ক. বাংলাদেশে চিকিৎসা অপচয়ের মূল কারণ সমূহ
বাংলাদেশে ব্যক্তি স্বাস্থ্য খাতে প্রায় ৭০% ব্যয় হয় যা পৃথিবীতে সর্বোচ্চ। এত অধিক ব্যয়ের মূল কারণ বাংলাদেশে কোনো রূপ উন্নত মানের প্রাইভেট বা বেসরকারি স্বাস্থ্য বীমা কিংবা সরকার নিয়ন্ত্রিত জাতীয় স্বাস্থ্য বীমা না থাকা।
১. রোগীরা চিকিৎসকদের নিকট থেকে ন্যূনতম ৫ মিনিট পরামর্শ সময় না পাওয়ায়, রোগী ও তার আত্মীয় স্বজন চিকিৎসকের ওপর আস্থা হারায়, এমনকি নামিদামী চিকিৎসকের ওপরও। রোগীর উপসর্গ সমূহের বর্ণনা শেষ করার পূর্বেই চিকিৎসক রোগীকে একটি ব্যবস্থাপত্র ধরিয়ে দেন, কোন ওষুধ কোন উপসর্গ উপসমের জন্য দিয়েছেন, কখন সেবন করতে হবে খাবার পূর্বে না পরে তা চিকিৎসক বুঝিয়ে বলার পূর্বেই পরবর্তী রোগী পরামর্শ কক্ষে প্রবেশ করেন, কোনটা কোন রোগের ওষুধ এবং এসব ওষুধের সম্ভাব্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, মিথষ্ক্রিয়া রোগী জানার সময় পায় না, রোগী ওষুধের ব্যবহার সম্পর্কিত পুরো তথ্য না জানার অসন্তোষ নিয়ে চিকিৎসকের চেম্বার ত্যাগ করেন। সামান্য সমস্যা হলে রোগী ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেন এবং অনেক সময়ে অন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
২. রোগীরা চিকিৎসকদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে দামি ওষুধকে বেশি ভালো ওষুধ মনে করেন। রোগী এবং চিকিৎসক উভয়ে জানেন না যে, দামি ওষুধ বেশি নকল এবং ভেজাল ও নিম্নমানের হয়। রোগী দামও বেশি দিলেন, আবার অকেজো খারাপ ওষুধও সেবন করলেন। রোগ না সারায় প্রতি বছর কয়েক লাখ বাংলাদেশি রোগী ভারত, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া এমনকি কতক আমেরিকা ও ইংল্যান্ড যাচ্ছেন এবং বিদেশে চিকিৎসা ব্যয়ের কারণে তাদের দুর্নীতি ও দারিদ্র্য বাড়ছে। গবেষক ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বিআইডিএসে কর্মরত থাকাকালীন ১৯৯৪ সালে তথ্য প্রকাশ করেছিলেন যে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অতিরিক্ত চিকিৎসা ব্যয় এবং পুলিশের হয়রানির কারণে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের অবসান হচ্ছে না।
৩. চিকিৎসকরা বিভিন্ন আর্থিক সুবিধা নিয়ে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির মেডিক্যাল রিপ্রেজেনটিটিভ দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছেন। সোজা কথায়, ঘুষ নিচ্ছেন। তারা আর্থিক বিবেচনায় নির্ধারিত কোম্পানির ওষুধ লেখা ও অপ্রয়োজনীয় অতিরিক্ত রোগ নির্ণয় পরীক্ষা করানোর জন্য ক্লিনিক/ ল্যাবরোটরি থেকে ৫০-৬০ শতাংশের বেশি কমিশন বাবদ পেয়ে থাকেন। অর্থাৎ চিকিৎসকরা অতিরিক্ত দামি ওষুধ লিখছেন এবং অতিরিক্ত রোগ নির্ণয় পরীক্ষাও করাচ্ছেন। সকল প্রাইভেট হাসপাতাল মালিক এবং দুর্নীতিতে অংশ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিন ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে। উদাহরণ ছাড়া চরিত্র পরিবর্তন হবে না।
৪. চিকিৎসকের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে রোগীরা আইসিইউ/সিসিইউর সন্ধানে হন্ন হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে, এমনকি নাম গোত্রহীন ক্লিনিকে। কতক হাসপাতাল বা ক্লিনিকে ভেন্টিলেটর, সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা, ডিফিব্রিলেটর, কার্ডিয়াক মনিটর, ইসিজি ও ইকো এবং বিবিধ সিরিঞ্জ পাম্প থাকলেও আইসিইউ পরিচালনার জন্য সার্বক্ষণিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আইসিইউ/সিসিইউ বিশেষজ্ঞ নেই। অথচ হাসপাতালের বিছানার চাদর, মাস্ক, পেপার গাউন, তোয়ালে, জুতার কভার ও বালিশের কভার পরিবর্তন এবং সময়ে অসময়ে বিভিন্ন চিকিৎসক রোগীকে পরিদর্শন করে রোগী থেকে ফি আদায় করছেন। আইসিইউ/সিসিইউতে ভর্তি থাকার সময়ে ভেন্টিলেটর, কার্ডিয়াক মনিটর, পালস অক্সিমিটার, সিরিঞ্জ পাম্প, ওষুধের ডোজ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র প্রভৃতি ব্যবহারের জন্য আলাদা আলাদা চার্জ আদায় করা হয়। এটা অনৈতিক এবং দুর্নীতির অংশ। দৈনিক কত লিটার অক্সিজেন ব্যবহার করা হয়েছে তার হিসাব নেই। অথচ আইসিইউ থেকে বিদায় কালে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা অক্সিজেন চার্জ বাবদ রোগী থেকে আদায় করা হয়। দিনে দুপুরে ডাকাতি। দুদক কি করছেন? উল্লেখ্য যে, রোগী বা তাদের আত্মীয় স্বজনরা এমনকি চিকিৎসকরা প্রতি হাজার লিটার অক্সিজেনের ক্রয় মূল্য জানেন না। তাই প্রাইভেট হাসপাতাল মালিকরা রোগীদের ঠকায়, প্রতারণা করে। ফলে প্রতিদিন আইসিইউ বিল বাড়ে দ্রুত গতিতে, যা দৈনিক ৫০ থেকে দেড় লাখ টাকাও হতে পারে। সৌভাগ্যবশত গণস্বাস্থ্য আইসিইউতে এমন একজন দায়িত্বে আছেন যিনি অত্যন্ত নিবেদিত এবং কানাডা, বৃটেন, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন। আইসিইউ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নজীব মোহাম্মদ ২০০১ সালে ইউরোপিয়ান ডিপ্লোমা ইন ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন অর্জন করেছেন। সম্ভবত বর্তমানে বাংলাদেশে অধ্যাপক নজীবের চেয়ে অধিকতর জ্ঞান সম্পন্ন সিনিয়র কোনো আইসিইউ বিশেষজ্ঞ নেই। পরে তিনি ক্রিটিক্যাল কেয়ার, লিভার আইটিইউ ও মাল্টিডিসিপ্লিনারি আইসিইউতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত হাসপাতাল সমূহে এবং সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতাল ও অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব মেলবোর্ন হাসপাতালে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ও বিশেষ কর্মদক্ষতা অর্জন করে দেশে ফিরেছেন।
আইসিইউতে রোগী থাকলে তিনি দৈনিক ১৬-১৮ ঘণ্টা সময় হাসপাতালে কাটান। আইসিইউ বিশেষজ্ঞরা জুনিয়র চিকিৎসক বা নার্সদের ফোন পাবার পর কত দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছেন তার ওপর আইসিইউর রোগীর জীবন নির্ভরশীল। তাকে দ্রুত ডাকার জন্য তিনি হাসিমুখে সব জুনিয়রদের ধন্যবাদ জানান, তাদের সঙ্গে নিয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের নিয়ে রোগী দেখেন, রোগী পরীক্ষা করা শেখান এবং পরে আলাদা ভাবে প্যারামেডিক, ওয়ার্ডবয়, ক্লিনার এবং রোগীর আত্মীয় স্বজনকে সযত্নে রোগীর সমস্যা বুঝিয়ে বলেন।
৫. বাংলাদেশের অধিকাংশ বিশেষজ্ঞরা একটিও আন্তর্জাতিক মেডিক্যাল জার্নাল কিনে না পড়ায় তাদের জ্ঞানের পরিধি সীমিত হয়ে যাচ্ছে এবং সহজে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের মিথ্যাচারে বিভ্রান্ত হচ্ছেন, আস্থাহীনতায় ভুগছেন। চিকিৎসকরা ওষুধের মূল্য জানতে আগ্রহ প্রকাশ করেন না। দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতি। বাণিজ্যিক (ব্র্যান্ড/ট্রেড নেম) নামের ওষুধে দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে রোগের উপশম না হলে চিকিৎসক এন্টিবায়োটিক বদলিয়ে দেন। প্রকৃত পক্ষে অধিকাংশ ক্ষেত্রে হয়তো এন্টিবায়োটিকের প্রয়োজনীয়তাই নেই। চিকিৎসকরা ওষুধ লেখেন জেনেরিক (জেনেরিক) নামে নয়, বিভিন্ন ব্র্যান্ড নামে। ফলে রোগী ওষুধের প্রকৃত নাম জানতে পারেন না। অনেক সময় খেয়াল করেন না যে ওষুধ লিখছেন তা মূলত একই জেনেরিক গোত্রের। তারা ওষুধের প্রকৃত দামও জানেন না বলে অপ্রয়োজনে বেশি মূল্যের অধিক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সমন্বিত ওষুধ সমূহের বিধিব্যবস্থাপত্র লিখে থাকেন।
খ. কোভিড-১৯ রোগের সংক্রমণ এবং চিকিৎসা
চীনের সবচেয়ে বড় শিল্পাঞ্চল উহান প্রদেশে ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে নভেল করোনা ভাইরাস কোভিড-১৯ আত্মপ্রকাশ করে এবং দ্রুত বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এর কারণে প্রথম মৃত্যু ঘটে চলতি বছরের ১৮ মার্চ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২৬ শে মার্চের সতর্কবাণীকে বাংলাদেশ সরকার গুরুত্ব দেয়নি। ফলে রোগটি বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। করোনা রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে মাগুড়ার চিকিৎসক ডা. খলিলুর রহমান তার অভিজ্ঞতার আলোকে তিন পর্যায়ে ভাগ করে করোনা রোগ ও তার চিকিৎসা সম্পর্কে একটি ছোট লেখা লিখেছিলেন তা শিক্ষনীয় বলে কিছু অংশ আমি পুনরায় উল্লেখ করছি।
‘কোভিড-১৯ একটি স্পর্শকীয় ভাইরাস। যা আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি বা কাশি থেকে বা আশে পাশের ৩-৬ ফুটের মধ্যে অবস্থিত বস্তু থেকে ব্যক্তিদের অসতর্কতার কারণে ছড়িয়ে পড়ে। স্টেফাইলো কক্কাস, স্ট্রেপটোকক্কাস, নিউমোকক্কাস প্রভৃতি ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে অন্য ব্যক্তিদের মধ্যে সংক্রমিত হয়। সাধারনত ৩-১৪ দিনের মধ্যে কোভিড-১৯ উপসর্গ প্রকাশ পায় তিন পর্যায়ে।
প্রথম পর্যায়ে ১-৩ দিন: শুরু হয় সাধারণ জ্বর, গায়ে মাথায় সামান্য ব্যথা ও শুষ্ক কাশি দিয়ে, যোগ হয় নাক দিয়ে হালকা পানি পড়া, হাঁচি কাশি ও তৃতীয় দিনে মৃদু শ্বাসকষ্ট। চুলকানি ও হাঁচিকাশি এলার্জির লক্ষণ।
দ্বিতীয় পর্যায় ৪-৬ দিন: হঠাৎ জ্বর বেড়ে ১০২ ডিগ্রি থেকে ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট উঠে, শুকনা কাশির সঙ্গে শ্লেষ্মা যুক্ত হয়। সর্বত্র মৃদু ব্যথা বিশেষতঃ গলায়, শ্বাসকষ্ট ক্রমান্বয়ে বেড়ে যায়, শ্লেষ্মাসহ হাঁচিকাশি বৃদ্ধি এবং খাওয়ায় অরুচি ও অনিদ্রা যোগ হয়। নিউমোনিয়ার লক্ষণ প্রকাশমান এবং রোগীর অস্বস্তি রোধের সঙ্গে ভীতি সঞ্চার ও লক্ষনীয়।
তৃতীয় পর্যায়: রক্তে অক্সিজেন সংমিশ্রণ বিভ্রাটে নিউমোনিয়ার সংক্রমণ ও কফ শ্লেষ্মা বৃদ্ধি বুকের ভেতর গড়গড় শব্দ শোনা যায় এবং স্বাভাবিকভাবে শুয়ে থাকায় অসুবিধা হয়, রোগী ক্রমে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।
গ. করোনা রোগীর চিকিৎসা ও ব্যয়
প্রথম পর্যায়ে রোগীকে আলাদা ঘরে রেখে আলাদাভাবে দেখাশোনা করাই মূল কাজ। এলাকার একজন চিকিৎসকের নিয়মিত পরামর্শ নিলে ভালো হয়। প্রায় সত্তর থেকে আশি ভাগ রোগী নিরাময় হয় নিজ বাড়িতে স্বল্প খরচে, স্বল্প সময়ে স্নেহ ও ভালোবাসায়। বোকামি করতে হবে না একই ওষুধ অকারণে বেশি দামে কিনে। এতে ভালোর চেয়ে অন্য সমস্যাও সৃষ্টি হতে পারে।
দিনে ১টা বা ২টা করে ৫০০ মিলিগ্রামের প্যারাসিটামলের টেবলেট দিনে এক থেকে তিনবার সেবন যুক্তি সংগত। প্যারাসিটামলের সঙ্গে অন্য উপাদান যেমন ক্যাফেইন বা ঘুমের ওষুধ মিশ্রিত না থাকা ভালো, এতে অন্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালসের প্যারাসিটামল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশ মতে উৎপাদিত, জি-প্যারাসিটামল, প্রতি টেবলেটের মূল্য সত্তর পয়সা অর্থাৎ ৭ টাকায় ১০টি জি-প্যারাসিটামল কিনতে পাওয়া যায়। অপর পক্ষে বাণিজ্যিক নামে বাজারজাতকৃত নাপা, নাপা প্লাস, নাপা এক্সট্রা প্রভৃতি এবং অপ্রয়োজনীয় অতিরিক্ত উপাদানসহ প্রস্তুত প্রতি টেবলেট দুই টাকা থেকে আড়াই টাকায় বিক্রি হয়। এতে রোগ দ্রুত সারে না, কিন্তু অর্থের অপচয় হয়।
হাঁচিকাশি অর্থাৎ এলার্জি নিবারণের এন্টি এলার্জি ওষুধ ৪ মিলিগ্রামের ক্লোরফেনারামিন দিনে একটি করে খেলে ভালো উপকার হয়। প্রতি টেবলেটের মূল্য মাত্র পঁচিশ পয়সা। গরম চা, মধু ও আদায় গলায় আরাম পাওয়া যায়। চুষে চুষে জি-ভিটামিন সি-২৫০ মিলিগ্রাম টেবলেট দিনে ৩/৪ টা খাওয়া যেতে পারে, প্রতি টেবলেট জি ভিটামিন সির মূল্য এক টাকা ত্রিশ পয়সা। অনেকে প্রতিদিন ২০ মিলিগ্রামের একটা বা দুটো জিংক টেবলেট গ্রহণের পরামর্শ দেন, খরচ টেবলেট প্রতি ১ টাকা।
কোয়ারেন্টিন রুমে (একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পৃথক থাকা) অবশ্যই এক বোতল ১০০ মিলিলিটারের জাইনানল বা জি-ক্লোরহেক্সাডিন থাকা দরকার। জীবাণুনাশক হিসেবে ব্যবহারের জন্য। ১০০ মিলিলিটারের মূল্য ১০০ টাকা। সাবানও ব্যবহার করবেন।
ভালো উপকার পাওয়া যায় গরম পানিতে কয়েক ফোটা টিংচার আয়োডিন কিংবা ইউকেলিপট্যাস তেল মিশিয়ে গরম বাষ্প নিলে।
অন্য সমস্যা যেমন পেট বা বুক জ্বালাপোড়া বা এসিড ভাব লাগলে দিনে একটি বা দুটি ২০ মিলিগ্রামের জি-ওমিপ্রাজল কেপসুল সেবন করলে নিরাময় নিশ্চিত। খরচ কেপসুল প্রতি মূল্য ৩ টাকা।
প্রথম পর্যায়ে নিরাময়ে ব্যর্থ ২০ শতাংশ রোগীকে অবশ্যই নিকটবর্তী সরকারি বা বেসরকারি ক্লিনিক হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি হতে হবে। তবে ভর্তির পূর্বে নিশ্চিত হতে হবে যে, সেখানে ছোট পালস অক্সিমিটার যন্ত্র এবং রোগীকে প্রয়োজন মাফিক সরাসরি অক্সিজেন দেওয়ার সুবিধা আছে। রক্তে পরিমিত অক্সিজেন সংমিশ্রিত না হলে রোগীকে মুখে বা নাক দিয়ে অক্সিজেন কিছুক্ষণ দিতে হয়। দেখতে হবে অক্সিজেন সংমিশ্রণ ৯২ শতাংশ- ৯৫ শতাংশের মধ্যে যেন থাকে। অতিরিক্ত অক্সিজেন দেওয়া অপচয় তো বটে, অনেক সময় ক্ষতিকরও।
বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিনের অধ্যাপক তারিক আলম করোনা পজিটিভ দ্বিতীয় পর্যায়ের রোগীদের প্রতিদিন একটি এন্টি হেলমিনথিক আইভারম্যাকটিন যার প্রতি টেবলেটের মূল্য ৫ টাকা এবং ১০০ মিলিগ্রামের ডক্সিসাইক্লিন হাইড্রোক্লোরাইড টেবলেট দিনে দুইবার পাঁচদিন সেবন করিয়ে রোগ নিরাময় লক্ষ করেছেন। হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি প্রথম দিনে ইনজেকশন মিথাইল প্রেডনিশোলন ২৫০ মিলিগ্রাম ২টি কিংবা ইনজেকশন ডেক্সামেথাসন ৪ মিলিগ্রাম মূল্য প্রতি ইনজেকশন মাত্র ১৫ টাকা দিনে দুইবার ৩ দিন, খরচ ৯০ টাকা।
নিউমোনিয়ার চিকিৎসার জন্য কো-এমক্সিক্লেভ ১-২ গ্রাম দিনে তিন বার কিংবা এরিত্রোমাইসিন/এজিথ্রোমাইসিন অথবা কেপসুল সেফেক্সিম (মূল্য ২০ টাকা) ৫ দিন সেবনের জন্য দেওয়া হয়।
দিনে কয়েকবার গরম পানির বাষ্প বা মেসিনের মাধ্যমে সালবুটামল মূল্য প্রতি ভায়াল ৮০ টাকা কিংবা বুডিসোনাইড অথবা এন-এসিটিল সংমিশ্রণে নেবুলাইজার ব্যবহারে শ্লেষ্মা বের করায় খুব উপকার পাওয়া যায়।
ব্যয়বহুল এন্টিভাইরাল রেমডিসিভির ব্যবহারে নিরাময়ে তিনদিন সাশ্রয় করায়। অন্য এন্টি ভাইরালের ব্যবহারে সুফলের প্রমাণ নেই। অর্থের অপচয় মাত্র। শিক্ষিত পেশাজীবীও প্রতারিত হচ্ছেন অপ্রমাণিত বিভিন্ন ধরনের ওষুধ ৫০ থেকে এক লাখ টাকায় কিনে। তাদের জ্ঞানচক্ষু কবে উম্মোচিত হবে?
আইসোলেশন ওয়ার্ডে ৮-১০ দিন ভালো নার্সিং সেবা ও নিয়মিত চিকিৎসা পেলে দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রায় সব রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যান, অনধিক ১০ শতাংশ রোগী বিভিন্ন জটিলতা ও একাধিক বিকল অঙ্গের সমস্যা নিয়ে তৃতীয় পর্যায়ে প্রবেশ করে।
তৃতীয় পর্যায়ের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয় বহুল এবং মূলত নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসা করাতে হয়। করোনা রোগে মৃত্যুহার ২ থেকে ৩ শতাংশের মধ্যে সীমিত।
লেখক: জাফরুল্লাহ্ চৌধুরী, ট্রাস্টি, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। শরিফুল হক রুমি, মেডিক্যাল কর্মকর্তা, গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০২০