ব্যাপারটা খারাপ লাগা ও আতংকের। তারপরেও জেনে রাখা ভালো- যুক্তরাজ্য, আফ্রিকা, ব্রাজিল ও ভারতজুড়ে নতুন ধরনের করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়েছে।
সবচেয়ে আতংকের বিষয়, নতুন ধরনের এই ভাইরাস আগের চেয়ে ৭০ শতাংশ দ্রুত ছড়াতে পারে। এই ভাইরাসটি বিভিন্ন পথ পরিবর্তন করে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে এবং শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে পুরোপুরি দুর্বল করার মাধ্যমে রোগীকে মারাত্মক ঝুঁকিতে ফেলে দেয়। এছাড়া এতদিন শুধু বয়স্কদের করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হতে দেখা গেলেও এখন কম বয়স্কদের পাশাপাশি শিশুদের আক্রান্ত হতে দেখা যাচ্ছে।
আর এসবের কারণ যদি আমাদের নতুন ভাইরাসটি হয়ে থাকে এখন আমাদের মনে কিছু প্রশ্ন জাগতেই পারে। তাহলে এই বছরটিও কি করোনা ভাইরাসময় হতে যাচ্ছে। যদি এই ভাইরাসটি আরো নতুন দেশ- অঞ্চলজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং আমাদের স্বজনদের আক্রান্ত করে তাহলে কী হবে?
এমনটা ঘটলে অবশ্যই বেদনাদায়ক এবং আরো ভয়েরও। এখন আসল কারণ এটা নয়, আপনি কোথায় থাকেন? করোনা সর্বত্র পৌঁছে গেছে। আসল কথা হলো এটা জানা- ভাইরাসটি কিভাবে মিউটেড হয় এবং কিভাবে এই ভাইরাসের মোকাবেলা করতে হয়।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ভাইরাস এক মাসের মধ্যে বেশ কয়বার মিউটেড হতে পারে এবং যখন এই মিউটেশন প্রক্রিয়া সংগঠিত হয় তখন এক ধরনের বিশেষ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। যখন ভাইরাসের জেনেটিক কোড পরিবর্তিত হয় তখন এটি আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে যায়। আর এই করোনা ভাইরাস পরিবর্তিত হয়ে শক্তি অর্জন করতে করতে এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে আছে। ব্যাপারটা অনেকটা এমন যেন, করোনাভাইরাস কোনও সুপার পাওয়ার পেয়ে গেছে এবং পুরো বিশ্বজুড়ে ক্ষমতা প্রদর্শনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। আর এমন ভয়াবহতার কথা আন্দাজ করতে পেরেই বিশ্বজুড়ে লকডাউন আর সীমিত আকারে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই বিভিন্ন কার্যক্রম চলছে। বিভিন্ন দেশ সংক্রমণ প্রতিরোধে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে।
আর আমরা সত্যি সত্যি অসহায় হয়ে গেলাম এই ক্ষুদ্র অণুজীবের কাছে। যখনি একটু স্বস্তি নিয়ে মানুষ আশা করে হয়তো করোনা ভাইরাস এর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রিত, তখনি ডাবল ট্রিপল ভেরিয়েন্ট করোনার প্রাদুর্ভাব। গত এপ্রিল জুড়ে দৈনিক বাংলাদেশে মৃত্যুর সংখ্যা তিন অংক ছুঁয়েছে বেশ কয়বার। সংক্রমণের হারও বেশি ছিল। লকডাউনে আর সীমিত আকারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে জীবনযাত্রার কারণে এখন কিছুটা কম। কিন্তু পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতজুড়ে করোনা মহামারি সুনামির মতো বিস্তার করছে, সাথে মৃত্যুর সংখ্যাও। সরকার ইতিমধ্যে আমাদের ভারত সীমান্ত বন্ধ করে দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছে। এর পরেও আমাদের দেশে ভারতীয় করোনার ভেরিয়েন্ট পাওয়া গিয়েছে।
সামনে ঈদ। আমাদের দেশের মানুষের অনেক বড় উৎসব। বিভিন্ন শপিংমল জুড়ে মানুষের ভিড়। সবাই প্রিয়জনের জন্য নতুন কাপড় কিনতে ব্যস্ত। আদৌ স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কিনা সেই বিষয়টি জরুরি। সরকার যথেষ্ট প্রচারণা করে সকলের জীবন সুরক্ষিত করার চেষ্টা করছে। আসলে নিজের জীবন নিজেকে সুরক্ষিত করতে হবে। না হলে কারো পক্ষে সম্ভব না। করোনার ভ্যারিয়েন্ট কোনটা ভেবে মানসিক চাপ নেওয়ার দরকার নেই। মাস্ক ব্যবহার করুন আর স্বাস্থ্যবিধি মানুন। সব ভ্যারিয়েন্টে একই প্রতিরোধ ব্যবস্থা।
এছাড়াও ভ্যাকসিন নিয়েছি বলে যত্রতত্র স্বাস্থ্যবিধি না মেনে ঘোরাফেরা ঠিক না। পৃথিবীর আবিষ্কৃত কোন ভ্যাকসিনই শতভাগ সুরক্ষা দেবে না। সুতরাং নিজেদের সুরক্ষা করার এখনো সুযোগ আছে হয়তো। তাও আবার শেষ সুযোগ নিজেকে সচেতন করা। মাস্ক পরুন। মাস্ক বিহীন মানে আপনি নিজেই আত্মহত্যার পথে ধাবিত হচ্ছেন। জীবনকে নিরাপদ রাখবেন নাকি বিপদের পথে ধাবমান হবেন- আপনিই ঠিক করুন।
লেখক: উপ-পরিচালক, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়। প্রধান উদ্যোক্তা ও নির্বাহী, চট্টগ্রাম ফিল্ড ও হোম হাসপাতাল।