ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

মোটিভ জানা গেলে তা কে জানালো?

এ কে এম রিপন আনসারী, সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১২
মোটিভ জানা গেলে তা কে জানালো?

‘সাগর-রুনি হত্যা মামলায় কেউ আটক বা গ্রেপ্তার হয়নি, তবে মোটিভ জানা গেছে’, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এ ধরনের বক্তব্য এখন আর কেউ শুনতে চায় না। ৪৮ ঘন্টা, ৭২ ঘন্টা দেখতে দেখতে ৪০০ ঘন্টা অতিবাহিত হয়ে গেলো।

পুলিশ এই জঘন্যতম ও ন্যক্কারজনক হত্যা মামলায় কোন অগ্রগতি দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। ঢাকা ডিবি অফিসের সামনে আটক ব্যক্তিদের অপেক্ষমান স্বজনদের সাক্ষাৎকার মিডিয়ার প্রকাশিত হচ্ছে। এই চাঞ্চল্যকর মামলায় একাধিক আটক ব্যক্তির নাম, ঠিকানাও মিডিয়ায় আসছে। গোপন সূত্রের বরাত দিয়ে মিডিয়ায় অভিযুক্তদের দেয়া স্বীকারোক্তির বিভিন্ন অংশ বিচ্ছিন্নভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। কিন্তু আটকের কথা এড়িয়ে যাচ্ছে পুলিশ। বিষয়টি ক্রমান্বয়ে ঘোলা হতে চলেছে।

সময়ক্ষেপণের মাত্রা বেড়ে গেলে সত্যও যে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায় এই কথাটা কারো অজানা নয়। বাংলাদেশের রাজনীতিতে “জজ মিয়া” ছবি তৈরিই রয়েছে। এই ছবির নায়ক এখনো জীবিত। বর্তমান সরকার, অপরাধ তদন্তের ক্ষেত্রে যে জজ মিয়াদের জন্ম হয় তা আবিষ্কার করেছেন। সুতরাং সাগর-রুনি হত্যা মামলায় জজ মিয়াদের জন্ম হউক বা না হউক এরই মধ্যে আলোচিত হয়ে গেছে যে, জজ মিয়াদের জন্ম হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

পুলিশ প্রধানের বক্তব্য, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য এমনকি প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়েও সমালোচনা শুরু হয়েছে। তাই সময় নষ্ট না করে যার হাতে যা আছে তা নিয়েই মোকাবেলা করা উচিত। এ মুহুর্তে সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তকার্যের সফলতা সাহস করে সত্য আকারে জাতির কাছে উপস্থাপন জরুরি হয়ে গেছে। কারণ যারা ঘটনা ঘটিয়েছেন তারা অবশ্যই আত্মরক্ষার চেষ্টা করবেন। পুলিশ খুনিদের জন্য অপেক্ষা করেন কিন্তু খুন করে কেউ পুলিশের জন্য অপেক্ষা করে না। যেহেতু পুলিশ মোটিভ জেনে গেছে তা অবশ্যই কারো না কারো জবানবন্দী থেকে তথ্য পেয়েই জেনেছেন। যারা আটক হয়েছেন, তাদের মধ্যে যদি মোটিভ দাতা থাকেন তবে তাকে বা তাদের উপস্থাপন করে জনগণের দৃষ্টি আলোর দিকে ধাবিত করা প্রয়োজন। আর যদি কোন সাক্ষী মোটিভ দাতা হয়ে থাকেন তবে আদালতে সাক্ষীর জবানবন্দী ১৬৪ ধারায় রেকর্ড করিয়ে হলেও জনসম্মখে উপস্থাপন করতে হবে। আর যদি কোনটিই না করা হয় তাহলে এক সময় সত্যকেও মিথ্যা বলতে মানুষ উৎসাহ পাবে।

আমরা প্রায়ই দেখি, কোন ঘটনা ঘটার পর সন্দিগ্ধ আসামিকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী আদালতে নেওয়ার আগেই বুকে নাম লিখে সামনে আলামত রেখে প্রেস ব্রিফিং করে জানিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু সাগর-রুনি হত্যা মামলার মোটিভ যে মাধমে পুলিশ জেনেছে সে মাধ্যমকে কেন উপস্থাপন করা হচ্ছে না। মামলা দায়েরের আগেই যদি সাংবাদিকদের সামনে তথ্য দেওয়া যায় তবে মামলা দায়েরের পর কেন তদন্তের সফলতা জানানো যাবে না।

গোয়েন্দা পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বলি, যে কোনও হত্যাকাণ্ড মানবাধিকারের লঙ্ঘন। সাগর-রুনি হত্যাকা- এর ব্যতিক্রম নয়। তবে এই হত্যাকাণ্ডের হোতাদের ধরতে গিয়ে যেন মানবাধিকার লঙ্ঘন না হয় সে দিকে সাংবাদিকমহল অবশ্যই সচেতন রয়েছে।

মিডিয়ার সংবাদে জানা গেছে, ঢাকা ডিবির সামনে ডিবিতে আটক স্বজনদের ভিড়। এই স্বজনেরা তাদের আত্মীয় কোন মামলায় আটক রয়েছেন তাও জানতে পারছেন না। তাদের হাহাকারও মিডিয়ায় প্রকাশিত হচ্ছে। সাংবাদিক সমাজ আশা করে, সাগর-রুনি হত্যা মামলাকে পুঁজি করে কেউ যেন এমন কাজ না করেন যাতে সাগর-রুনির আত্মা কষ্ট পায়। আবার কোনও দল বা গোষ্ঠি এই মামলাটি নিয়ে যেন রাজনীতি না করে সে আশাবাদ অবশ্যই রয়েছে। তবে জাতি আশা করে, কোনও কারণে সরকার এই মামলা নিয়ে বিপাকে পড়েছে মনে না করে প্রকৃত সত্য প্রকাশ করবে। আমরা সরকারের সফলতা চাই, কৃত্রিম সফলতা চাই না। জোর করে সফল হওয়ার চেষ্টা না করে বিফল হওয়ার ব্যাখ্যা দিলে তাতে সফলতার চেয়ে  অর্জন কম হয় না।

এ কে এম রিপন আনসারী
সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় মানবাধিকার কাউন্সিল, গাজীপুর জেলা শাখা
                       ও
সাধারণ সম্পাদক, গাজীপুর প্রেস ক্লাব

বাংলাদেশ সময় ১৯৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।