আমরা জানি “সাফল্য একটি যাত্রা”তাই আমরা কেবল বাংলাদেশের আকাশে নয়, চীনসহ প্রতিবেশী দেশগুলিতেও ডানা ছড়িয়ে দিব খুব শিগগিরই ইনশাআল্লাহ।
“আমরা কোভিড-১৯ এর বিপরীতে প্রমাণিত যোদ্ধা।
কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবের কারণে পৃথিবীর বহুদেশে বাংলাদেশি নাগরিকরা আটকে পড়ে আছে। বাংলাদেশ সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগতিায় চেন্নাই থেকে প্রায় ৩০০০ যাত্রী ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। এছাড়া ব্যাংকক থেকে মরদেহসহ আটকে পড়া বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে ইউএস-বাংলা। দেশের আমদানী-রফতানী বাণিজ্যকে সূদৃঢ় করার জন্য এই দূর্যোগকালীন সময়ে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স কার্গো ফ্লাইট পরিচালনা করছে। ইতোমধ্যে ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর, কলকাতাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গন্তব্যে অত্যন্ত সুনামের সাথে কার্গো ফ্লাইট পরিচালনা করছে। সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের শুরুর মূহূর্তে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স সম্মুখ যোদ্ধা বিশেষ করে ডাক্তার, নার্সসহ স্বাস্থ্যসেবার সাথে যারা যুক্ত তাদেরকে পারসোনাল প্রটেকটিভ ইক্যূইপমেন্ট (পিপিই), মাস্ক, হ্যান্ড গ্লভস, ফেস শিল্ড, হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ স্বাস্থ্যসেবার বিভিন্ন উপকরণ বিনামূল্যে বিতরণ করেছে। করোনা ভাইরাসের কারণে সারাদেশ যখন লকডাউন অবস্থায় তখন ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স হাজার হাজার কর্মহীন মানুষকে ঈদ উপহারসামগ্রী বিতরণ করেছে। সামাজিক ও মানবিক গুণাবলির জন্য ইউএস-বাংলা কর্তৃপক্ষ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে যখন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের কারণে একের পর এক আন্তর্জাতিক রুট বন্ধ হতে থাকে তখনও ইউএস-বাংলা কর্তৃপক্ষ মনোবল সুদৃঢ় রেখেছে। সারাবিশ্বের অনেক খ্যাতিমান এয়ারলাইন্সগুলি চরম অর্থনৈতিক সংকটে দিনানিপাত করছে, পাইলট, কেবিনক্রু, ইঞ্জিনিয়ারসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছাঁটাই প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে, সেখানে ইউএস-বাংলা কোনো কর্মীকে ছাঁটাই না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যেখানে ইউএস-বাংলার ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে মানবিক হওয়ার দৃষ্টান্ত হতে দেখেছি। মহামারি চলাকালীন ইউএস-বাংলার অভিজ্ঞতা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে এবং বিমান পরিবহনের উদাহরণ হিসেবে সামনের দিনগুলিতে সবার জন্য কাজে লাগবে।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স বেশ কিছু পরিকল্পনা নিয়ে নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল। ১৭ জুলাই ২০১৪, ড্যাশ৮-কিউ৪০০ এয়ারক্রাফট দিয়ে ঢাকা-যশোর রুটে ফ্লাইট পরিচালনার মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে। প্রথম বছর লক্ষ্য ছিলো বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সকল রুটে এক বছরের মধ্যে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করবে। যেমন পরিকল্পনা তেমনি কাজ, প্রথম বছরেই ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, সিলেট, যশোর, কক্সবাজার, সৈয়দপুর, বরিশাল ও রাজশাহী রুটে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে। এরপর একটু বৃহৎ আঙ্গিকে, দু’বছর শেষ হওয়ার পূর্বেই দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করার পরিকল্পনা। যা সত্যিই সেই মাহেদ্রক্ষণ ১৫ মে ২০১৬ ঢাকা থেকে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু রুটে ফ্লাইট পরিচালনার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক রুটে ডানা মেলে। এরই ধারাবাহিকভাবে তৃতীয় বছরে মধ্যপ্রাচ্যসহ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করার পরিকল্পনা এবং বিমান বহরে বৃহদাকার এয়ারক্রাফটের সংযোজন। তৃতীয় বছরের মধ্যেই তিনটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ এয়ারক্রাফট সংযোজন করে ঢাকা থেকে মাস্কাট, দোহা, সিঙ্গাপুর, কুয়ালালামপুর, ব্যাংকক ও কলকাতা রুটে ফ্লাইট চালানো শুরু করে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। চতুর্থ বছরের পরিকল্পনায় বাস্তবায়নের দৃঢ় অঙ্গীকার ছিল, বাংলাদেশ থেকে প্রথমবারের মতো চীনের কোনো শহরে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ফ্লাইট পরিচালনা করবে। সকল ধরনের কমপ্লায়েন্স পূর্ণ করে ২০১৮ সালের ২৬ এপ্রিল থেকে ঢাকা-গুয়াংজু রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে বাংলাদেশের এভিয়েশনে ইতিহাস সৃষ্টি করে।
ইউএস-বাংলা অগ্রযাত্রার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে বাংলাদেশে থেকে যারা চিকিৎসা সেবা নেয়ার জন্য ভারতের চেন্নাই ভ্রমণ করে তাদের জন্য বাংলাদেশ থেকে সরাসরি ঢাকা-চট্টগ্রাম-চেন্নাই রুট চালু করে যা অত্যন্ত জনপ্রিয় রুট হিসেবে চিহ্নিত হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজের গড় বয়স দশ বছরের কম রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেই জন্য গত এক বছরে ইউএস-বাংলার বিমান বহরে ছয়টি ব্র্যান্ডনিউ এটিআর ৭২-৬০০ এয়ারক্রাফট সংযোজন করে। লক্ষ্য অনুযায়ী বর্তমানে ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজের গড় বয়স প্রায় ১১ বছর, যা বাংলাদেশে বেসরকারী বিমান সংস্থার মধ্যে সর্বনিম্ন। ইউএস-বাংলার বিমানবহরে মোট তেরটি এয়ারক্রাফট রয়েছে। যার মধ্যে ৪টি বোয়িং ৭৩৭-৮০০, ৬টি ব্র্যান্ডনিউ এটিআর ৭২-৬০০ এবং ৩টি ড্যাশ৮-কিউ৪০০ এয়ারক্রাফট।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স আন্তর্জাতিক রুট শুরু করার পর থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে লাগেজ ডেলিভারি দেয়া, বাংলাদেশের এভিয়েশনে একটি অভাবনীয় সাফল্য। যা পরবর্তীতে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। গত ছয় বছরে ৯৮.৭% অন-টাইন ফ্লাইট অপারেশন ইউএস-বাংলার সাফল্যের পেছনে বড় ভূমিকা পালন করছে।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স বিগত দিনে বন্ধ হয়ে যাওয়া বাংলাদেশের বিভিন্ন এয়ারলাইন্স এর ব্যর্থতাগুলি চিহ্নিত করে এবং বিশ্বের বিভিন্ন এয়ারলাইন্স এর সফলতার গল্পগুলিকে পর্যালোচনা করে যাত্রীদের সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার মানসিকতায় এগিয়ে চলেছে। ইউএস-বাংলার খারাপ সময়গুলিতেও সম্মানিত যাত্রীরা আমাদের সাথে ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন সেই প্রত্যাশাও করছি।
অন্ধকার কেটে আলো আসবে, পরিবর্তিত বিশ্বে নতুন পৃথিবীর আগমনে আবার ইউএস-বাংলা এগিয়ে যাবে, এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ এভিয়েশন।
যাত্রীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সকল ধরনের স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের জন্য প্রস্তুত ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স।
লেখক: জেনারেল ম্যানেজার, পাবলিক রিলেশনস
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স লিমিটেড
বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০২০
এমএমএস