কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বসে যে নেতা প্রিয় মাতৃভূমি বাংলার ছবি হৃদয় দিয়ে এঁকেছেন, ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছেন, সেই নেতাকে সেদিন জাতির পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞচিত্তে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। তিনি শুধু বাঙালি জাতিরই মহান নেতা ছিলেন না, সারা বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নেতা ছিলেন।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরপরই তিনি উপলব্ধি করেছিলেন এই পাকিস্তান বাঙালিদের জন্য হয়নি। একদিন বাংলার ভাগ্যনিয়ন্তা বাঙালিদের হতে হবে। সেই লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে ’৪৮-এর ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগ এবং ’৪৯-এর ২৩ জুন আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করেন। তারপর সংগ্রামের সুদীর্ঘ পথে নেতৃত্ব দিয়ে মহান বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন সংগঠিত করার মধ্য দিয়ে স্বাধীন ও সার্বভৌম ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠা করেন।
আমাদের জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে ’৬৯-এর গণআন্দোলন এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। কালপর্বটি মহান মুক্তিযুদ্ধের ‘ড্রেস রিহার্সেল’ হিসেবে চিহ্নিত। জাতির মুক্তিসনদ ৬ দফা দেওয়ার কারণে বঙ্গবন্ধু মুজিবসহ সর্বমোট ৩৫ জনকে ফাঁসি দেওয়ার লক্ষ্যে ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব ও অন্যান্য’ তথা আগরতলা মামলার আসামি করা হয় এবং নির্বিঘ্নে পুনরায় ক্ষমতায় আরোহনের এক ঘৃণ্য মনোবাসনা চরিতার্থে ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করেন স্বৈরশাসক আইয়ুব খান। ’৬৯-এর ৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ডাকসু’ কার্যালয়ে ডাকসু ভিপি হিসেবে আমার সভাপতিত্বে এবং সতীর্থ ছাত্র সংগঠন, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ, পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন (মতিয়া গ্রুপ), পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন গ্রুপ) এবং পরবর্তীকালে এনএসএফ-এর একটি অংশের সমন্বয়ে আমরা সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করি। মত ও পথের ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও বৈঠকে অনেক তর্ক-বিতর্কের মধ্য দিয়ে সর্বসম্মতিক্রমে বঙ্গবন্ধু ঘোষিত ৬ দফাকে পুরোপুরি অন্তর্ভূক্ত করে আমরা ১১ দফা কর্মসূচি প্রণয়ন করি। আমরা সবাই যার যার সংগঠনের ভিন্ন মত ও বক্তব্য ত্যাগ করে এই ঐক্য গড়ে তুলি।
সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা ছিলেন ছাত্রলীগ সভাপতি আব্দুর রউফ (প্রয়াত) ও সাধারণ সম্পাদক খালেদ মোহাম্মদ আলী; ছাত্র ইউনিয়ন (মতিয়া গ্রুপ) সভাপতি সাইফুদ্দিন আহমেদ মানিক (প্রয়াত) ও সাধারণ সম্পাদক সামসুদ্দোহা; ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন গ্রুপ) সভাপতি মোস্তফা জামাল হায়দার ও সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল্লাহ; এবং এনএসএফ-এর একাংশের সভাপতি ইব্রাহিম খলিল (প্রয়াত) ও সাধারণ সম্পাদক ফখরুল ইসলাম মুন্সী; ডাকসু জিএস নাজিম কামরান চৌধুরী, এবং আমি তোফায়েল আহমেদ ডাকসু ভিপি হিসেবে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক, সমন্বয়ক ও মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করি। আমরা সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি যে, প্রতিটি সভায় ডাকসু ভিপি সভাপতিত্ব করবেন, সিদ্ধান্তসমূহ ঘোষণা এবং সভা পরিচালনা করবেন। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডাকসু ভিপি ও সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক হিসেবে নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি ১১ দফা ঘোষণা করি।
এরপর ১৭ জানুয়ারি যে আন্দোলন আমরা শুরু করি, ২০ জানুয়ারি শহীদ আসাদের রক্তাক্ত জামা হাতে নিয়ে যে শপথ গ্রহণ করি, ২৪ জানুয়ারি মতিউর-মকবুল-রুস্তম-আলমগীরের রক্তের মধ্য দিয়ে সেই আন্দোলন সর্বব্যাপী গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করে। ৯ ফেব্রুয়ারি ‘শপথ দিবসে’ পল্টন ময়দানে সভাপতির ভাষণ শেষে স্লোগান তুলি, ‘শপথ নিলাম শপথ নিলাম মুজিব তোমায় মুক্ত করবো; শপথ নিলাম শপথ নিলাম মা-গো তোমায় মুক্ত করবো। ’
১৫ ফেব্রুয়ারি সার্জেন্ট জহুরুল হক এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি ডঃ শামসুজ্জোহা নিরাপত্তা বাহিনীর বুলেটে নির্মমভাবে নিহত হলে বাংলার মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। বিক্ষুব্ধ মানুষকে দমাতে সরকার সান্ধ্য আইন জারি করে। আমরা সান্ধ্য আইন ভঙ্গ করে রাজপথে মিছিল করি এবং ২০ ফেব্রুয়ারি সমগ্র ঢাকা নগরীকে মশাল আর মিছিলের নগরীতে পরিণত করি। ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবসে পল্টনের মহসমুদ্রে আমরা ১০ ছাত্রনেতা প্রিয় নেতা শেখ মুজিবসহ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় আটক সকলের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে স্বৈরশাসকের উদ্দেশে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম প্রদান করি। সমগ্র দেশ গণবিস্ফোরণে প্রকম্পিত হয়। জনরোষের ভয়ে ২২ ফেব্রুয়ারি আইয়ুব খান আগরতলা মামলা সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে বঙ্গবন্ধুসহ সকল রাজবন্দীকে নিঃশর্ত মুক্তি দিলে দেশ জুড়ে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়।
প্রিয় নেতাকে কারামুক্ত করার মধ্য দিয়ে শপথ দিবসে প্রদত্ত স্লোগানের প্রথমাংশ ‘মুজিব তোমায় মুক্ত করবো’, এবং ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে হাতিয়ার তুলে নিয়ে যুদ্ধ করে প্রিয় মাতৃভূমিকে হানাদার মুক্ত করে স্লোগানের দ্বিতীয়াংশ ‘মা-গো তোমায় মুক্ত করবো’ বাস্তবায়ন করেছিলাম।
আগরতলা মামলাটি ছিল সমগ্র বাঙালি জাতির জন্য অগ্নিপরীক্ষার মতো। সেই অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বঙ্গবন্ধু বন্দীদশা থেকে মুক্তমানব হয়ে বেরিয়ে আসেন। মুক্তি পাওয়ার পর তাঁকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাসভবনে পৌঁছে দেওয়া হয়। খবর পেয়ে আমি ছুটে যাই। বঙ্গবন্ধু অপেক্ষা করছিলেন। ইতিমধ্যে পল্টন ময়দানে লক্ষ লক্ষ লোক জমায়েত হয়। তারা ভেবেছিল বঙ্গবন্ধু পল্টনে যাবেন। বঙ্গবন্ধুকে ৩২ নম্বর খেকে পল্টনে নেওয়ার পথে আমরা সিদ্ধান্ত নেই, না, পল্টনে না, মহান নেতাকে আমরা আগামীকাল ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (আজকের সোহরাওয়ার্দী উদ্যান), সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে গণসংবর্ধনা জ্ঞাপন করবো। লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রিয় নেতাকে একনজর দেখার অপেক্ষায় অধীর আগ্রহে আছে। আকস্মিকভাবে তিনি যদি এখানে আসেন তবে মানুষ প্রিয় নেতাকে দেখা থেকে বঞ্চিত হবেন। তখন বঙ্গবন্ধুকে পল্টনে না নিয়ে বর্তমান যে শিক্ষা ভবন সেখান থেকে গাড়ি ঘুরিয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ হয়ে তাঁকে ৩২ নম্বর বাসভবনে পৌঁছে দিয়ে পল্টনে ছুটে গিয়ে সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত সকল রাজবন্দীর উপস্থিতিতে এই সংবাদটি ঘোষণা করি যে, আগামীকাল প্রিয় নেতাকে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে গণসংবর্ধনা প্রদান করা হবে। প্রিয় নেতাকে একনজর দেখবে বলে ৩২ নম্বর শুধু না, সারা ঢাকা শহরের রাজপথে তখন লক্ষ লক্ষ মানুষের ঢল।
পরদিন ঐতিহাসিক ২৩ ফেব্রুয়ারি। শুধুমাত্র আমার জীবনে না, সমগ্র বাঙালি জাতির জীবনে এক ঐতিহাসিক দিন। কারণ এই দিনটিতে-যে নেতা কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বছরের পর বছর কাটিয়েছেন, বারবার ফাঁসির মঞ্চে গিয়েছেন, সেই প্রিয় নেতাকে আমরা কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতির পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞ চিত্তে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দিয়েছিলাম। সেই সংবর্ধনা সভায় সভাপতিত্ব করার দুর্লভ সৌভাগ্যের অধিকারী আমি। সেদিনের সেই রেসকোর্স ময়দানের কথা আজ যখন ভাবি তখন নিজেরই অবাক লাগে।
আমার বয়স তখন ২৫ বছর ৪ মাস ১ দিন। এই অল্প বয়সে বিশাল একটি জনসভার সভাপতি হিসেবে প্রিয় নেতাকে ‘তুমি’ বলে সম্বোধন করে তাঁর আগেই বক্তৃতা করা, এটি আমার জীবনের এক ঐতিহাসিক ঘটনা। অবাক হই এই ভেবে যে, কী করে এটা সম্ভবপর হয়েছিল। আমি কৃতজ্ঞ তাদের প্রতি যারা নেপথ্যে থেকে বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়ে আমাদের পরিচালনা করেছেন। বিশেষ করে আমাকে বলছেন, কোন্ পয়েন্টে বক্তৃতা করবো, কিভাবে বক্তৃতা করবো। আজকের সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সেদিন ১০ লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতিতে কানায় কানায় পূর্ণ। সেই জনসমুদ্রের মানুষকে যখন জিজ্ঞাসা করেছিলাম, যে নেতা জীবনের যৌবন কাটিয়েছেন পাকিস্তানের কারাগারে, ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছেন, সেই প্রিয় নেতাকে কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতির পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞ চিত্তে একটি উপাধি দিতে চাই। ১০ লক্ষ মানুষ যখন ২০ লক্ষ হাত উত্তোলন করেছিল সে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। তখনই প্রিয় নেতাকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। পরবর্তীতে এই উপাধিটি জনপ্রিয় হয়েছে, জাতির জনকের নামের অংশ হয়েছে এবং আজকে তো শুধু ‘বঙ্গবন্ধু’ বললেই সারা বিশ্বের মানুষ এক ডাকে চেনে।
নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, মহাত্মা গান্ধী,-রবীন্দ্রনাথ যাঁকে মহাত্মা উপাধি দিয়েছিলেন,-দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, শেরে বাংলা একে ফজলুল হকসহ পৃথিবীর অনেক নেতাই উপাধি পেয়েছেন। কিন্তু ফাঁসির মঞ্চ থেকে মুক্ত হয়ে, গণমানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে, ১০ লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতিতে এমন আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে কেউ উপাধি পাননি। সেদিন আমি বক্তৃতার শেষে বলেছিলাম, আমার বক্তৃতা আর দীর্ঘ করতে চাই না। তখন জনসমুদ্র থেকে রব উঠেছিল, আমি যেন বক্তৃতা শেষ না করি। জনসমুদ্রের প্রবল অনুরোধে আবার বক্তৃতা করে যখন পুনরায় শেষ করতে চাইলাম, তখন সভামঞ্চ থেকে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘বলো, বলো, বলো’। তারপর বক্তৃতার শেষে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি ঘোষণার পর এই প্রথম নাম ঘোষণা করলাম, এবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন, বাংলার মানুষের নয়ণের মণি, পৃথিবীর নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের শ্রেষ্ঠ বন্ধু, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি ‘বঙ্গবন্ধু’ হিসেবে এই প্রথম ভাষণ দিলেন। সে কি ভাষণ! স্মৃতির পাতায় আজো ভেসে ওঠে। এই ভাষণের শেষেই তিনি বলেছিলেন, ‘আগরতলা মামলার আসামি হিসেবে আমাকে গ্রেফতার করে কারাগার থেকে মুক্তি দিয়ে পুনরায় গ্রেফতার করে যখন ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যাবে, তখন বুঝতে পেরেছিলাম যে ওরা আমাকে ফাঁসি দেবে। তখন এক টুকরো মাটি তুলে নিয়ে কপালে মুছে বলেছিলাম, হে মাটি আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমাকে যদি ওরা ফাঁসি দেয়, মৃত্যুর পরে আমি যেন তোমার কোলে চিরনিদ্রায় শায়িত থাকতে পারি। ’
বক্তৃতার শেষে তিনি বলেছিলেন, ‘রক্ত দিয়ে জীবন দিয়ে তোমরা যারা আমাকে কারাগার থেকে মুক্ত করেছো, যদি কোনদিন পারি নিজের রক্ত দিয়ে আমি সেই রক্তের ঋণ শোধ করে যাব। ’ তিনি একাই রক্ত দেননি, সপরিবারে বাঙালি জাতির রক্তের ঋণ তিনি শোধ করে গেছেন। তিনি চলে গেছেন, রেখে গেছেন তাঁর দুই কন্যা। ’৮১ সালের সম্মেলনে জ্যেষ্ঠ কন্যার হাতে আমরা আওয়ামী লীগের পতাকা তুলে দিয়েছিলাম। স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে ’৮১-এর ১৭ মে তিনি বাংলার মাটি স্পর্শ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর দুটি স্বপ্ন ছিল। একটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা; যা তিনি সম্পন্ন করেছেন। আরেকটি ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করা। সেই কাজটি তাঁরই সুযোগ্য কন্যা দক্ষতার সাথে বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে চলেছেন।
বঙ্গবন্ধু চলে গেছেন। কিন্তু আমাদের জন্য রেখে গেছেন তাঁর গৌরবময় অমর কীর্তি। স্মৃতির পাতায় ভেসে ওঠে ইসলামিক সম্মেলনে পাকিস্তান সফরের কথা। পাকিস্তানে জেলের মধ্যে যে প্রিজন গভর্নর অর্থাৎ জেল সুপার বঙ্গবন্ধুর দেখাশোনা করতেন, তিনি বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করতে এসেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সাথে কথা বলে আমাদের কাছে এসে বলেছিলেন, “জেলের মধ্যে কবর খুঁড়ে কবরের পাশে দাঁড় করিয়েছিলাম তোমাদের নেতাকে। তিনি বলেছিলেন, ‘কবরের ভয় আমি পাই না। আমি তো জানি তোমরা আমাকে ফাঁসি দেবে। কিন্তু আমি এও জানি, যে বাংলার দামাল ছেলেরা হাসি মুখে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে পারে, সেই বাঙালি জাতিকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না। আমি জানি তোমরা আমাকে ফাঁসি দেবে এবং আমি এও জানি আমার বাংলাদেশ স্বাধীন হবেই হবে’। ”
বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। আমার জীবনের সাথে মিশে আছে ’৬৮-এর ১৭ জানুয়ারির কথা। সেদিন আমি ডাকসু’র ভিপি হই। সেই রাতেই বঙ্গবন্ধু স্নেহমাখা এক চিঠিতে আমাকে উদ্দেশ্য করে লিখেছিলেন ‘জেলের মধ্যে বসে তোর ডাকসু নির্বাচনের খবর শুনে খুবই আনন্দিত হয়েছি। আমি বিশ্বাস করি এবারের ডাকসু বাংলার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করবে। ’
ওই রাতেই শেষ প্রহরে বঙ্গবন্ধুকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি হিসেবে গ্রেফতার করে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যাওয়া হয়। চিঠিতে আমাকে উদ্দেশ করে বঙ্গবন্ধু যে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন, ডাকসু সত্যিকার অর্থেই সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে সক্ষম হয়েছিল। এই দিনটার সাথে আমার জীবন এমনভাবে মিশে আছে যে, প্রতি দিন প্রতি মুহূর্তে এই দিনটির কথা আমার মানসপটে ভেসে ওঠে। প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙার পর নীচে নেমে পাঠকক্ষ ও ড্রইং রুমে বঙ্গবন্ধুর সাথে আমার যে স্মৃতিময় ছবি আছে, সেগুলো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখি আর ভাবি, পৃথিবীতে অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এসেছেন, আরো আসবেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর মতো কেউ আসবেন না। এতো বড়ো মন। যিনি শত্রুরও দুঃখ-কষ্ট সহ্য করতে পারতেন না। এতো বড়ো একজন হৃদয়বান মানুষ ছিলেন। আমি কাছে থেকে দেখেছি, কোন মানুষকে তিনি কখনো অসম্মান করেন নাই। ছোটকে তিনি বড়ো করতেন এবং ছোটকে বড়ো করেই নিজে বড়ো হয়েছেন। দলের নিম্নস্তরের নেতাকে উচ্চস্তরের নেতা করেছেন। ইউনিয়নের নেতাকে থানা, থানার নেতাকে জেলা, জেলার নেতাকে জাতীয় নেতায় উন্নীত করে তিনি ‘বঙ্গবন্ধু’ ও ‘জাতির পিতা’ হয়েছেন। যা বিশ্বাস করতেন, তাই বলতেন। যা বলতেন, তা বিশ্বাসী আত্মা থেকে উঠে আসতো, এবং একবার যা বলতেন, ফাঁসির মঞ্চে গিয়েও তার সাথে আপোষ করতেন না।
’৭২-এর ৮ জানুয়ারি, পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তির পর, ৯ জানুয়ারি লন্ডনে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছিল, ‘আপনার বাংলাদেশ তো এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সেখানে কিছুই নেই, শুধু ধ্বংসস্তূপ। ’ উত্তরে বলেছিলেন, ‘আমার মাটি আছে। আমার মানুষ আছে। আমার মাটি যদি থাকে, আমার মানুষ যদি থাকে, একদিন এই ধ্বংসস্তূপ থেকেই আমি আমার বাংলাদেশকে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, শস্যশ্যামলা সোনার বাংলায় পরিণত করবো। ’
জানুয়ারির ১০ তারিখ স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী হন এবং ১৪ জানুয়ারি মাত্র ২৮ বছর বয়সে আমাকে প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় রাজনৈতিক সচিব করেন। বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকে দেখেছি কি নিরলস পরিশ্রম তিনি করেছেন। ঘুমানোর আগ পর্যন্ত ছিলেন কর্মমুখর। সময়ানুযায়ী সব কাজ করতেন। ৫টা বললে ৫টা, ৩টা বললে ৩টা।
একবার কুষ্টিয়া যাচ্ছেন। আমার সফরসঙ্গী হওয়ার কথা, দু’মিনিট দেরি হয়েছিল। হেলিকপ্টার চলে গেল। কুষ্টিয়া থেকে ফোন করে আমাকে বলেছিলেন, ‘তোমাকে একটা শিক্ষা দিলাম। যাতে কোনদিন তুমি আর দেরি না করো। ’ সেই কথাটা আজো মনে আছে। যখন মন্ত্রী ছিলাম, কোন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে গিয়েছি, যারা আয়োজক তাদের আগে গিয়ে বসেছি। কোনদিন দেরি হয়নি। বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা আমার চলার পথে পাথেয় হয়েছে। তাঁর কাছ থেকে বহু কিছু শিখেছি। যেমন, তিনি অনেককে সাহায্য করতেন। তাঁর ফান্ড আমার হাতে থাকতো। তিনি যাকে বলতেন, আমি তাঁকে টাকা দিতাম। যাকে টাকা দিয়েছি তার নাম খাতায় লিখে রাখতাম। একদিন খাতায় লেখা হিসাব যখন দেখালাম, বঙ্গবন্ধু আমার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলেছিলেন, ‘এই কী তোমাকে শিক্ষা দিলাম?’ বিস্মিত হয়ে উত্তর দিয়েছিলাম, কেন আমি তো ঠিকই লিখেছি। তখন বলেছিলেন, ‘আমি যাকে বিশ্বাস করি, তাকে পুরোপুরি বিশ্বাস করি। আমি তোমাকেও বিশ্বাস করি। কিন্তু এটা কী লিখেছ?’ পুনরায় বললাম, আমি তো ঠিকই লিখেছি। বললেন, ‘না, এই যে, যাকে আমি টাকা দিলাম, তার পুরো নামটাই লিখেছো। তোমার এই খাতাটাই যদি, এই হিসাবটাই যদি অন্যের হাতে পড়ে, তাহলে সে দেখবে আমি কাকে কাকে টাকা দিয়েছি। এটা তো বলা নিষেধ। ’ তখন তিনি খাতাটা হাতে নিয়ে আমাকে বলেছিলেন, ‘নামের আদ্যাক্ষর দিয়ে সংক্ষিপ্তাকারে লিখবে। যাতে একজনেরটা আরেকজন না জানে। ’ কতো বড়ো মাপের দয়ালু মানুষ ছিলেন। কাছে থেকে দেখেছি, যারা তাঁর ভিন্নমতাবলম্বী বা বিরোধী ছিলেন, তারাও যদি সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে আসতেন, তাদের প্রতি যে ভালোবাসা, যে সম্মান তিনি প্রদর্শন করতেন, এটা কেউ কল্পনাও করতে পারবে না।
বঙ্গবন্ধুর জীবন ছিল বাংলার মানুষের জন্য উৎসর্গিত। তিনি নিজেই বলেছেন সে কথা। ডেভিড ফ্রস্ট যখন সাক্ষাৎকার নেন, তখন জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘হোয়াট ইজ ইউর কোয়ালিফিকেশন?’ উত্তরে বলেছিলেন, ‘আই লাভ মাই পিপল। ’ পরের প্রশ্ন ছিল, ‘হোয়াট ইজ ইউর ডিসকোয়ালিফিকেশন?’ বলেছিলেন, ‘আই লাভ দেম ঠু মাচ। ’ সত্যিই বাংলার মানুষের প্রতি বঙ্গবন্ধুর হৃদয়ের ভালোবাসা এতো গভীর ছিল যে, সমুদ্রের গভীরতা পরিমাপ করা যায়, কিন্তু বাঙালি জাতির প্রতি, দুঃখী মানুষের প্রতি তাঁর যে ভালোবাসা এটা কোনদিন নিরূপণ করা যায় না। আর এ কারণেই মহৎ গুণাবলীর অধিকারী ‘বাঙালির বন্ধু’ হিসেবে আস্থা অর্জনকারী, গরীব-দুখী-মেহনতী মানুষের বন্ধু এমন একজন মহান ব্যক্তিত্বের নামের অগ্রেই ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি শোভনীয়। তাঁর বক্তৃতায় সর্বদাই থাকতো, বাংলার গরীব-দুখী-কৃষক-শ্রমিক-মেহনতী মানুষের কথা। সেজন্যই ’৭৫-এ ‘কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগ’ করেছিলেন এবং দ্বিতীয় বিপ্লবের মাধ্যমে দেশকে তার স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ঘাতকের নির্মম বুলেটে তিনি সেটি শেষ করে যেতে পারেননি।
মনে পড়ে, বঙ্গবন্ধুর সফরসঙ্গী হয়ে জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনে যোগদান করতে আলজেরিয়া গিয়েছিলাম। সেবারের সম্মেলনে জীবিত দুই নেতা আর প্রয়াত চার নেতার নামে তোরণ নির্মিত হয়েছিল। প্রয়াত পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু, জামাল আব্দুল নাসের, ড. সুকর্নো এবং কাওমি নক্রুমা, আর জীবিত দু’জনের একজন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং দ্বিতীয়জন মার্শাল যোসেফ ব্রোজ টিটো। মঞ্চে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু সেদিন দৃপ্ত কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘বিশ্ব আজ দু’ভাগে বিভক্ত। একদিকে শোষক আরেকদিকে শোষিত। আমি শোষিত জনগণের পক্ষে। ’ সত্যিই তিনি শোষিত জনগণের পক্ষে ছিলেন। জীবনের পাঠশালায় যতটুকু রাজনীতি শিখেছি এবং করেছি, আমার ধারণা পৃথিবীতে অনেক বড়ো নেতা জন্মগ্রহণ করেছেন, কিন্তু কোন নেতার সাথেই বঙ্গবন্ধুর তুলনা হয় না। তুলনা চলে শুধু তাঁর নিজের সাথে। এতো বড়ো হৃদয়ের মানুষ, এতো বড়ো ভালোবাসার মানুষ, যিনি অপরের দুঃখ সহ্য করতে পারতেন না। তার শত্রু হলেও তিনি তাকে আপন করে নিতে চাইতেন, কষ্ট দিতে চাইতেন না। এরকম নেতা পৃথিবীতে জন্মাননি। কোনদিন জন্মাবেনও না। সেই নেতার সান্নিধ্য লাভ করেছি। কাছে থেকে দেখেছি মানুষের প্রতি তাঁর সুগভীর ভালোবাসা ও মমত্ববোধ। এই মহামানবের কোন মৃত্যু নেই। তাঁর সৃষ্ট মহত্তর কর্মই তাঁকে অমরত্ব দান করেছে।
ভাষণ দিয়েছিলেন, ’৭১-এর সাতই মার্চ। যে ভাষণ আজ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পেয়েছে। অলিখিত একটি ভাষণ। আব্রাহাম লিংকন ৩ মিনিটের লিখিত ভাষণ দিয়েছেন। মার্টিন লুথার কিং ১৭ মিনিটের লিখিত ভাষণ দিয়েছেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ভাষণ অলিখিত এবং লক্ষ লক্ষ মানুষের উপস্থিতিতে প্রদত্ত। চোখের চশমাটা পোডিয়ামে রেখে চতুর্দিকে তাকিয়ে যা তিনি বিশ্বাস করতেন হৃদয়ের গভীরতা থেকে তা উচ্চারণ করে নিরস্ত্র বাঙালিকে সশস্ত্র জাতিতে রূপাপন্তরিত করে পৃথিবীর ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ ভাষণের মর্যাদায় আমাদের অভিষিক্ত করেছেন।
মানুষ জন্মগ্রহণ করলে মৃত্যুবরণ করতে হয়। আমারও সময় এসেছে। একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেছি,-যে গ্রাম ছিল অন্ধকার, লেখাপড়া করতে হতো হারিকেন জালিয়ে, খালি পায়ে স্কুলে যেতে হতো,-সেই প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে একটি ছেলে এসে বঙ্গবন্ধুর মতো বিশ্বখ্যাত মহান নেতার সান্নিধ্য লাভ করেছে। আমি সৌভাগ্যবান মানুষ। এর থেকে অধিক চাওয়া-পাওয়ার আমার আর কিছুই নেই। কিন্তু দুঃখের সাথে বলতে হয়, ’৬৯-এর ঐতিহাসিক গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে যে প্রবল গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল সেই অগ্নিঝরা দিনগুলো-২০ জানুয়ারি শহীদ আসাদ দিবস, ২৪ জানুয়ারি গণঅভ্যুত্থান দিবস, ১৫ ফেব্রুয়ারি শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক দিবস, ১৮ ফেব্রুয়ারি শহীদ ড. শামসুজ্জোহা দিবস এবং ২৩ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু দিবস-স্বাধীন বাংলাদেশে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয় না। আমরা জানি, আইয়ুব খানের তথ্য সচিব আলতাফ গওহরের লেখা ‘আইয়ুব খান’ নামক বইটিতে আছে, শেখ মুজিবকে ফাঁসি দেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ও তা বাস্তবায়নের সম্পূর্ণ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল।
সেদিনের জাগ্রত ছাত্র সমাজের প্রবল আন্দোলনের কারণে এবং বাংলার মানুষের ঐক্যবদ্ধতার কারণে সেটা বাস্তবায়ন সম্ভবপর হয়নি। সেদিন সেই দিনগুলো যদি না হতো, স্বৈরাচারী আইয়ুবের পতন না ঘটতো, আগরতলা মামলা প্রত্যাহৃত না হতো, বঙ্গবন্ধুর মুক্তি না হতো, তাহলে বঙ্গবন্ধুর ফাঁসি হতো এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না। জাতির জনকের মুক্তি, ’৭০-এর ঐতিহাসিক নির্বাচনে ভূমিধ্বস বিজয় এবং রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের ক্ষেত্রে ’৬৯-এর গণআন্দোলনের রয়েছে ঐতিহাসিক ভূমিকা। সুতরাং, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ‘মুজিববর্ষ’ পালনের এই শুভলগ্নে জাতির জনকের ঐতিহাসিক অবদান ঊর্ধ্বে তুলে ধরতেই যথাযথ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ’৬৯-এর ঐতিহাসিক সেই দিনগুলো পালিত হওয়া কাম্য।
আজকের বাংলাদেশ অনেক উন্নতি করেছে, এগিয়েছে। একদা যে বাংলাদেশকে কতিপয় অর্থনীতিবিদ তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে বলতেন, ‘বাংলাদেশ হবে দরিদ্র দেশের মডেল। বাংলাদেশ হবে তলাবিহীন ঝুড়ি। ’ আজ তারাই বলেন, ‘বিস্ময়কর উত্থান এই বাংলাদেশের। ’ গ্রামাঞ্চলের মানুষের জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য এসেছে, দেশের গ্রামগুলো এখন শহরে রূপান্তরিত হয়েছে। এই যে উত্থান বাংলাদেশের এর প্রত্যেকটির ভিত্তি বঙ্গবন্ধু স্থাপন করেছেন। আজ যে স্যাটেলাইট মহাকাশে সফলভাবে উৎক্ষেপিত হয়েছে, বেতবুনিয়ায় ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র উদ্বোধনের মাধ্যমে সেই কাজটির ভিত্তি তিনি স্থাপন করে গেছেন। সমুদ্রসীমা নির্ধারণের কাজ বঙ্গবন্ধু শুরু করেন। ভারতের সাথে সীমান্ত চুক্তি বঙ্গবন্ধু করেন। যমুনা সেতু নির্মাণে জাপানের অর্থায়নের জন্য জাপান সরকারের সাথে কথা বলেন। ধ্বংসপ্রাপ্ত ভৈরব ব্রিজ, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পুনঃনির্মাণ করেন। বিশ্বের অধিকাংশ দেশের স্বীকৃতি আদায় করেন। যখন তিনি ধ্বংসপ্রাপ্ত-যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটাকে স্বাভাবিক করলেন, ঠিক তখনই ঘাতকের দল জাতির জনককে নির্মমভাবে হত্যা করলো। আজ তিনি নেই আর কোনদিন ফিরে আসবেন না। কিন্তু এই পৃথিবী যতদিন থাকবে, এই দেশের মাটি ও মানুষ যতদিন থাকবে দেশের মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অক্ষয় এবং অমর হয়ে থাকবেন।
লেখক: আওয়ামী লীগ নেতা, সংসদ সদস্য, সভাপতি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২০
এজে/