ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

প্রধানমন্ত্রীর ডেল্টা প্ল্যান, অর্জিত হবে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০২০
প্রধানমন্ত্রীর ডেল্টা প্ল্যান, অর্জিত হবে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য

বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়নে গঠিত ‘ডেল্টা গভর্ন্যান্স কাউন্সিল’ মহাপরিকল্পনার অধীনে ২০৩০ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য ৮০টি প্রকল্প গ্রহণ করবে সরকার। এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে অর্জিত হবে উন্নয়নের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা। 

বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই কাউন্সিলের চেয়ারপারসন। তার হাত ধরেই ইতোমধ্যে সব ক্ষেত্রেই স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ।


১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনককে সপরিবারে হত্যার প্রায় ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এর পর থেকেই জননেত্রী শেখ হাসিনা নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করছেন।

সর্বশেষ উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে গঠিত ডেল্টা প্ল্যানের আওতায় বন্যা, নদীভাঙন, নদী ব্যবস্থাপনা, নগর ও গ্রামে পানি সরবরাহ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার দীর্ঘমেয়াদি কৌশল হিসেবে ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর আলোচিত ‘বদ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’ অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)।

জানা গেছে, উপকূলীয় অঞ্চলে ২৩টি প্রকল্পের জন্য বিনিয়োগ করা হবে ৮৮ হাজার ৪৩৬ কোটি টাকা। বরেন্দ্র এবং খরা-প্রবণ অঞ্চলের জন্য ৯টি প্রকল্পের আওতায় বিনিয়োগে হবে ১৬ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা। হাওর ও আকস্মিক বন্যাপ্রবণ অঞ্চলের জন্য ৬টি প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হবে ২ হাজার ৭৯৮ কোটি টাকা।  

এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের জন্য ৮ প্রকল্পের অনুকূলে ৫ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা, নদী ও মোহনা অঞ্চলে ৭টি প্রকল্পের অনুকূলে ৪৮ হাজার ২৬১ কোটি টাকা এবং নগরাঞ্চলের জন্য ১২টি প্রকল্পের অনুকূলে ৬৭ হাজার ১৫২ কোটি টাকা বিনিয়োগ প্রাক্কলন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়নের গঠিত কাউন্সিলের ভাইস-চেয়ারম্যান করা হয়েছে পরিকল্পনামন্ত্রীকে। সদস্য হিসেবে রয়েছেন- কৃষিমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, খাদ্যমন্ত্রী, ভূমিমন্ত্রী এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী। এছাড়া মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী, নৌমন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী, পানিসম্পদমন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে রয়েছেন। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্যকে এই কাউন্সিলের সদস্য সচিব করা হয়েছে।

এই কাউন্সিলকে ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়নে নীতিনির্ধারণ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, কৌশলগত পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দিতে হবে। এছাড়া ডেল্টা প্ল্যান হালনাগাদকরণে দিকনির্দেশনা, এই প্ল্যানের বিনিয়োগ পরিকল্পনা প্রণয়নে এই কাউন্সিলকে নীতিনির্ধারণ ও নির্দেশনা এবং ডেল্টা সংগঠন ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে এই কাউন্সিলকে দিকনির্দেশনা দিতে হবে।

ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়িত হবে নেদারল্যান্ডসের সহযোগিতায়। এ দেশটির এক-তৃতীয়াংশই সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে নিচু স্থানে অবস্থিত। দেশটির সিফল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সমুদ্রপৃষ্ঠের চার মিটার নিচে থাকায় জলাভূমি হিসেবে পড়ে ছিল। কিন্তু সুষ্ঠু পানি ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশটির সরকার ওই অঞ্চলকে পর্যটন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূলকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলেছে। তাদের এমন অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশ।

নেদারল্যান্ডসের মিনিস্ট্রি অব ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যান্ড দি এনভায়রনমেন্ট পানি ব্যবস্থাপনার ইতিহাস, কাজের প্রক্রিয়া, অতিরিক্ত পানির ব্যবহার, পানির ঘাটতি ও খরা, পানির গুণগত মানের উন্নয়নের বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা, প্রযুক্তির ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। পানি ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের যে সম্পর্ক রয়েছে তা বিভিন্ন তথ্যের মাধ্যমে তুলে ধরেছে। তাদের এই কর্মপরিকল্পনাকে কাজে লাগানো গেলে প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ বাংলাদেশ সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে। এদেশও নদীবাহিত পলি দিয়ে নতুন ভূমি পেতে পারে।

বন্যা নিয়ন্ত্রণে নেদারল্যান্ডস ও বাংলাদেশ অভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ডেল্টা প্ল্যান উভয় দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় সমস্যার বাস্তব সমাধানের জন্য উভয় দেশের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করা প্রয়োজন। এ বিষয়টি বিবেচনায় রেখে দীর্ঘ ৬০ বছরের ডেল্টা প্ল্যান-১৯৫৩ সফলভাবে বাস্তবায়নের পর নতুন এই ডেল্টা প্ল্যান গ্রহণ করা হয়েছে।

ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নে খরচ হবে ৩ হাজার ৭০০ কোটি ডলার বা ৩ লাখ কোটি টাকার বেশি। বর্তমানে পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা খাতে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) মাত্র দশমিক ৮ শতাংশ পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে খরচ করা হয়। নতুন মহাপরিকল্পনায় ২০৩০ সাল নাগাদ এই খরচ জিডিপির আড়াই শতাংশে উন্নীত করার কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে ২ শতাংশই আসবে সরকারি বিনিয়োগ থেকে। বেসরকারি খাত থেকে বাকি আধা শতাংশ বিনিয়োগ আসবে।

বাংলাদেশ গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পলিগঠিত ব-দ্বীপ। দক্ষিণাঞ্চলের বিশাল এলাকা নিম্নভূমি। খরা, ঘূর্ণিঝড়, নদীভাঙনের হুমকি মোকাবিলা করতে হয় এখানকার মানুষকে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ২০৫০ সালে এ দেশের প্রায় ১৪ শতাংশ এলাকা সমুদ্রে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে প্রায় ৩ কোটি লোক জলবায়ু শরণার্থীতে পরিণত হবে।  

ডেল্টা প্ল্যানে বন্যার ঝুঁকি কমানোর পাশাপাশি অর্থনৈতিক অঞ্চল ও শহর রক্ষা; নতুনভাবে জেগে ওঠা চর এলাকায় নদী ও মোহনা ব্যবস্থাপনা জোরদার করা; উপকূলীয় অঞ্চলে জেগে ওঠা নতুন জমি উদ্ধার এবং সুন্দরবন সংরক্ষণ করার উদ্যোগ থাকবে। আর এসব উদ্যোগের মধ্য দিয়েই পলিগঠিত এই বৃহত্তম ব-দ্বীপের মোহনায় জেগে উঠবে নতুন চর। আয়তন বাড়বে বাংলাদেশের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগের কারণেই এই মহাপরিকল্পনা এখন স্বপ্ন থেকে বাস্তবে পরিণত হয়েছে।  

লেখক: ডেপুটি এডিটর, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বাংলাদেশ সময়: ১৫১০ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০২০
টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।