রোববার (২৬ এপ্রিল) সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে হস্তান্তর করেন প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন।
এছাড়াও চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট, ময়মনসিংহ, বরিশাল, ফরিদপুর, গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও, কুমিল্লা, মৌলভীবাজার, পটুয়াখালী, বাগেরহাট, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, রাঙামাটি, চুয়াডাঙ্গা, নওগাঁ, ঝালকাঠি, শরীয়তপুর, লালমণিরহাট, জামালপুর, রাজবাড়ি, গোপালগঞ্জ, দিনাজপুর, পাবনা, গাজীপুর, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, যশোর, কুড়িগ্রাম, নোয়াখালীসহ সারাদেশের সিপিবির জেলা নেতারা সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে একযোগে প্রধানমন্ত্রীকে এই স্মারকলিপি প্রদান করেছেন।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, করোনা ভাইরাস সারা বিশ্বেই আঘাত হেনেছে। এধরনের মহামারি গোটা বিশ্ব এবং বাংলাদেশ ইতোপূর্বে কখনো দেখেনি। এটি একটি বৈশ্বিক দুর্যোগ, পাশাপাশি জাতীয় দুর্যোগ। ফলে এই মহাসংকট পৃথিবীর কোনো এক দেশের পক্ষে যেমন একা মোকাবিলা করা সম্ভব নয়, তেমনি কোনো দেশে একা সরকার বা একক কোনো দলের পক্ষে তা মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। সেজন্য প্রয়োজন সমন্বিত বৈশ্বিক ও জাতীয় উদ্যোগ। কমিউনিস্ট পার্টি ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের পক্ষ থেকে করোনা মহামারি মোকাবিলায় সরকার ও প্রধানমন্ত্রীকে সব দল, শক্তি ও ব্যক্তির সমন্বিত জাতীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য আবেদন জানানো হয়েছে। কিন্তু সরকারের দিক থেকে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
স্মারকলিপিতে করোনার মহাবিপর্যয় মোকাবিলার জন্য এখনই সব শক্তিকে নিয়ে পরামর্শ সভা আহ্বান, জাতীয় বাজেট পুনর্বিন্যস্ত করে করোনার মহাবিপর্যয় মোকাবিলার জন্য বাজেটের পর্যাপ্ত টাকা বরাদ্দ, সব উপজেলায় বিশেষায়িত ব্যবস্থাসম্পন্ন ‘টেস্টিং বুথ’ স্থাপন, করোনা পরীক্ষার জন্য দেশের প্রতিটি জেলায় অন্তত একটি করে ‘বিশেষায়িত ল্যাব’ স্থাপন, ক্ষুধার্ত ও অনাহারের আশঙ্কাসম্পন্ন পরিবারের কাছে আগামী ৩ মাস বিনা মূল্যে প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেয়া, গার্মেন্টসহ বিভিন্ন বেসরকারি কারখানা-প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারীদের ১/২ মাস বেতনসহ ছুটি দেওয়া, সরকার ঘোষিত ‘অর্থনীতি পুনরুদ্ধার প্রণোদনা’র সিংহভাগ অর্থ সরাসরি কৃষক, শ্রমজীবী, ক্ষুদে ও মধ্য বিনিয়োগকারীদের প্রদান, ইউনিয়ন পর্যায়ে ধান ক্রয়কেন্দ্র খুলে খোদ কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা, ধান কাটতে যাওয়া ক্ষেতমজুরদের জন্য সংক্রমণ পরীক্ষার সুযোগ, স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা, থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্ত, ১০ লাখ টাকার স্বাস্থ্যবিমা সুবিধা ইত্যাদি প্রদান, সারাদেশে প্রতিটি গ্রামে, গ্রামবাসীদের আস্থাভাজন মানুষকে সামনে রেখে ‘গ্রাম সুরক্ষা কমিটি’ গঠন, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অসৎ ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে বাজার অস্থিতীশীল করে যাতে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দাম বৃদ্ধি করতে না পারে, তার জন্য কঠোর নজরদারী ও শাস্তির ব্যবস্থা করা, শহরের ভাসমান দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে রান্না করা খাবার সরবরাহের নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা, করোনা সংক্রান্ত গুজব ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে হালনাগাদ বৈজ্ঞানিক তথ্য জনগণকে অবহিত করা, শুধুমাত্র সরকারি কর্মকর্তা নয়, এই দুর্যোগ মোকাবিলায় অভিজ্ঞ গবেষক ও বিজ্ঞানীদের নিয়ে ‘কোভিড-১৯ টাস্কফোর্স’ গঠন, করোনা-সৃষ্ট মানবিক বিপর্যয় রোধে সরকারের উদ্যোগে রাজনৈতিক দল, গণসংগঠন, সামাজিক সংগঠন ও মানবিক ব্যক্তিদের নিয়ে বিপর্যয় মোকাবিলায় কেন্দ্রে এবং তৃণমূলে ‘সমন্বয় কমিটি’ গঠন করাসহ স্মারকলিপিতে বিস্তারিতভাবে ১৪ দফা পরামর্শ ও দাবি উত্থাপন করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০২৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০২০
আরকেআর/এবি