ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

ইতিহাসের এক শ্বাসরুদ্ধকর সময়

নঈম নিজাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০০ ঘণ্টা, আগস্ট ৯, ২০২০
ইতিহাসের এক শ্বাসরুদ্ধকর সময় নঈম নিজাম

‘ঝিনুক নীরবে সহে যাও ভিতরে বিষের বালি, মুখ বুজে মুক্তা ফলাও’ -কবি আবুল হাসান।

ব্রিটেনে ভারতের হাইকমিশনার ছিলেন কুলদীপ নায়ার।

এ উপমহাদেশের একজন খ্যাতিমান সাংবাদিক। বাংলাদেশ প্রতিদিনেও মাঝেমধ্যে লিখতেন। আমাকে স্নেহ করতেন। সর্বশেষ স্ত্রীসহ ঢাকা সফরের সময় অনেক গল্প করলেন। হাঁটাচলা করতে সমস্যা হতো। সর্বক্ষণ তাদের পাশে থাকার জন্য বাংলাদেশ প্রতিদিনের সিনিয়র সহসম্পাদক শামছুল হক রাসেলকে দায়িত্ব দিলাম। দুজন বয়স্ক মানুষের সহায়তায় রাসেল সর্বক্ষণ লেগে ছিল। যাওয়ার আগে বললেন, তোমার এই ছেলেটি খুব ভালো। আশির দশকের শেষ দিকে ব্রিটেনে ভারতের হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন কুলদীপ নায়ার। সে সময় একদিন সাক্ষাৎ করতে গেলেন প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থেচারের সঙ্গে। সে ঘটনা তিনি লিখে গেছেন। থেচার তাঁকে বললেন, শিখ সম্প্রদায় গুরুদুয়ারা সফরের জন্য তাঁকে বারবার আমন্ত্রণ করেছে। কিন্তু যাননি, কারণ ওরা ইন্দিরাকে হত্যা করেছে। তিনি আক্ষেপ করেন ইন্দিরাকে নিয়ে। ইন্দিরা গান্ধী ছিলেন অন্য উচ্চতার একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। সিদ্ধান্তে তিনিও থেচারের মতো একগুঁয়েমি করতেন এবং অবিচল থাকতেন। এভাবে সবাই পারে না। কিন্তু ইন্দিরা পেরেছিলেন। তবে খেসারতও দিতে হয়েছিল বড় নিষ্ঠুরভাবে।

ইন্দিরা ছোটবেলা থেকেই রাজনীতির সঙ্গে ছিলেন। বাবা জওহরলাল নেহরুকে কাছ থেকে দেখেছেন। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী নেহরু আমৃত্যু টানা ১৭ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। বিপাকে পড়েন চীন-ভারত যুদ্ধের সময়। ১৯৬২ সালে চীনের সঙ্গে যুদ্ধে ভারতের বিপর্যয়ে ভেঙে পড়েন নেহরু। মনের আঘাত শরীরেও পড়ে। সবকিছু সামলাতে গেলেন কাশ্মীর। কিন্তু শরীর আর ঠিক হলো না। কাশ্মীর থেকে ফিরে কর্মব্যস্ত হলেন। ’৬৪ সালের মে মাসে অফিসে কাজ করতে করতে হৃদরোগে আক্রান্ত হলেন। চলে গেলেন চিরতরে। নেহরুর মৃত্যুর প্রভাব পড়ে ভারতজুড়ে। কঠিনতম সময়ে দায়িত্ব নেন লাল বাহাদুর শাস্ত্রী। ইন্দিরা তাঁর মন্ত্রিসভায় যোগ দেন তথ্যমন্ত্রী হিসেবে। ’৬৬ সালে লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন ইন্দিরা গান্ধী। একটানা ক্ষমতায়ও ছিলেন। দীর্ঘ ক্ষমতায় থাকলে যা হওয়ার তাই হয়েছিল। ওভার কনফিডেন্সে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ে সংকট তৈরি হয়। পরিস্থিতি সামলাতে ’৭৫ সালে জরুরি আইন জারি করেন ইন্দিরা। জরুরি আইনে নিপীড়নের খেসারত তাঁকে দিয়ে হয়েছিল। ’৭৭ সালে ভোটে হারেন। ইন্দিরাকে কারাবরণও করতে হয়। তাঁর গাড়িতে হামলা হয়। শুনতে হয় মানুষের গালমন্দ। কালো গ্লাসের চশমার আড়ালে সবকিছু সামলে ইন্দিরা আবার ঘুরে দাঁড়ান। সাধারণ মানুষের কাছে গিয়ে ক্ষমা চেয়ে নতুনভাবে শুরু করেন সবকিছু। মানুষ তাঁকে বঞ্চিত করেনি। ’৮০ সালে জয়ী হন। কিন্তু স্বর্ণমন্দির অভিযানকে ঘিরে শিখদের সঙ্গে বিরোধ শুরু হয়। ’৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর নিহত হন শিখ নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে। ইন্দিরার মৃত্যুতে ব্যথিত হওয়ার কথাই কুলদীপ নায়ারকে বলেন মার্গারেট থেচার।

ইতিহাসের এক শ্বাসরুদ্ধকর সময় অতিবাহিত করছি আমরা। চারপাশে যা ঘটছে অনেক কিছুতেই স্বাভাবিকতা নেই। একজন উচ্চপর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা বক্তৃতা দিয়ে ১০ জন কর্মকর্তা চাইছেন সবকিছু বদলে দিতে। এক থানার ওসি লাইভে গিয়ে বলছেন কীভাবে মানুষের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেবেন। বড় আজব। বিগত নির্বাচনের পর থেকে সরকারি কর্মকর্তাদের আচরণ বদলে গেছে। অহমিকা ভর করেছে তাদের মাঝে। মনে করছেন ক্ষমতায় আনতে ভূমিকা রেখেছেন তাই যা খুশি বলবেন, করবেন। মন্ত্রিসভায় দাপুটে নেতারা ঠাঁই না পাওয়ায় কর্মকর্তাদের পোয়াবারো। হিসাব-নিকাশ অনেক বদলে গেছে।  

অনেক কিছু দেখা যায়, বলা যায় না। আবার অনেক কিছুই নিয়তির ওপরও নির্ভরশীল। যা চাই না তাই হয়ে যায়। এমনিতে করোনাভাইরাস থামিয়ে দিয়েছে স্বাভাবিক জীবন। তার ওপর জাগতিক রহস্যময়তা। সে রহস্য ভেদ করতে পারি না আমরা। আর পারি না বলেই অনেক প্রশ্নের জবাব মেলে না। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী জীবিত থাকাকালেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপ্ন দেখতেন। কিন্তু সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে ব্যাপকভাবে কাজ শুরু করেন সোহরাওয়ার্দীর চিরবিদায়ের পর। বাংলাদেশ শব্দ মানুষের কানে পৌঁছে দেন ইতিহাসের মহানায়ক সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর পর। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পাকিস্তান সৃষ্টি করেন। কিন্তু নিজের মেয়েকে মুম্বাই থেকে পাকিস্তান নিতে পারেননি। মেয়ে দিনা বিদায় বেলায় বাবাকে বলেছিলেন, ‘তুমি কি বোম্বে থেকে আমার মায়ের কবর নিয়ে যেতে পেরেছ তোমার স্বপ্নের পাকিস্তানে? তোমার পূর্বপুরুষের ঘরবাড়ি কি তোমার সঙ্গে যাচ্ছে?’ দিনা ছলছল চোখে বাবাকে বললেন, ‘আমার শহর বোম্বে। আমি এ শহর ছেড়ে যাব না। তুমি যাও তোমার স্বপ্নের পাকিস্তানে। ’ কন্যার দিকে তাকিয়ে থাকলেন জিন্নাহ। বাকরুদ্ধ। মেয়েকে শেষবারের মতো বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু পারলেন না। হৃদয়ের একাংশ রেখেই যেতে হয় পাকিস্তানে। দিনা বিয়েও করেন বাবার অমতে। সে বিয়েতে জিন্নাহ অংশ নেননি। পিএসকে দিয়ে একটি ফুলের তোড়া পাঠিয়েছিলেন। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর মৃত্যুর পর পাকিস্তানে যান দিনা। অংশ নেন শেষ বিদায় অনুষ্ঠানে। ফুফু ফাতিমা জিন্নাহ তাকে পাকিস্তানে থেকে যেতে বলেন। বিশাল সম্পদের হিসাবও দেখান। কিন্তু দিনা থাকলেন না। ফিরে গেলেন বোম্বে। বছর তিনেক আগে ৯৮ বছর বয়সে নিউইয়র্কে মারা যান দিনা জিন্নাহ। ক্ষমতা ও সম্পদের হিসাব-নিকাশ সব সময় একরকম হয় না। নেলসন ম্যান্ডেলা প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ঘুরতে বের হয়ে বন্ধুদের নিয়ে খেতে গেলেন রাস্তার পাশের এক রেস্টুরেন্টে। রেস্টুরেন্টে বসা এক ব্যক্তিকে দেখে নিজের টেবিলে আনলেন ম্যান্ডেলা। লোকটি খেতে পারছিল না। থরথর করে শরীর কাঁপছিল। চেহারায় ছিল ভীতিভাব। মুখ দিয়ে বের হচ্ছিল না কথা। ম্যান্ডেলা লোকটিকে নিজ হাতে খাইয়ে দেন। বন্ধুদের পরে জানালেন, এ লোকটি একদা নিষ্ঠুর কারারক্ষী ছিল।  

কারাগারে ম্যান্ডেলার ওপর সবচেয়ে বেশি অত্যাচার করত। ম্যান্ডেলা বললেন, আজ আমি প্রেসিডেন্ট। আমাকে এভাবে দেখবে ভাবেনি। তাকে এক টেবিলে খেতে ডাকব কল্পনাও করেনি। হয়তো ভেবেছিল আমি শোধ নেব। এ কারণে ভয়ে কাঁপছিল। খেতে পারছিল না। ক্ষমতায় থেকে চাইলে প্রতিশোধ নেওয়া যায়। কিন্তু ভালোবাসা দিয়ে জয় করার আনন্দ আলাদা। এ আনন্দ সবাই পায় না। ক্ষমতার নিষ্ঠুরতাই বেশি গ্রাস করে। অবশ্য ব্যতিক্রম আছে। সেই উপমায় আরেকজন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীনতার পর শাহ আজিজুর রহমান, সবুর খানসহ ভিন্নমতের পরিবারের জন্য প্রতি মাসে অর্থ বরাদ্দ রেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু। সে অর্থ পৌঁছানোর দায়িত্ব পালন করতেন রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদ। সে গল্পগুলো তোফায়েল আহমেদ এখনো করেন। কারাগার থেকে সবুর খান একদিন চিঠি লিখলেন- ‘আমাদের প্রিয় মুজিব আজ বাংলার প্রধানমন্ত্রী। মুজিবের বাংলায় সবুর খান কারাগারে থাকবে এটা মানতে পারছি না। ’ বঙ্গবন্ধু সবুর খানকে মুক্ত করলেন। তাকে বাড়ি পৌঁছানোর দায়িত্ব দেন তোফায়েল আহমেদের ওপর। রাস্তায় যাতে তার ওপর কোনো হামলা না হয় খেয়াল রাখারও নির্দেশ দেন। সেসব ইতিহাস কেউ মনে রাখতে চায় না। তোফায়েল ভাইকে বলি, মাওলানা আজাদের মতো সত্যিকারের ইতিহাস লিখুন। কিছু অংশ না হয় প্রকাশ হবে ৩০ বছর পর।

লেখা নিয়ে কথা হয়েছিল একদিন সাবেক আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মুহাম্মদ জহিরুল হক দুলালের সঙ্গে। হুট করে তিনি চলে গেলেন করোনায়। আইন বিভাগের সচিব থাকাকালে ছিলেন আলোচিত। বিচারপতি সিনহার বইতে অনেক কিছু আছে এই সচিবকে নিয়ে। সচিব থাকাকালে একদিন এলেন নিউজ টোয়েন্টিফোরের একটি টকশোয়। সঙ্গে তখনকার স্বরাষ্ট্র সচিব ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী। দুজন আমার রুমে বসলেন চা খেতে। দুলাল ভাইকে বললাম, বিচারপতি সিনহার বইটি পড়েছেন? তিনি বললেন, পড়েছি। বললাম, অনেক কথা আছে। এ ব্যাপারে আপনার মতামত কী। তিনি বললেন, আমিও লিখব। হুট করে করোনায় আক্রান্ত হলেন। হাসপাতালে ভর্তি হলেন। তারপর চলে গেলেন জহিরুল হক দুলাল। জানি না লিখে যেতে সময় পেয়েছেন কিনা।  

এ দুনিয়া বড় ক্ষণস্থায়ী। আজ আছি কাল নেই। বিদায়ের সুর আজ সবখানে। মৃত্যু হাঁটাহাঁটি করছে জীবনের পাশ ঘেঁষে। এই তো সেদিন ফোন করেছিলেন আলমগীর ভাই। লাকসামে বিএনপির সাবেক এমপি এ টি এম আলমগীর। বললেন, একটু পরিস্থিতি ভালো হোক। তোমার সঙ্গে আলাপ আছে। বললাম, ফোনে বলেন। করোনা কবে ঠিক হবে কেউ জানি না। তিনি বললেন, সামনাসামনি বলব। আমি বললাম আচ্ছা। রমজান মাসে আক্রান্ত ছিলাম আমি। ভালো হওয়ার পর খোঁজ নিলেন। বললেন, অনেক দেরিতে খবর পেয়েছি। তোমার জন্য নামাজ পড়ে দোয়া করেছি। আল্লাহ তোমাকে সুস্থ করেছেন। আলমগীর ভাই চলে গেলেন। সাদামাটা মানুষ। আইনজীবী ছিলেন। ’৯১ সালে লাকসামে বিএনপির এমপি ছিলেন। ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগ করতেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলের এজিএস ছিলেন। বিএলএফের সংগঠক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। সরকারি চাকরিতে গেলেন। ফিরে এমপি হলেন। তারপর দীর্ঘ সময় রাজনীতিতে ভালো করতে পারেননি। বারবার মনোনয়ন-বঞ্চনায় যোগ দেন ২০১৮ সালে জাতীয় পার্টিতে। করোনা নিয়ে ভর্তি হন রাজধানীর একটি হাসপাতালে। ফিরলেন লাশ হয়ে। হায়রে মানুষের জীবন। সবকিছু তছনছ হয়ে যাচ্ছে। তবু আমাদের সংশোধন নেই।

ঈদের আগের কথা। চট্টগ্রামে বাড়ি ঢাকায় থাকেন এমন একজন ব্যবসায়ীর গাড়িচালক বেতন-বোনাস নিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন বাড্ডা থানার সামনে দিয়ে। হুট করে দুই পুলিশের এসআই তাকে ধরে চিৎকার করতে থাকেন, পেয়েছি ইয়াবা! লোকটি বললেন, আমি নিরপরাধ। আমাকে ধরছেন কেন? খবর পেয়ে গাড়ির মালিক ফোন করেন পুলিশের একজন অতিরিক্ত আইজিকে। জানালেন, এ ছেলেটি ২০ বছর ধরে আছে। কোনো দিন খারাপ কিছু চোখে পড়েনি। যদি সত্যি অপরাধী হয় অবশ্যই শাস্তি দেবেন। আর অপরাধ না করলে দেখবেন। পুলিশের ঊর্ধ্বতন মহলের নির্দেশে তদন্ত কমিটি হলো। ডোপ টেস্ট হলো। মোবাইল কললিস্ট ধরে তদন্ত হলো। না, এই চালকের মাদক খাওয়ার কোনো দৃষ্টান্ত নেই। ব্যবসারও প্রমাণ নেই। পুলিশেরই তদন্ত কমিটি ব্যাপকভাবে কাজ করল। প্রমাণিত হলো ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানো হয় নিরীহ গাড়িচালককে বাণিজ্যের জন্য। তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত সেই দুই এসআই। গাড়িচালকের ভাগ্যটা ভালো। তার গাড়ির মালিক পুলিশের বসদের চেনেন। না চিনলে কী হতো! এভাবেই অনেক ক্ষুদ্র ঘটনা থেকে বড় কিছু হয়ে যায়। সতর্ক হতে হবে এখনই। করোনাকালে আমাদের পুলিশ বাহিনী অনেক ভালো কাজ করেছে। প্রশংসা অর্জন করেছে। লাশ দাফন, লকডাউনে থাকা মানুষের ঘরে খাবার পৌঁছানোর দায়িত্ব পালন করেছে। আমরা ভালো কিছু চাই। খারাপকে বর্জন করতে হবে। কারও খারাপের দায়িত্ব পুরো বিভাগ নিতে পারে না। এখনো ঔপনিবেশিক আইন-কানুনে পুলিশসহ প্রশাসন চলছে। বাস্তবতায় আসতে হবে। সময়ের সঙ্গে মিল রেখে সংশোধন করতে হবে আইন-কানুন। বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। পুলিশের আধুনিকায়নের পাশাপাশি বন্ধ করতে হবে চাকরি ও বদলির নিয়োগবাণিজ্য। এক দিনে সব ঠিক হবে তা বলছি না। কিন্তু সময়ের সঙ্গে চলতে হবে।

একজন সরকারি উচ্চ কর্মকর্তাকে দেখলাম ফেসবুকে বক্তৃতা দিচ্ছেন। ১০ জন কর্মকর্তা সঙ্গে দিলে তিনি বাংলাদেশ বদলে দেবেন। এত দিন জানতাম বক্তৃতা দেন রাজনীতিবিদরা। এখন দেখি সরকারি কর্মকর্তারাও দিচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যা খুশি লিখছেন। চাকরিবিধির তোয়াক্কা নেই। জবাবদিহি নেই। কদিন আগে একজন লিখলেন, সচিবরা বাঁচলে দেশ বাঁচবে। যার যা খুশি করছেন। গত নির্বাচনের পর সরকার স্বাধীনতা দিয়েছে কর্মকর্তাদের। আর কর্মকর্তারাও মনে করেন তারাই সরকারকে ক্ষমতায় এনেছেন। যা খুশি করবেন। এভাবে চলে না। সরকারি কর্মকর্তা কাজ করতে চাইলে অনেক সুযোগ আছে। একজন কামরুল ইসলাম সিদ্দিকের কথা কারও কি মনে আছে? সচিবালয়ের দুই রুম নিয়ে যাত্রা করেছিলেন। এলজিইডি নামের সরকারি প্রতিষ্ঠান গড়ে তিনি গ্রামীণ অবকাঠামো বদলে দিয়েছিলেন। বারবার বদলি হয়েছেন। থেমে থাকেননি। কাজ করেছেন যখন যেখানে সুযোগ পেয়েছেন। বক্তৃতা করেননি। যারা কাজ করেন বক্তৃতায় যান না। শেষ বয়সে কর্মকর্তার বক্তৃতাবাজির মানে রাজনীতি করার খায়েশ। একজন ম্যাজিস্ট্রেট রোকন-উদ-দৌলা ও মনির চৌধুরী কাজ করেছেন। মিডিয়া তাদের কাছে গেছে। মনে রেখেছে। সর্বশেষ টেকনাফ থানার বিতর্কিত ওসির বক্তৃতাও শুনলাম। তিনি বলছেন বিনা বিচারে হত্যা আর ঘরবাড়িতে আগুন লাগানোর কথা। আজব। যার যা মনে আসছে তাই করবে? সরকারি কর্মকর্তারা বলবেন, চলবেন নিজের মতো। আর রাজনীতিবিদরা থাকবেন চুপ

লেখক: সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৬ ঘণ্টা, আগস্ট ০৯, ২০২০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।