ছোটবেলায় চাঁদের গল্প শুনিয়ে মায়েরা সন্তানদের ঘুম পাড়ান। তখন থেকেই চাঁদের প্রতি বাঙালিদের এক ধরনের আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়ে যায়।
চাঁদের দেশে প্রথম পা রেখেছিলেন মার্কিন মহাকাশচারী ও বৈমানিক প্রকৌশলী নিল আর্মস্ট্রং। সেটা ১৯৬৯ সালে। তার সঙ্গে ছিলেন বাজ অলড্রিন। তাদের রাস্তায় পরবর্তী সময়ে এগোনোর চেষ্টা করেছে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া ও জাপান। সম্প্রতি চীন কয়েকটি সফল অভিযানও পরিচালনা করেছে।
চাঁদে মাটি, পানি বা পাথরের সন্ধান অনেক দিন ধরেই দিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। সেই মাটি-পানির অংশের মালিক যে খুলনা ও সিলেটের বাসিন্দারা হবেন, কিছু দিন আগেও হয়তো এমনটা ভাবনায় আসেনি। কিন্তু ‘সনদ’ দেখিয়ে তারা ‘প্রমাণ করেছেন’ চাঁদের দেশে জমির মালিক তারাও।
তেমনি একজন ‘ভাগ্যবান’ খুলনার এম ডি অসীম। স্ত্রীকে চাঁদে জমি কিনে দিয়ে তিনি বলেন, স্ত্রীকে কথা দিয়েছিলাম কোনো এক বিবাহবার্ষিকীতে তাকে বিশেষ উপহার দিয়ে অবাক করব। গত বছর জানতে পারলাম ভারতের এক ব্যক্তি বিবাহবার্ষিকীতে স্ত্রীকে চাঁদে জমি কিনে দিয়েছেন। এ ঘটনা জানতে পেরে, আমাদের বিবাহবার্ষিকীতে স্ত্রীকে চাঁদের জমি কিনে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।
ভারতীয় নাগরিকের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে চাঁদে জমি কিনেছেন এম ডি অসীম। কীভাবে তিনি এটা করলেন? তার কথায়, ২০ সেপ্টেম্বর মার্কিন নাগরিক ডেনিস হোপের ‘লুনার এমবাসি ডটকম’ ওয়েবসাইট থেকে ৪৫ ডলারের বিনিময়ে এ জমি কিনেছি। জমি কেনার পর আমাদের একটি বিক্রয় চুক্তিনামা, কেনা জমির একটি স্যাটেলাইট ছবি এবং জমিটির ভৌগোলিক অবস্থান ও মৌজা-পর্চার মতো আইনি নথিও পাঠিয়েছে সংস্থাটি, যা স্ত্রীর হাতে তুলে দিয়েছি।
আইরিশ দার্শনিক জর্জ বার্কলে তার আত্মগত ভাববাদ প্রচার করতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘যা অজ্ঞাত, তার অস্তিত্ব স্বীকার করা একটি কল্পনাপ্রসূত ব্যাপার ছাড়া আর কিছুই নয়। ’
একবার ব্রিটিশ এক পাদ্রী একটি কল্পকাহিনী লিখেছিলেন। সেই কাহিনীর নায়ক চাঁদে গিয়েছিলেন বুনোহাঁসের পিঠে চড়ে। চাঁদে গিয়ে তিনি দেখেন, শুধু পানি আর পানি।
চাঁদে জমি কেনা দেশের ‘নব্য ভাগ্যবানরা’ সেখানে যদি কখনো যান, তারা হয়তো মাটি পাবেন। কেননা তাদের মালিনাকার সনদ আছে। সেটা তারা প্রিয় মানুষকে উপহারও দিয়েছেন।
দেশের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির গ্রাহকদের কাছেও পণ্য কেনার এমন লাখ লাখ রশিদ রয়েছে। টাকা দেওয়ার প্রমাণ রয়েছে। কিন্তু তারা যে সেই পণ্য বা টাকা পাবেন, সেই নিশ্চয়তা এখন পর্যন্ত কেউ দিতে পারেনি।
তাই তারা আইনের আশ্রয় নিয়েছেন, গ্রেফতার হতে হয়েছে ইভ্যালির সিইও এবং চেয়ারম্যানকে। তারা এখনও ছাড়া পাননি। কবে পাবেন, তাও কেউ জানে না। তাদের মুক্তি গ্রাহকদের টাকা ফেরতের কোনো পথ হবে কি না, সেটাও অনিশ্চিত।
তাই ডলার খরচ করে চাঁদে জমি কেনা আর ইভ্যালির সাইক্লোন অফারে লাখ লাখ টাকা লগ্নি করা একই কথা। হাতে দলিল থাকবে কিন্তু চাঁদের জমি কিংবা ইভ্যালির পণ্য কোনোটাই হয়তো মিলবে না।
ইভ্যালির পণ্য কিনে লাখ লাখ গ্রাহক যেভাবে প্রতারিত হয়েছেন, একইভাবে ভালোবেসে স্বামীর দেওয়া চাঁদের জমির মালিকানায় স্ত্রীও প্রতারণার শিকার কি না, সেই উত্তর তারাই ভালো বলতে পারবেন।
কণ্ঠশিল্পী নচিকেতার একটি কথা দিয়েই শেষ করছি। মেয়ের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি বলেছিলেন, তার প্রজন্মের তরুণরা ভাবতেন কীভাবে একটা ভালো বই পড়া যায়। আর এখনকার তরুণরা ভাবেন, কীভাবে ভালো রেস্তোরাঁয় খাওয়া যায়, ভালো পোশাক পরা যায়। তারা বাইরের চাকচিক্য বেশি ফলাতে চায়। মননের উন্নতি কিংবা মনোজগতের বিকাশ ঘটাতে চেষ্টা করছে না।
লেখক: সিনিয়র নিউজরুম এডিটর, বাংলানিউজ
বাংলাদেশ সময়: ২০২৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২১