বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাম গণতান্ত্রিক জোট আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে এ কথা বলেন তিনি।
ক্ষমতাসীন সরকারের সমালোচনা করে সাজ্জাদ জহির চন্দন বলেন, গত কয়েকদিন ধরে শুনছি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের এক মাসের খাওয়ার খরচই নাকি হয়েছে ২০ কোটি টাকা।
‘পাটকলগুলোতে নিয়মিত শ্রমিক আছে ২৫ হাজার। পাটকলের সঙ্গে পাট চাষিদের ভাগ্যও জড়িত হয়ে আছে। আজকে কর্তৃপক্ষ পাটকলগুলো বন্ধ করার জন্য গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের ব্যবস্থা করছে। এ জন্য বরাদ্দ করেছে ৬ হাজার কোটি টাকা। অথচ দেশের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ১২শ’ কোটি টাকা খরচ করলেই পাটকলগুলো আধুনিক করা যাবে। পাটকল আধুনিক করা গেলে সেই টাকা দিয়ে শ্রমিকদের বেতন দেওয়াও সম্ভব। সে ক্ষেত্রে শ্রমিক ছাঁটাই ও পাটকল বন্ধ করার কোনো প্রয়োজন হয় না। ’
সমাবেশে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক, বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, রাষ্ট্রীয় পাটকলগুলো বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তারা কী করবে এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো বক্তব্য নাই। একবার বলে- বন্ধ করবে, আরেকবার বলে- পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপে (পিপিপি) পরিচালনা করবে। আরেকবার বলবে, বিকল্প আরেকটা পরিচালনা পদ্ধতির মাধ্যমে পাটকলগুলো চালাবে। তার আগে এখানে যেসব শ্রমিক আছে তাদের পাওনা দিয়ে তাদেরকে বিদায় করে দেবে, শ্রমিকদের ছাঁটাই করা হবে, চাকরিচ্যুত করা হবে। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
দেশের পাটকলের ইতিহাস উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসের সঙ্গে পাটকলের ইতিহাস সংযুক্ত। স্বাধীনতার আগে বাংলাদেশ ৭৭টি পাটকল ছিল। ১৯৮১ সালে ৮২টি পাটকল বাংলাদেশ জুট মিল করপোরেশনের আওতায় আসে। বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফ ১৯৮২ সালে সারা বিশ্বে উদারনীতিবাদের কৌশল হিসেবে বাংলাদেশের কাঠামোগত সমন্বয়ের কথা বললো। তারা বাংলাদেশের পাটকল বন্ধ করতে বললো। অন্যদিকে ভারতকে বললো পাট খাতে উন্নয়ন করতে। এই বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফ-এর সম্রাজ্যবাদী মানসিকতার সামনে আমাদের দেশের নতজানু সরকারগুলো একের পর এক পাটকল বন্ধ করতে শুরু করে।
‘২০০২ সালে বিএনপি-জামাত জোট সরকার আদমজী পাটকল বন্ধ করে দিয়েছিল। এশিয়ার বৃহত্তম পাটকল আদমজীতে ৪০ হাজার শ্রমিক কাজ করতেন। সেই পাটকল বন্ধ করে দেওয়ার সময় তৎকালীন জামাতে আমির, যুদ্ধাপরাধী চারদলীয় জোটের মন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী বলেছিল, পাটকলের মতো এইসব অজগর বাংলাদেশের অর্থনীতিকে খেয়ে ফেলছে। আদমজী পাটকলের ওপর তাদের একটা ক্ষোভ ছিল। তারা ছিল স্বাধীনতা বিরোধী। আদমজী জুট মিলের ইতিহাসের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস জড়িয়ে আছে। ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে আদমজী পাটকলের হাজার হাজার শ্রমিক রাস্তায় নেমে এসে ঢাকা শহর অবরোধ করে গণঅভ্যুত্থান সফল করেছিল। মুক্তিযুদ্ধেও এসব শ্রমিকদের বড় ভূমিকা ছিল। সেই পরাজয়ের জালা মেটাতেই তারা আদমজী পাটকল বন্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু এখন আমরা দেখছি, যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে, সেই আওয়ামী লীগ সরকারের পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী তিনিও দেশের অবশিষ্ট ২৫টি পাটকল ধ্বংস করার চক্রান্ত করছেন। রাজাকার আর মুক্তিযোদ্ধা আজ একাকার হয়ে গেছে। তাদের সবার লক্ষ্য বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটেপুটে খাওয়ার। লুটেপুটে খাওয়ায় রাজাকার আর মুক্তিযোদ্ধার এখন কোনো ভেদাভেদ নেই। ’
বিক্ষোভ সমাবেশে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ জহির চন্দন ক্ষমতাসীন সরকারের সমালোচনা করে আরও বলেন একটি দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসনের ওপর নির্ভর করে দেশ পরিচালিত হচ্ছে। দেশে বর্তমানে যে পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে, দেখে মনে হয়, এখানে কোনো সরকার নাই। একনায়কতন্ত্র ও এক জনের কথায় দেশ পরিচালিত হচ্ছে। জনগণের প্রতি সরকারের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। এই করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা দুর্দশার মধ্যে পড়েছে। এ ভাইরাস ঠেকাতে আমাদের সরকার পর্যাপ্ত সময় পেয়েছিল, কিন্তু কোনো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে নাই। ডিসেম্বর মাসে চীনের উহান প্রদেশে এই ভাইরাস সংক্রমিত হলো। তখন আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে কর্ণপাত করা হলো না।
স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি ও অনিয়মের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যখন করোনা বাংলাদেশে ভয়াবহতা ধারণ করলো, তখন স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রকৃত চিত্র আমাদের সামনে ফুটে উঠল। এই করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও স্বাস্থ্য বিভাগের দুর্নীতি-অনিয়ম অব্যাহত রয়েছে। একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতেই ১০ কোটি টাকা বিল ধরা হয়েছে। নিম্নমানের পিপিই ও মাস্ক সরবরাহ করার ফলে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরাও আজ করোনায় সংক্রমিত হন। অথচ পার্লামেন্টে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা সঠিকভাবে মাস্ক ও পিপিই না পরার কারণেই নাকি ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতি হয়েছে, কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলো না। স্বাস্থ্য সচিবকে সরিয়ে আরেকটি মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হলো।
সমাবেশ শেষে রাষ্ট্রীয় পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত, পাটকল আধুনিকায়ন করা, একাধিকবার জ্বালানির দাম বৃদ্ধি বিল প্রত্যাহার, স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি লুটপাট বন্ধ, সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত এবং বিনামূল্যে সব নাগরিকের করোনা পরীক্ষা ও চিকিৎসার দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও করতে একটি মিছিল নিয়ে বের হন বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতাকর্মীরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৯ ঘণ্টা, জুলাই ০২, ২০২০
এমএমআই/এইচজে