকে আনন্দ প্রকাশ করেন; ছোট্ট পরীর কপালে এঁকে দেন স্নেহের চুম্বন।
সুযোগ্য পিতার যোগ্য কন্যা। বঙ্গবন্ধুর আদরের সেই ছোট্ট ‘হাচুমণি’ই বড় হয়ে বাংলাদেশের জনমানুষের প্রিয় নেত্রী হয়ে ওঠলেন। এখন তিনি বিশ্বেও প্রভাবশালী নারী শাসকদের মধ্যে অন্যতম একজন দক্ষ রাষ্ট্রনায়ক। আর সেটা নিজের প্রজ্ঞা, বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত ও চিন্তা-চেতনায় ধীরে ধীরে বিশ্বনেত্রীর মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হয়েছেন শেখ হাসিনা।
আবহমান বাঙলার আর দশটি গ্রামের মতোই সুন্দর ছিল টুঙ্গীপাড়ার গ্রাম। গ্রামের নদী-নালা-খাল-বিলের স্রোতের শব্দ এবং সবুজ প্রকৃতির গন্ধ মেখে কেটেছে শেখ হাসিনার শৈশবের দিনগুলো। সেখানেই শুরু হয় তার প্রথম পাঠের। এরপর ১৯৫৪ সালে তার বাবা যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভায় জায়গা পেলে তারা চলে আসেন ঢাকায়। এরপর ঢাকার স্কুলে, কলেজে ও বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন শেখ হাসিনা।
রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম ও বেড়ে ওঠায় কাছ থেকেই দেখেছেন বাংলাদেশের জন্মসহ বৈশ্বিক সব ঘটনাবলী। মানুষের কথা বলতে গিয়ে বাবা শেখ মুজিবকে প্রায়ই বন্দি করে রাখা হতো কারাগারে।
সেই সময়ে মা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ছায়াসঙ্গী হয়ে পিতার রাজনৈতিক জীবনকে খুব ঘনিষ্ঠভাবে দেখেছেন তিনি। আর নিজেকে ওতপ্রোতভাবে রাজনীতিতে জড়িয়ে ফেলেন। ছিলেন ইডেন কলেজ ছাত্রসংসদের নির্বাচিত ভিপি।
স্বাধীন দেশে বঙ্গবন্ধু দেশ গড়ার কাজে ব্যস্ত। তার পাশে থেকে সহযোগিতা করেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। এর মাঝে ওই সময়ে জার্মানিতে অবস্থান করা স্বামী প্রখ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানী ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে দেখা করতে যান শেখ হাসিনা। তার সঙ্গে ছিলেন ছোটবোন শেখ রেহানাও।
তাই পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট কালরাতের স্বাধীনতা বিরোধী ও ক্ষমতালিপ্সুদের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেয়ে যান তারা। কিন্তু জাতির পিতা শেখ মুজিব ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছার সঙ্গে প্রাণ দিতে হয় শেখ হাসিনার ভাইসহ স্বজনদের। রেহাই পায়নি ১০ বছরের ছোট্ট শিশু শেখ রাসেলও।
শোকাবহ এ ঘটনা শেখ হাসিনার জীবনে অনেক বড় একটি বেদনাদায়ক ঘটনা, এক গভীরতম ট্র্যাজেডি। ওইদিন যেসব লোভী ও বিশ্বাসঘাতকেরা বঙ্গবন্ধুর পবিত্র রক্ত মেখে নিজেরাই হয়েছিল ঘাতক ও খুনি; সেই ভিত সেদিন শক্তিশালী হতে পারেনি। তাদের পাপী হৃদয়ের লালসা চরিতার্থ করতে পারেনি।
খুনি মোশতাকরা বাঙালির অস্তিত্ব¡কে মুছে ফেলার অপচেষ্টার প্রয়াস চালিয়েছিল। তাদের উচ্ছিষ্টভোগী লোভীরা কেউ কেউ তলে তলে তাদেরই সমর্থন করে গিয়েছে। ক্যূ-পাল্টা ক্যূ ও হত্যার মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের অপচেষ্টা, গণতন্ত্র এবং রাজনীতিকে ধ্বংসকরার ষড়যন্ত্র চলছিল। কায়েম করা হচ্ছিল দুর্নীতি ও দুঃশাসনের রাজত্ব।
বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে চাকরি দেওয়া হয়। পুনর্বাসন করা হয় রাজনৈতিকভাবেও। ১৯৭৫ থেকে ১৯৮১ দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ছিল সঙ্কটময়। সংশয় প্রতিহিংসা-দমনপীড়ন-শোষণ তখনও চলে।
আর এমন সময়ই ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারিতে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল হয়; যেখানে সর্বসম্মতিক্রমে প্রবাসে অবস্থানরত বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে দলীয় সভাপতি করা হয়।
এরপর ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন তিনি। পঁচাত্তরের পর টানা ছয়বছর তাকে দেশে ফিরতে দেওয়া হয়নি। তার সেই ফিরে আসা যেন ছিল- গণতন্ত্রের ফিরে আসা, দেশের উন্নয়ন ও প্রগতির ফিরে আসা। পিতা-মাতা ও স্বজন হারানোর এই শোক শেখ হাসিনাকে দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাওয়ার জন্য যেন শক্তিশালী ও দায়িত্বশীল করে।
ওইদিন ঢাকার বিমানবন্দরে তাকে গ্রহণ করে বাংলাদেশের লাখ লাখ জনতা। তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিনের সংবধর্ণায় লাখ লাখ মানুষের ভালোবাসায়-ই সেদিন শেখ হাসিনা খুঁজে পেয়েছিলেন পিতার শোকের সান্ত¦না। মা হারানোর বেদনা।
সেদিন থেকেই তার ধ্যান-জ্ঞান একটাই-দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণ এবং বিশ্বদরবারে বাঙালিকে একটি উন্নত জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলা। তাঁর সেই প্রত্যয় আর দূরদর্শী নেতৃত্বের ফলেই আজ দেশ দারিদ্র্যের কষাঘাত থেকে বের হয়ে সমৃদ্ধির পথে সাবলীল গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।
দেশ থেকে তিনি যেমন মঙ্গা দূর করেছেন, তেমনই কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন। তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর উদ্যোক্তা তৈরিতেও তার রয়েছে নানা উদ্যোগ। দক্ষ হাতে রাষ্ট্র পরিচালনা করে শেখ হাসিনা দেশের মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরিয়ে এনেছেন। যুদ্ধাপরাধী ও বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার করে জাতিকে করেছেন কলঙ্কমুক্ত। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যার এই দীর্ঘপথ চলা মোটেই মসৃণ ছিলো না, ছিলো কণ্টকাকীর্ণ।
আর এই সংগ্রামে শেখ হাসিনাকে কমপক্ষে ১৯ বার হত্যাচেষ্টা চালানো হয়েছে। এরমধ্যে সর্বশেষটি ছিলো ২০০৪ এর ২১ আগস্টের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা। সৃষ্টিকর্তার অপার মহিমায় ওইদিন প্রাণে রক্ষা পান তিনি। তবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তার শ্রবণশক্তি।
কিন্তু এরপরও দমে যাওয়ার মানুষ নন বঙ্গবন্ধুকন্যা। দেশে ফেরার পর তারুণ্যের ছায়ায় তিনি যেমন ছিলেন, সেই শেখ হাসিনা আজ অভিজ্ঞতায় অনেক সমৃদ্ধ। বুদ্ধিমত্তায় প্রখর, সহনশীলতা ও দৃঢ়তা, ধৈর্য যেন তার চরিত্রগত ধর্ম।
ভালোবাসায় ও সহমর্মিতায়ও তিনি বাংলার মানুষের কাছে প্রিয়। বাংলার মানুষের অতি আপনজন, একজন মমতাময়ী মা। তাই তো আজ তিনি বাংলাদেশের জনগণের হয়ে বিশ্বনন্দিত।
বিশ্বের শীর্ষ নারী শাসকের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক্ষেত্রে সরকারপ্রধান হিসেবে ভারতের ইন্দিরা গান্ধী, ব্রিটেনের মার্গারেট থ্যাচার ও শ্রীলংকার চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গার রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন তিনি।
বিরোধীদলের নেত্রী হিসেবেও শেখ হাসিনা ছিলেন আপোষহীন, সংগ্রামে ও আন্দোলনে একজন দূরদর্শী নেতা। দেশে ফেরার পর তৎকালীন সরকার তাকে ৩২ নম্বরের বাড়িতে যেতে দেয়নি। পিতা-মাতাসহ স্বজনদের হত্যার ঘটনায় মামলা পর্যন্ত করতে পারেননি তিনি।
শত নির্যাতন ও মানসিক কষ্ট নিয়েও মানুষের দুঃখ লাঘবে ১৯৮১ থেকে ১৯৯৬ সাল পযন্ত স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন করেছেন শেখ হাসিনা। তার পাশে ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
এরপর দেশের আনাচে-কানাচে ঘুরেছেন, দলকে সংগঠিত করেছেন। এই সফরেও তার ওপর হামলা হয়েছে। ১৯৯৪ সালে বিরোধীদলে থাকাকালে পাবনার ঈশ্বরদী রেলস্টেশনে শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনে গুলি ও বোমা হামলা চালানো হয়।
কিন্তু জনমানুষের ভালোবাসা যার সঙ্গে থাকে তাকে কী আর কোনো বিপদে ফেলা যায়! স্বয়ং সৃষ্টিকর্তাই ঢাল হয়ে তাকে রক্ষা করেন। পিতার মতো অসীম সাহসী, দৃঢ়তায় অবিচল, দেশপ্রেম ও মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন একজন আদর্শবাদী নেতা হিসেবে শেখ হাসিনা মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।
পূর্ব থেকে পশ্চিম, উত্তর থেকে দক্ষিণে দলকে সংগঠিত করেছেন শেখ হাসিনা। দেশের যে কোনো সঙ্কটে তার নেতৃত্ব দলমত নির্বিশেষে গ্রহণযোগ্যব্যক্তি তিনি। ১৯৯৬ সালে প্রথমবার সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। তিনি হন প্রধানমন্ত্রী। ২০০১ সাল পর্যন্ত দেশশাসন করেন তিনি।
আর এর মাঝেই শেখ হাসিনা প্রমাণ করেন শাসক হিসেবে তিনি যেমন দেশনন্দিত, তেমনি গণতন্ত্র ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিশ্বনেতার মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত। তাঁর শাসনামলে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে হতদরিদ্র মানুষের মাঝে খাদ্য ও অর্থ বরাদ্দ এবং অন্যান্য সহযোগিতা মানুষকে অসহায়ত্ব থেকে রক্ষা করেছিল।
দেশকে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তুলে তিনি দুর্ভিক্ষ ও দারিদ্র্যের কষাঘাত থেকে মানুষকে রক্ষা করে ভাগ্যোন্নয়নের পথে দাঁড় করেন। নারীর ক্ষমতায়নে গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচি এবং সন্তানের অভিভাবক হিসেবে সব ক্ষেত্রে পিতার পাশাপাশি মাতার নামের স্বীকৃতিও ছিল তার একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
কৃষি উন্নয়নের লক্ষ্যে কৃষকদের ঋণ প্রদান, কৃষি সামগ্রীর মূল্যহ্রাস এবং সহজ প্রাপ্যতাও ছিল বিরাট অবদান। ওই সময়-ই সম্পন্ন হয় পার্বত্য শান্তি চুক্তি। যার ফলশ্রুতিতে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে চলা দীর্ঘদিনের সশস্ত্র সংগ্রামের সমাপ্তি হয়।
১৯৯৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি শান্তি বাহিনীর প্রধান জ্যোতিরিন্দ্র প্রিয় লারমা খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অস্ত্র সমর্পণ করেন। ১৯৯৮ সালে শেখ হাসিনা ভারত ও পাকিস্তান সফরে গিয়ে তাদের আহ্বান জানান, পরমাণু যুদ্ধ থেকে বিরত থাকার।
ওই দু’দেশের মধ্যে তখন পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণের কারণে উত্তেজনা চলছিলো। শেখ হাসিনার নেতৃতে প্রথম সরকার মানুষের কাছে আস্থা এনে দিয়েছিল। পরবর্তীতে পাঁচবছর দেশ শাসনের নামে চলে লুটপাট ও দুর্নীতি এবং জঙ্গিবাদ।
তারপরও ক্ষমতায় থাকার জন্য বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের মদদে চলে বিরোধীদলকে দমন করার হিংসাত্মক কর্মকাণ্ড। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশজুড়ে চলে সিরিজ বোমা হামলা। এরপরের ইতিহাস তো সবারই জানা। সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়। ওই সরকার দুই বছর দেশ শাসন করে।
একপর্যায়ে রাজনীতি ও রাজনৈতিক নেতাদের কারারুদ্ধ করে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা গ্রেপ্তার-রিমান্ড ও নির্যাতন চালানো হয়। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাও কারারুদ্ধ হন। নিঃসঙ্গ কারাগারে তার ওপর চলে মানসিক নির্যাতন।
এমনকি কারাগারেও স্লোপয়জনিং করে তাকে হত্যা করার অপচেষ্টা চালানোর খবরও প্রকাশিত হয় সংবাদমাধ্যমে। তবে ভেঙে পড়ার মানুষ নন শেখ হাসিনা।
সাব জেলে কারাবন্দি অবস্থায় আদালতে মামলা চলে, সেখানেও তিনি সাহসিকতার সঙ্গে মোকাবেলা করেন। তার বিরুদ্ধে সব মিথ্যা মামলার অভিযোগের কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন- তাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র চলছে।
এক পর্যায়ে ওই সময়ের তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশে নির্বাচন দেয়। সে সময় তার প্রিয় বাঙলার জনগণ মুক্তিযুদ্ধেও চেতনার ধারক ও বাহক শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিলো। যার প্রমাণ তারা দিয়েছে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে। বিপুল ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট।
এরপরই শুরু হয় শেখ হাসিনার দিন বদলের পদক্ষেপ। তিনি জাতিকে নতুন ভিশন দিয়েছেন, যার নাম রূপকল্প-২০২১; বাংলাদেশকে একটি মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত করাই এর ভিশন।
শেখ হাসিনা স্বপ্ন দেখিয়েছেন মানুষকে, এক ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন; যেখানে সর্বাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ জনশক্তি থাকবে। আর সেই কর্মসূচি নেওয়া হয় একেবারে তৃণমূল থেকে। শেখ হাসিনার পরিকল্পনায় এই উদ্যোগের স্থপতি তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সজীব ওয়াজেদ জয়।
ডিজিটাল বাংলাদেশ-আজ অনেকাংশেই বাস্তব। পাশাপাশি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও কর্মসংস্থানের ব্যাপক উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে আজ মডেল হিসেবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি। নারীর ক্ষমতায়নে নেওয়া নানা উদ্যোগও বেশ প্রশংসা পেয়েছে। প্রায় ১১ লাখ নির্যাতিত রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে মানবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
বর্তমান বিশ্ব যখন অর্থনৈতিক মন্দায় জর্জরিত, দেশে দেশে মূল্যবৃদ্ধিসহ সমস্যা জটিল হচ্ছে তখন একজন শেখ হাসিনার হাত ধরেই শক্তিশালী হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। দারিদ্র্যের হার কমে বর্তমানে ২১.০৮ শতাংশে নেমে এসেছে।
তবে দেশে সমস্যা এখনও রয়ে গেছে। এরপরও দেশের মানুষ ন্যূনতম শান্তি ও স্বস্তিতে জীবনযাপন করছে। ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি সমৃদ্ধ ও নিরাপদ বাংলাদেশ করার উদ্যোগও নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী; যেখানে শিক্ষা-স্বাস্থ্য-কর্মসংস্থান ছাড়াও সৃজনশীল প্রতিভা বিকাশের সম্ভাবনা থাকবে।
গতবছরের মতো এবারও জন্মদিনে তিনি দেশের বাইরে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। ১৯৭৪ সালের এই সেপ্টেম্বরেই জাতিসংঘে মাতৃভাষা বাংলায় প্রথম ভাষণ দিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান; তিনিও এই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দারিদ্র্য বিমোচনে শেখ হাসিনা প্রণীত ৬ দফা গৃহীত হয়েছে। যা অনুসরণ করছে বিশ্ব সম্প্রদায়। জন্মদিনে এটাই চাওয়া পিতার যোগ্য উত্তরসুরী হিসেবে নিজ সততা, আত্মত্যাগ, দূরদর্শিতা ও দেশপ্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে ওঠুন শেখ হাসিনা; যিনি বাংলার ১৮ কোটি মানুষের ভরসাস্থল।
আমরা বিশ্বাস করি, রাখাইনে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে প্রধানমন্ত্রী মানবতার যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তার সুদক্ষ কূটনীতিতে তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েও নতুন আরেকটি মাইলফলক গড়বেন তিনি। তার হাত ধরেই শতবর্ষী ডেল্টা প্ল্যানসহ নানা উদ্যোগের ফলে এগিয়ে যাক বাংলাদেশ, আমাদের প্রত্যাশা এটাই।
লেখক: উপাচার্য, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জামালপুর।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৯
এএ/