সোমবার (৬ দুপুরে) দুপুরে তথ্য মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের ওয়েবসাইটে সম্প্রতি প্রকাশিত ওই পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়া দিতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
‘বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদন ২০১৬’ শীর্ষক ওই রিপোর্টে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে পর্যবেক্ষণে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে জঙ্গিবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান চালানো হচ্ছে। কিন্তু এ ধরনের সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের নামে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার খর্ব করা হচ্ছে। প্রতিবেদনটিতে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আরও নানা অভিযোগ তোলা হয়।
জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যে রিপোর্ট দিয়েছে তা ভুল চশমা পরে এবং ঝাপসা চোখে পর্যবেক্ষণ করে দেওয়া। আমরা এই রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করছি। নীতিগতভাবেই আমরা যুক্তরাষ্ট্রের এই ঢালাও মন্তব্য সমর্থন করি না।
তথ্যমন্ত্রী সাফ বলে দেন, এই রিপোর্ট যথাযথ তথ্য নির্ভর নয়। বাংলাদেশ সংবিধান ও আইনে পরিচালিত হয়। এখানে আইন-বহির্ভূত কাজ করার ক্ষমতা সরকার ও কোনো সংস্থার নেই।
হাসানুল হক ইনু বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর পৃথিবীর বিভিন্ন স্বাধীন দেশের মানবাধিকার নিয়ে প্রতি বছর রিপোর্ট দেয়। বাংলাদেশর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি দেখা যুক্তরাষ্ট্রের চোখের চশমা ভুল চশমা। দেখার চোখটাও ঝাপসা। অন্য কোনো দেশের আভ্যন্তরিণ বিষয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ঢালাও মন্তব্য প্রদান আমরা নীতিগতভাবে সমর্থন করি না। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর যে রিপোট্র্ প্রকাশ করেছে তা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাখান করছি। কারণ এই রিপোট্র্ যথাযথভাবে তথ্য নির্ভর নয়। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। দুই এক সঙ্গে উন্নয়নের অংশীদার হয়ে কাজ করছে। আমরা এই সম্পর্ক আরও জোরদার করতে চাই।
জঙ্গিবাদ সম্পর্কে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ধর্মীয় জঙ্গি, সন্ত্রাসী ও উগ্রবাদিরা বাংলাদেশের মাটিতে গড়ে উঠেছে এবং তাদের তৎপরতা বাংলাদেশের মাটিতে। এদের দমনে সরকার তৎপর রয়েছে। এদের বিচার করা হচ্ছে। বিচারে কোনো আন্তর্জাতিক কোনো চক্রের সঙ্গে এদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। জঙ্গিবাদ দমন অব্যাহত রয়েছে। জঙ্গিবাদ আগের চেয়ে কোণঠাসা ও প্রতিহত হয়েছে। জঙ্গিবাদ দমনে কোনো রাজনৈতিক সংকোচন আমরা করিনি। কষ্ঠ হলেও আমরা জঙ্গিদমন চালাচ্ছি।
ইনু আরও বলেন, মানবাধিকার সংকুচিত বা সংকুচিত করার প্রয়াস সরকার চালায়নি। জঙ্গি সন্ত্রাস দমনের সময় সংঘর্ষে যারা নিহত বা আহত হয়েছে তাদের বিচার বর্হির্ভূত হত্যাকান্ড বলে চালানোর প্রয়াস সঠিক নয়। বাংলাদেশে বিচারবর্হির্ভূ হত্যাকান্ডের আইন নেই। বিনাবিচারে আটক রাখার আইনও নেই। আন্তর্জাতিক আইন ও আইএলও’র কনভেশন অনুযায়িই শ্রমিকদের সঙ্গে আচরণ করা হয়। আন্তর্জাতিক মানদন্ড মানতে হয় পোষাক খাতে। কর্মপরিবেশও মানসন্মত।
তথ্য মন্ত্রী বলেন, গণমাধ্যম নিয়ে যে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে সেটা ডাহা মিথ্যা কথা। গত ২ বছরে অনলাইন গণমাধ্যমের সংকুচিত রূপ বা নতুন কোনো আইন দেওয়া হয়নি। অনলাইনের নিবন্ধনের আহ্বান জানানোর পর ১৮ শ’ নিবন্ধন জমা পড়েছে। আইন না থাকলেও আমরা অনলাইন গণমাধ্যমকে স্বীকার করে নিয়েছি। একটি নীতিমালা হচ্ছে। যে কোনো সময় মন্ত্রী পরিষদ এ বিষয়টি দেখবে। রিপোর্টে গণমাধ্যম সম্পর্কে যে কথা বলা হয়েছে তার তথ্য প্রমাণ নেই, শোনা কথা। সরকারের সমালোচনায় কোনো ওয়েব সাইট বন্ধ হয়নি। বন্ধ হয়েছে জঙ্গি উস্কানি, ধর্মীয় উস্কানি, মিথ্যাচার, চরিত্র হনন এসব কারণে ৩০/৪০টি সাময়িক বন্ধ হয়েছে। এটা সরকারের সমালোচনার কারণে নয় এবং এখানে কোনো সংকোচন নীতিও নেই। ইন্টারনেট ব্যবহারে কোনো সেনচর নেই।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এনজিও’র দেশ। এখানে এনজিও’রা দেশী-বিদেশী টাকা পেয়ে থাকে এবং খরচ করে। এনজিও’র নিবন্ধন সব দেশেই আছে। তারা কোন খাতে অর্থ খরচ করে সে বিষয়টি দেখা হয়।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তথ্য মন্ত্রী বিচার বর্হিভর্’ক্ত হত্যাকান্ডের অধিকার কারো নেই। এ ধরণের ২/১টি ঘটনা ঘটলে আইনের কাছে কেউ মাফ পায়নি। এ ধরণের ঘটনা সরকার সমর্থন করে না। নারায়ণগঞ্জের ৭ খুনের ঘটনার বিচার তার প্রমাণ।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৯ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০১৭/আপডেট ১৮০৬
এসকে/এইচএ/