বৃহস্পতিবার (১৪ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের উদ্যোগে সংক্ষিপ্ত পরিসরে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে প্রতীকী অবস্থান ও মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে এ দাবি করা হয়।
সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব বুলবুল এর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন সহ-সম্পাদক ইমাম হোসেন খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক খালেকুজ্জামান লিপন, অর্থ সম্পাদক জুলফিকার আলী, দপ্তর সম্পাদক সৌমিত্র কুমার দাস প্রমুখ।
নেতারা বলেন, দেশের মোট শ্রমজীবী মানুষের ৮৫ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় সাড়ে ৫ কোটি অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক যাদের মধ্যে প্রায় ৪ কোটি দৈনিক কাজভিত্তিক মজুরি চুক্তিতে নিয়োজিত শ্রমিক গত ২৬ মার্চ থেকে অদ্যাবধি ৪৯ দিন যাবত লকডাউনের কারণে কর্মহীন হয়ে চরম অসহায়ত্বের মধ্যে দিনযাপন করছে। সরকার করোনা পরিস্থিতি উত্তরণে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। কিন্তু এই প্রণোদনা প্যাকেজে শ্রমজীবী মানুষের খাদ্য ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তার জন্য বরাদ্দ খুবই অপ্রতুল। বরাদ্দ নগদ সহায়তার ৭৬০ কোটি টাকা অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকদের মধ্যে বণ্টন করলে প্রতি শ্রমিক পাবে প্রায় ১৪০ টাকা মাত্র যা সহায়তার নামে প্রহসনের শামিল।
মানববন্ধন থেকে বলা হয়, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার পাশাপাশি বাসা ভাড়া পরিশোধের চাপ ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে বসবাসকারী শ্রমজীবী দিনমজুর মানুষের জীবনকে আরও দুর্বিষহ করে তুলছে। ১০ দিন পরে মুসলিম ধর্মালম্বিদের সবচেয়ে বড় উৎসব ঈদ উপলক্ষে সরকার ৫০ লাখ শ্রমিককে আড়াই হাজার টাকা করে নগদ সহায়তা প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে অথচ দেশে শুধু অতি দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যাই ১ কোটি ৯০ লাখ যাদের বেঁচে থাকার জন্য প্রত্যেকের কমপক্ষে ৮ হাজার টাকা প্রয়োজন।
নেতারা আরও বলেন, করোনার অজুহাতে সরকারি তহবিল থেকে হাজার-হাজার কোটি টাকা সহযোগিতা গ্রহণ করার পরও শিল্প মালিকরা চরম দায়িত্বহীন-অপরাধমূলক আচরণ অব্যাহত রেখেছেন। কর্মস্থলে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং শ্রমিক ছাঁটাই করা হবে না এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে কারখানা চালু করার অনুমতি নিয়ে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ছাড়াই কারখানা চালাচ্ছে। বিভিন্ন অজুহাতে শ্রমিক ছাঁটাই অব্যাহত রেখেছে, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের রিপোর্ট অনুসারে সরকারি নির্দেশনার পরও শুধু ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ এবং গাজীপুরে প্রায় নয় হাজার শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছে। অনেক কারখানায় এখনও মার্চ মাসের বেতন পরিশোধ করা হয়নি, ছুটিতে থাকা শ্রমিকদের এপ্রিল মাসের বেতনের ৬৫ শতাংশ এবং কর্মরত শ্রমিকদের ১০০ শতাংশ মজুরি পরিশোধের সিদ্ধান্তে কৌশলে সরকারের অনুমোদন নিয়েও এখন প্রতিশ্রুত অর্থ পরিশোধে টালবাহানা করছে। উৎসব ভাতা শ্রমিকের সারাবছরের কাজের ধারাবাহিকতার অধিকার অথচ করোনা দুর্যোগে মাত্র ১ মাস উৎপাদন বন্ধ থাকার অজুহাতে উৎসব ভাতা কর্তনের অনৈতিক চেষ্টা করছে। অথচ সরকারের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চরম দুর্যোগকালীন সময়েও শ্রমিককে বাঁচাতে মালিকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পরিবর্তে মজুরির দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকের উপর নির্যাতন করছে যা অত্যন্ত নিন্দনীয়।
নেতারা অবিলম্বে প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের চলতি মাসেরসহ বকেয়া বেতন ও পূর্ণ উৎসব ভাতা পরিশোধ, সরকারি নির্দেশনা ভঙ্গকারী মালিকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা, মালিকের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে শ্রমিকের প্রাপ্য পাওনা পরিশোধ এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের সকল শ্রমিকের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ, নগদ সহায়তা, আর্মি রেটে সারাবছর রেশন সরবরাহ, কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকের স্বাস্থ্য সুরক্ষার প্রয়োজনীয় আয়োজন করা এবং করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকের চিকিৎসা ও সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণ নিশ্চয়তা দাবি করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৫ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০২০
আরকেআর/এইচএডি