ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

উখিয়া টু টেকনাফ: আরেকটি দেশ?

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২০
উখিয়া টু টেকনাফ: আরেকটি দেশ?

সালমা বানু। বয়স ষাটের কাছাকাছি। খুপরি ঘর থেকে কখন বের হয়ে আমার পেছনে এসে দাঁড়িয়েছেন টের পাইনি। হঠাৎ খেয়াল করতেই জিজ্ঞেস করলাম কেমন আছেন? বললেন, ভাল আছি। কতদিন হলো আসছেন, হাত দেখিয়ে বললো, ৩ বছর। আর যেতে চান না? যদি হাত, পা বেঁধে পাঠিয়ে দেয় তাহলেই সম্ভব। তো সরকার যদি আর খাওয়া, পরা বা সুযোগ সুবিধা না দেয় তাহলে কী করবেন? রিজিকের মালিক আল্লাহ। আল্লাহই একটা ব্যবস্থা করবে। একটা উছিলাতেই তো তিনি এখানে আমাদের নিয়ে এসেছেন। বাকি ব্যবস্থা তিনিই করবেন। আপনারা তো না হয় মেয়েমানুষ ঘরের ভেতরেই থাকতে পারেন। কিন্তু পুরুষগুলো বার্মায় যেতে চায় না? অজানা ভাষার খানিকটা তর্জমা করে যা বুঝলাম তা হলো, যদি বিচার হয়, যদি বিচার তাদের পক্ষে আসে তাহলে যাবে।

১৯ মার্চ দুপুর ২টা। উখিয়ার বালুখালি কুতুপালংয়ে রোহিঙ্গাদের ৭ নম্বর ক্যাম্প।

সেখানেই কথা হলো সালমা বানুর সঙ্গে। যেভাবে স্মার্টলি প্রত্যেকটি কথার জবাব দিলেন তাতে মনে হলো, তাদের আত্মবিশ্বাস জন্মেছে যে, এখান থেকে তাদের আর কেউ সরাতে পারবে না।

৭ নম্বর ক্যাম্পটিতে পাহাড় পুরোপুরি না কেটে ভাঁজে ভাঁজে ঘর তৈরি করা হয়েছে। এসব ঘরের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় যতদূর চোখ পড়ে, তাতে অন্ধকার ঘরে মানুষ আছে বোঝা গেলেও কী করছে তা বোঝা যায় না। দুই একটি ঘরে উঁকি দিয়ে দেখা গেল, একজন বয়স্ক ব্যক্তি তার সামনে কয়েকজন অল্প বয়সের ছেলেকে নিয়ে কী যেন আলোচনা করছেন। বাতাসে কোনো ঘরের পর্দা উঠলে দেখা যায় বেশ কয়েকজন অল্পবয়সী মেয়ে গাদাগাদি করে শুয়ে বা আধা শোয়া হয়ে আছে। যে ঘর থেকে সালমা বানু বের হয়েছেন, সেখানেও সুঠাম দেহের একজনকে বসে থাকতে দেখা গেল। চলতি পথে যে কয়েকটা ঘরেই চোখ গেল সবগুলো ঘরের মেঝে পাকা।

ঘরের বাইরে রোহিঙ্গা পুরুষরা বিভিন্ন জায়গায় গোল হয়ে বসে আড্ডা দিচ্ছেন। তাদের অনেকেই ক্যাম্পের ভেতরে দোকান বসিয়েছেন। সেসব দোকানে চা, বিস্কুট, কলা বিক্রি হয়। কোনো দোকানে ছোলা, পেঁয়াজু বানিয়ে রাখা হয়েছে। আবার অনেক দোকানে টিনের বাক্সে পানি ভরে সেখানে বার্মিজ ড্রিংকস, পানির বোতল রাখা হয়েছে। সূর্য তাপ থেকে বাঁচতে বোতলগুলোর ওপরে ভেজা চটের বস্তা দিয়ে ঢেকে রাখা। এক দোকানে দেখলাম পানির মধ্যে পাউরুটি মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে। জিজ্ঞেস করতে জানালো, ওটা নাকি এক ধরনের ফালুদা। দোকানে দোকানে আড্ডা চলছে, কেউ খাচ্ছে, কেউ বসে আছে শতভাগ আয়েশি ভঙ্গিতে। অনেক দোকানে দেদারসে হিন্দি গান বেজে চলছে। কোথাও এক টেবিলে দুই তিনটি ছেলে বড় আলখাল্লা, মাথায় টুপি পরে খাতায় কী যেন লিখে রাখছে। জিজ্ঞেস করলেও উত্তর মিললো না।

অনেকগুলো মনোহারি দোকান। তেল, সাবান থেকে শুরু করে বার্মিজ পণ্য বা চাল ডালও আছে। চোখের সামনেই দেখলাম একজন মাথায় করে দুই বস্তা চাল নিয়ে দোকানে রাখলেন। বোঝা গেল সাহায্যের এই চাল সে দোকানে বিক্রি করতে এনেছে। ক্যাম্পের রাস্তার পাশে মাছ, সবজি বিক্রি করছে কেউ কেউ। এরমধ্যে একসঙ্গে কয়েকজনকে দেখলাম গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে, বাড়ির চাল, খুঁটি বা বেড়ার ধার সবখানেই সোলার প্যানেল বসানো।

এসব দেখতে দেখতে চলে এলাম ক্যাম্পের এক কিনারে। সেখান থেকে চারিদিকে যতদূর চোখ যায় তাতে শুধুই রোহিঙ্গা ক্যাম্প। না পাহাড়, না গাছ না কোনো জমি। তবে, ক্যাম্পের খুপরি ঘরের চালে লাউ, শিমের মাচা দিয়ে কিছুটা সবুজ রঙ চোখে পড়ল। ফেরার পথে আনমনে নিজেকেই জিজ্ঞেস করলাম, এমন নিশ্চিত জীবন পেলে কেউ অন্য কোথায় কেন যেতে চাইবে? ওদের তো মনে হচ্ছে এই জীবন আজীবনের।

সব ক্যাম্পের ভেতরেই দেশ-বিদেশের নামকরা ছোটবড় বিভিন্ন এনজিও সংস্থার সেন্টার। সেন্টারগুলো তৈরি হয়েছে বাহারি ডিজাইনে। রাখা হয়েছে রোহিঙ্গাদের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার সব ধরনের উপকরণ। শুধু যে ক্যাম্পের ভেতরে তা নয়। বিভিন্ন খোলা জায়গাতেও জমি, পাহাড়, গাছ নষ্ট করেই তৈরি হয়েছে এনজিও সেন্টার। শুরুতে সেন্টারগুলো শুধু বাঁশ বা তিরপল দিয়ে তৈরি হলেও এখন ইট, সিমেন্ট দিয়ে তৈরি হচ্ছে অনেক স্থাপনা।

১৮ মার্চ। টেকনাফের আগে হ্নীলা বাজার পার হয়ে জাদিমুরা ২৭ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্প। এখানে পাহাড়ের একটা অংশ একেবারে কেটে সমান করা হয়েছে। সুপেয় পানির ব্যবস্থা, টয়লেট, স্যুয়ারেজ সিস্টেম সবই পরিকল্পিত। বাচ্চারা খেলাধুলা করছে। যথারীতি বড়রা আড্ডাই দিচ্ছে। ঘরগুলোর মাথার ওপরে লাউ, কুমড়ার সবুজ ডগা বিছিয়ে গেছে। একটি পরিবারে এনজিওর কর্মীরা দেখিয়ে দিচ্ছিলেন কীভাবে বস্তার মধ্যে বিভিন্ন গাছের চারা লাগাতে হবে। খুব সাগ্রহেই রোহিঙ্গা নারীরা এসব কাজে সহায়তা করছে। তাদেরকে আবার গাছ লাগানোর পরিকল্পনা কেন? সেখানে কাজ করা এনজিও কর্মীদের কাছেই জানা গেল, সরকার নাকি বলছে, না চাইতে সবই পাচ্ছে। শুধু মুখে তুলে দেওয়া বাকি। তো একটু কষ্ট করে খাক না। মনে মনে ভাবলাম, গাছ লাগানোর মতো চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পর সেটা কি মুখে তুলে দেওয়া হল না? বাহ, এই সুখ কে ছাড়বে ভাই?

কুতুপালংয়ের ক্যাম্পগুলো একবারে মেইন রাস্তার ধারে। যদিও বলা হয়েছে ক্যাম্পের বাইরে কেউ বের হতে পারবে না। কিন্তু আদতে যা চলছে তা না দেখলে বিশ্বাস করানো কঠিন। মেইন রাস্তার ধারে রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন ধরনের দোকান, খাবার হোটেল, ব্যবসা বাণিজ্য সব চলছে। এভাবে দেখতে গিয়ে হঠাৎই চোখে পড়ল নিরাপত্তার জন্য সীমানা প্রাচীর। কিন্তু লাইন টেনে খুঁটি বসানো হলেও কোনো কাঁটাতার বা জাল চোখে পড়ল না। নিশ্চয়ই কাজ এখনো শেষ হয়নি। এটা ভেবে অনেক দূর পর্যন্ত নিজের চোখে দেখতে গিয়ে একই দৃশ্য দেখলাম। শুধু খুঁটি ছাড়া আর কিছু নেই। কয়েকজন এনজিও কর্মীকে জিজ্ঞেস করতেই তারা বললো, দিতে দেওয়া হয়নি। মানবাধিকার কমিশন নাকি করতে দেয়নি। কারণ, বাতাস, পানি নাকি আটকে দেওয়া সম্ভব না। এতে সবার অধিকার আছে। মনে পড়ল প্রায় ৬ মাস আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছিলেন, জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে ক্যাম্পের চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হবে। যতদূর মনে পড়ে, এই ঘোষণা দেওয়ার আগে এনজিও সংস্থাগুলোর সঙ্গে সরকারের মতপার্থক্যও দেখা দিয়েছিল। এরপরের দৃশ্য তো নিজের চোখেই দেখলাম।

উখিয়া থেকে ক্যাম্প শুরু হয়ে ঠেকেছে টেকনাফ পর্যন্ত। সবই রাস্তার পশ্চিম পাশে। তাই উখিয়া থেকে টেকনাফ যাওয়া বা ফেরার পথে রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় বিজিবি ও সেনাবাহিনীর চেকপোস্ট। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যাওয়ার গাড়িতে আমিও উঠে পড়েছিলাম। দেখলাম উখিয়া, কুতুপালং থেকে দেদারসে উঠছে রোহিঙ্গারা। ঠিক চেকপোস্টের আগে গাড়ি থেকে নেমে যাচ্ছে তারা। পাশে থাকা একজনকে বললাম, এত চেকিং তাহলে তারা গাড়িতে ওঠার সাহস পাচ্ছে কোথেকে? তখন তিনি বললেন, যারা নেমে গেল তারাই চেকপোস্ট পার হয়ে আবার গাড়িতে উঠবে। এটা সবাই জানে। এর কথার মধ্যেই দেখলাম বিজিবি বা সেনাবাহিনীর লোকজন গাড়িতে উঠে কারও কারও পরিচয় পত্র দেখতে চাইল। এরপর গাড়ি থেকে নেমে গেলে স্থানীয়রা ফিসফাস করে বললেন, লাভ কি রোহিঙ্গারা তো স্থানীয় মানুষের পরিচয়ে পরিচয়পত্র করে নিয়েছে। খালি খালি নামকা ওয়াস্তে চেক করে আমাদের সময় নষ্ট করে। এরপর ড্রাইভারকে তাড়া দিলেন গন্তব্যে যেতে।

দুই একটি চেকপোস্টের চেকারদের চেক করার ধরণ দেখে খানিকটা বিরক্তি লাগল। মনে হল ইচ্ছের বিরুদ্ধে করছে, মনোযোগ কম। তবে, আমার একদিনের দেখায় এসব ধারণা ভুলও হতে পারে।

কথা হচ্ছিল অটো রিকশাচালক শাহিনের সঙ্গে। টেকনাফের স্থানীয় তিনি। ঘোরার ফাঁকে কখনো প্রশ্নের জবাবে কখনো নিজে থেকেই কথা বলছিলেন। হঠাৎই বললেন, আমরা এখন আগের চেয়ে অনেক কষ্টে আছি। রোহিঙ্গাদের কথা না শুনলে উল্টো গালি দেয়, ভয় দেখায়। আগে যে কাজে ৫শ টাকা পাওয়া যেত। এখন ৩শ টাকা। সব যেন কেমন হয়ে যাচ্ছে। লোকজন অনেক কষ্টে আছে আপা।

বালুখালির আরেক অটোরিকশাওয়ালা নুরুল আমিন। বললো, আপা এখানকার পরিস্থিতি খুব ভয়ংকর হয়ে গেছে। বললাম কেন? বললো, গতকালও র‌্যাব ছিল। সাদা পোশাকে পুলিশ ঘোরে। কাউরে ছাড় দেয় না। আমরাও খুব ভয়ে থাকি। বললাম আপনার ভয় কেন? আপনি তো স্থানীয়। তার উত্তর, ইয়াবা ব্যবসা বেড়ে গেছে। কখন কে ইয়াবা নিয়ে গাড়িতে ওঠে কে জানে। তখন তো আমারেও ছাড়বে না। নুরুল আমিনের কথায় যে আতঙ্ক তার আভা যেন ফুঠে উঠল তার মুখেও।

২০০৮ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি রোড শো কাভার করতে টেকনাফ থেকে কক্সবাজারে গিয়েছিলাম। সে সময় রাস্তা ছিল দুর্গম। নাফ নদীর পাশ দিয়ে, পাহাড়ি পথ দিয়ে যেতে শরীর শিউরে উঠত। হঠাৎ পাহাড়ের খাঁজে বা অল্প কিছু জায়গায় লোকালয় চোখে পড়ত। কিন্তু আজ কী দেখছি। উখিয়া থেকে টেকনাফ এফোঁড়-ওফোঁড় হয়ে গেছে। সড়কে এনজিওগুলোর কোটি কোটি টাকার অসংখ্য গাড়ি সাঁই সাঁই করে চলছে। দামি দামি মোটরসাইকেল। অটোরিকশা, সিএনজি, বাস চলছে শহরের মতো। চলার সুবিধার্থে রাস্তা তৈরি হচ্ছে। এ কারণে রাজধানীর মতো এখানেও তৈরি হচ্ছে যানজট। রাস্তার দু’পাশে বাড়ি তৈরি করেই ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। কোনো এনজিও অফিস বা তাদের কর্মীদের। রাতে একা চলাফেরা করতে আর তেমন ভয় পাওয়ার কিছু নেই। লোকালয়, দোকানপাটে ভরপুর। পায়ে পায়ে ঠেকছে মানুষ।

টেকনাফ থেকে সন্ধ্যায় বাসে ফিরছি উখিয়ায়। হলুদাভ সূর্যটা ধীরে ধীরে দূরের পাহাড়ের নিচে মিলিয়ে গেল। এরপর আনমনেই চোখ গেল নিচের ক্যাম্পগুলোতে। ধীরে ধীরে অন্ধকার নামছে। সে অন্ধকারের নিচে কিছুক্ষণের জন্য ঢাকা থাকবে অনেক কিছু। আমার এক সাবেক সহকর্মী এখন দেশীয় একটি এনজিওর হয়ে কাজ করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। একটি জরিপের কাজে এক রোহিঙ্গা পরিবারের হিসেব নিতে গিয়ে তাকে বলা হয়েছে হিসেব নিচ্ছেন কেন? আমাদের পাঠিয়ে দেবেন? শোনেন এসব করে লাভ হবে না। এখান থেকে ফিরে যেতে পারবেন না! আচ্ছা, এই আস্ফালন কি এমনি এমনি হয়েছে?

শুনলাম অনেকেই বাংলা ও ইংরেজি দুটোই শিখছে। কেউ কেউ মিয়ানমারের পাঠ্যসূচি অনুযায়ী পড়াশোনা করছে যদি কখনো ফিরতে পারে তাহলে যেন অসুবিধা না হয়। কেউ বলছে, একটা ডানা থাকলে উড়ে চলে যেত নিজের মাটিতে। আর বেশিরভাগকেই দেখলাম চিন্তামুক্ত আয়েশী ভঙ্গিতে থাকতে। বডি ল্যাঙ্গুয়েজ বলছে, এই সুখে কেউ আঘাত করতে এলে দেখিয়ে দেব!

আপা কোথায় নামবেন? হঠাৎ কন্ডাকটরের ডাক শুনতে পেলাম। এটা বালুখালি আপনি কোথায় নামবেন? বললাম উখিয়া। আচ্ছা। আবার চোখ গেল দূরের অন্ধকারে। না ঠিক অন্ধকার নয়। এই রাতেও পাহাড়ের চোখ জ্বলছে। মনে পড়ল সব বাড়িতেই তো সোলার প্যানেল আছে। ঘরে আসবাব নেই, পুরুষদের কাজ নেই ঠিকই। বাকি আর সব সুবিধাই আছে ওদের।

এনজিওর হয়ে কাজ করতে গিয়ে হয়তো আমার অনেক ভাইবোনের কর্মসংস্থান হয়েছে। কিন্তু ওদের চোখের দিকে তাকালে বুঝতে পারি এই টাকা ওদের গলা দিয়ে নামতে কত কষ্ট হয়। কর্মহীনতার এই দেশে সে কষ্ট গিলে ফেলে ওরা। ওদের চোখ বলতে থাকে, পাহাড় নেই, গাছ নেই, ফসলের জমি নষ্ট ইট, সুড়কিতে। স্থানীয় কর্সংস্থানেও প্রভাব পড়ছে। সাময়িক নিশ্চিত জীবনকে ভবিতব্য চোখেই দেখছে রোহিঙ্গারা। উল্টো আস্ফালন দেখাচ্ছে আশ্রয়দাতাদের। লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। নিজেদের সবকিছুই শেয়ার করতে হচ্ছে স্থানীয়দের। এখানকার কোনোকিছুই যেন আর একার নয়। উল্টো আতঙ্কে দিন পার করছে আশ্রয়দাতারা।

জাতিসংঘের হিসেবে বিশ্বের সবচেয়ে নীপিড়িত মানুষদের মানবতার খাতিরে সাময়িক আশ্রয় দিয়েছে তৃতীয় বিশ্বের জনবহুল দেশ বাংলাদেশ। এরপর মিয়ানমার বা আন্তর্জাতিক মহলের আচরণ আমরা দেখেছি। এরপরের ভবিষ্যৎ কী হতে পারে? সত্যি হচ্ছে, এ মানুষগুলোকে সরাবো কীভাবে? সত্যি হচ্ছে, আমার খেয়ে আমার পরে আমারই চরম বিপদের কারণ হিসেবে তৈরি হচ্ছে তারা।

আপা উখিয়া আইসা পড়ছি। ও, হ্যাঁ। রাত ৮টা। গাড়ি থেকে নামছি। আমার ঠিক পেছনেই গেঞ্জির ওপর লুঙ্গি গিঁট দেওয়া দুই তরুণ নেমে গেল। হাতে ঘড়ি, স্মার্ট ফোন, টর্চ লাইট। চোখের দিকে তাকাতেই শরীরে একটা শীতল বাতাস বয়ে গেল। দ্রুত পায়ে বাসার দিকে এগোচ্ছি। দরজা পর্যন্ত আসতে আসতে মনে হলো, আচ্ছা, শিগগিরই কি আমরা গৃহযুদ্ধের দিকে যাচ্ছি?

লেখক: সাংবাদিক ও উন্নয়ন কর্মী

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।