এই পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটকে গত প্রায় ১০০ বছর ধরে মানুষ প্রায় ভুলেই গিয়েছিল। পৃথিবীর শক্তিশালী দেশগুলো প্রথম শিল্পবিপ্লবের পর থেকে কেবল নিজেদের অস্ত্রভাণ্ডারকেই সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করেছে।
বস্তুত, সভ্যতা যখনই অগ্রসর হয়েছে, তখনই মহামারির সঙ্গে তাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয়েছে। আর, মহামারী চিরকালই বদলে দিয়েছে ইতিহাস। রাশ টেনে ধরেছে সভ্যতার নামে মানুষের উন্মত্ত পাগলামির; প্রকৃতি ও পৃথিবীর বিরুদ্ধে ধাবমান মানুষের জয়রথের দিকে ছুড়ে দিয়েছে ব্রহ্মাস্ত্র।
মহামারী বনাম সভ্যতার যুদ্ধ দিন দিন সূক্ষ্ণতর হয়েছে। মানুষ যেহেতু কখনোই মাথা নত করেনি (আমিও চাই না মানুষ মাথা নত করুক), তাই প্রকৃতির জীবাণুর আঘাত নতুন নতুন যুগে আরো আরো সূক্ষ্ণ হয়ে উঠেছে। কিন্তু প্রকৃতির বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে মানুষের পেছনে ফেরার আর কোনও সুযোগ নেই। জয় তাকে পেতেই হবে। কিন্তু এই জয়লাভে প্রকৃতি যেখানে নির্বিচারে মানব বলি দিচ্ছে, সেখানে মানুষ নির্বিচারে প্রকৃতিকে বিলুপ্ত করে দিতে পারে না। প্রকৃতির সাথে সম্মানজনক সহাবস্থান বজায় রেখে তার দুষ্টু উপাদানের বিরুদ্ধেই কেবল অভিযান প্রস্তুত রাখতে পারে মানুষ।
এই লক্ষ্য অর্জন করতে হলে মানুষকে পুনরায় নিজের দিকেই তাকাতে হবে। মানুষের মাত্র ২৩ জোড়া জিনোম কোডে ফ্লোরেন্টাইন কোডেক্সের মতোই জীবন ও জীবনের সমাপ্তি, ভাগ্য-ইতিহাস-স্মৃতি, আগ্রহ-আরোগ্য-প্রতিরোধ ও প্রতিরক্ষার কৌশল রচিত রয়েছে। কিন্তু এই জিনোমের প্রতিরক্ষাব্যুহ যে মানবদেহ, তা যে কাঠামোতে দৃশ্যমান তা অবশ্যই মানুষের নিম্নতর বর্গ থেকে উত্থিত হওয়ার স্বাক্ষ্যই বহন করে। মানবদেহের এই প্রতিরক্ষাব্যুহ যত উন্নত হবে, ততই জীবাণুর অনুপ্রবেশ বাধাগ্রস্ত হতে থাকবে আর জিন মানুষের জন্য অমরত্বের পথ খুঁজে নেয়ার ফুরসত পাবে। অন্যথায়, মানুষের মৃত্যু বা মানবীয় পুরাণ, ইতিহাস ও সভ্যতারও বিলয় অনিবার্য।
আর, এপথেই ভবিষ্যতে নিজের অস্তিত্ব ও সভ্যতা টিকিয়ে রাখতে পারে স্যাপিয়েন্স নামের প্রজাতিটি।
লেখক: ব্যাংকার
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ০২, ২০২০
নিউজ ডেস্ক