সোমবার (১৩ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ শেষে জোটের নেতাকর্মীরা ব্যানার, ফেস্টুনসহ ডেমরার লতিফ বাওয়ানী জুট মিল পর্যন্ত পদযাত্রা ও একাধিক সমাবেশ করেন। পথে গুলিস্তান আহাদ পুলিশ বক্সের সামনে ১ম পথসভা, চিটাগাং রোডে ২য় পথসভা ও সব শেষে পুরনো ডেমরা রোড দিয়ে পদযাত্রা করে করিম জুটমিল গেটে আরও একটি পথসভা করেন তারা।
বাম জোটের সমন্বয়ক ও বাসদ নেতা বজলুর রশীদ ফিরোজের সভাপতিত্বে এসব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- সিপিবি’র উপদেষ্টা ও লতিফ বাওয়ানী জুট মিল সিবিএ’র সাবেক সভাপতি শহীদুল্লাহ চৌধুরী, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, সিপিবি’র প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুল্লাল আল কাফি রতন, বাসদ (মার্কসবাদী) নেতা মানস নন্দী, ইউসিবিএল’র নজরুল ইসলাম, গণসংহতি আন্দোলনের বাচ্চু ভূঁইয়া, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের হামিদুল হক, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির শহিদুল ইসলাম সবুজ প্রমুখ।
সমাবেশে নেতারা বলেন, সরকার লোকসানের অজুহাতে ২৬টি রাষ্ট্রীয় পাটকল বন্ধ ঘোষণা করেছে। অথচ লোকসানের প্রকৃত কারণ কী তা চিহ্নিত করে দূর করার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। লোকসানের জন্য শ্রমিকরা দায়ী নয়, দায়ী সরকারের দুর্নীতি, লুটপাট ও ভুলনীতি। এর দায় জনগণ নেবে কেন?
‘যখন সারা পৃথিবীতে পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা বাড়ছে, যখন কৃত্রিম তন্তু, পলিথিন পরিহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সে সময় পাটকল বন্ধ করা জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা। পাট ও পাটকল আমাদের জাতীয় ঐতিহ্য এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সম্পর্কিত। ফলে পাটকল বন্ধ করা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অঙ্গীকারের সঙ্গেও বিশ্বাসঘাতকতা করা।
নেতারা আরও বলেন, এসব পাটকলে লোকসানের মূল কারণ পুরোনো যন্ত্রপাতি, অদক্ষ ও মাথাভারী প্রশাসন, সময় মতো অর্থ ছাড় না করা, পাট পণ্যের বহুমুখীকরণ না করা এবং দুর্নীতি, লুটপাট। ফলে আধুনিকায়ন করে লোকসানের কারণগুলো দূর করে পাটকল লাভজনক করা সম্ভব।
‘সরকার পিপিপির নামে জনগণের সম্পদ ব্যক্তি মুনাফার হাতে তুলে দিতে চাচ্ছে। আগেও পিপিপির মাধ্যমে বহু কারখানা ব্যক্তি খাতে দেওয়া হয়েছে। তার অভিজ্ঞতা কী? সেগুলোর অনেকগুলো বন্ধ, কেউ কেউ চুক্তি ভঙ্গ করেছে। সরকার এমন সময়ে পাটকল বন্ধ ঘোষণ করলো যখন পাটের মৌসুম চলছে। এদিকে বন্ধ ঘোষণার পর এরই মাঝে পাটের দাম মণ প্রতি প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কমে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন দেশের ৪০ লাখ পাট চাষি। ফলে পিপিপি বা বন্ধ নয়, আধুনিকায়ন করে পাটকল চালু রাখার দাবি জানাই আমরা। ’
নেতারা বলেন, এমনিতেই আমাদের কাঁচা পাট ভারতে পাচার হয়, রাষ্ট্রীয় পাটকল বন্ধ হওয়ায় এ পাচার আরও বাড়বে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত ভারতকেই লাভবান করবে। ৪৮ বছরে ব্যাংক ডাকাত, ঋণখেলাপিদের ৪৫ হাজার কোটি টাকা সরকার মাফ করে দিয়েছে। রেন্টাল, কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গত ১০ বছরে উৎপাদন না হলেও ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ ভর্তুকি দিয়েছে ৬২ হাজার কোটি টাকা। অথচ ৪৮ বছরে পাটকলে মাত্র ১০ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা লোকসান দিতে হয়েছে বলে সোরগোল তোলা হচ্ছে। সরকার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার অজুহাত হিসেবে লোকসানকে বড় করে দেখে। কিন্তু এর সঙ্গে যুক্ত শ্রমিক পরিবারের জীবিকা, পাটচাষীসহ কতো মানুষের জীবিকা এই পাটকলের ওপর চলে সেটা দেখা হয় না।
সমাবেশ থেকে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা অবিলম্বে রাষ্ট্রীয় পাটকর বন্ধের গণবিরোধী সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে পাটকল আধুনিকায়ন ও রাষ্ট্রীয় পরিচালনায় সেসব চালু রাখার দাবি জানান। অন্যথায় পাটকল শ্রমিক, পাটচাষী ও দেশপ্রেমিক জনগণকে ঐকবদ্ধ করে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার মাধ্যমে পাটকলসহ অন্যান্য জাতীয় সম্পদ রক্ষা করা হবে বলে হুঁশিয়ারি জানান তারা। একই সঙ্গে এ আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আগামী ২০ জুলাই সকাল ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত বঙ্গভবন থেকে গণভবন পর্যন্ত মানবপ্রাচীর ও দেশব্যাপী মানববন্ধন, বিক্ষোভ কর্মসূচি সফল করতে সবার প্রতি আহ্বান জানানো হয় সমাবেশ থেকে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০২০
এইচএমএস/এইচজে