ঢাকা, বুধবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

জাপার ২০২২ গেছে ঘর সামলানোর ব্যস্ততায়

এস এম এ কালাম, সিনিয়র করেসপন্ডন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১, ২০২৩
জাপার ২০২২ গেছে ঘর সামলানোর ব্যস্ততায়

ঢাকা: একাদশ জাতীয় সংসদের কাগজে কলমে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা)। কিন্তু জনগণের দাবি নিয়ে রাজপথে কার্যত তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি দলটি।

জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে রাজপথে দলটির তেমন কোনো কর্মসূচিও ছিল না। ঘরোয়া সভা ও প্রেস রিলিজেই মধ্যেই সীমাবদ্ধ তাদের কর্মসূচি।

২০২২ সালের শুরুতে দ্বাদশ নির্বাচন লক্ষ্য করে ৩০০ আসনের প্রার্থী বাছাই ও সংগঠন শক্তিশালী করতে কাজ শুরু জাপা। কিন্তু অভ্যন্তরীণ কোন্দল কোণঠাসা করে ফেলে নীতি নির্ধারকদের। রওশন এরশাদ, বিদিশা এরশাদ, এরিক, সাদ ও জিএম কাদের বিতর্ক চলে অনেক দিন।

২০২২ সালের শুরুতে বিদিশা এরশাদ ঘোষণা দেন সাদ ও এরিক আগামী দিনের লাঙ্গলের ধারক-বাহক। শুধু তাই নয়, জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে সমালোচনা করেন বিদিশা। বলেন, তিনি দলের কেউ নন। মাত্র তিন মাস তিনি দলে থাকতে পারবেন। জিএম কাদের জামায়াতের সঙ্গে জোট করে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। বিদিশার এমন সমালোচনা বিব্রত হন দলটির নেতারা।

এরই মধ্যে জাতীয় পার্টি ছেড়ে যাওয়া নেতাদের দলে ফিরিয়ে আনতে পার্টির গঠনতন্ত্রের ক্ষমতাবলে রওশন এরশাদ কাউন্সিলের ডাক দেন। এক চিঠিতে তিনি বলেন, বর্তমানে জাতীয় পার্টির মূল আদর্শ সুষ্ঠুভাবে পালিত হচ্ছে না। পার্টি গঠনতন্ত্র ও নীতিমালা থেকে সরে ভ্রান্ত পথে অগ্রসর হচ্ছে।

অন্যদিকে রওশন এরশাদের চিঠি প্রকাশের পর গণমাধ্যমে পার্টি থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ দলে যে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছেন তা সম্পূর্ণ অবৈধ, অনৈতিক ও গঠনতন্ত্র পরিপন্থী। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক কমিটি গঠন ও কাউন্সিল ঘোষণার কোনো এখতিয়ার নেই প্রধান পৃষ্ঠপোষকের। কাউন্সিলে গঠিত একটি বৈধ কমিটি ভেঙে দেওয়ার কোনো ক্ষমতা জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ছাড়া আর কারও নেই। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী শুধু জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আহ্বায়ক কমিটি গঠন এবং জাতীয় কাউন্সিল আহ্বান করতে পারেন।

এরপরই রওশন এরশাদকে প্রধান বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে স্পিকারকে চিঠি দেন জিএম কাদেরের নেতৃত্বে পার্লামেন্টারি বোর্ডের সদস্যরা। চিঠি দেওয়াকে কেন্দ্র করে সমালোচনা করলে জাতীয় পার্টির সকল সদস্য পদ থেকে মশিউর রহমান রাঙ্গাকে অব্যাহতি দেন জিএম কাদের। এরপর শুরু হয় অব্যাহতি ও অন্তর্ভুক্তি নিয়ে নানা নাটকীয়তা।

রাঙ্গাকে বহিষ্কারের মধ্য দিয়ে রওশন এরশাদ ও জিএম কাদেরের বিরোধ প্রকাশে রূপ নেয়। নিজের ক্ষমতা শক্তিশালী করতে দলে রওশন পন্থীদের একে একে সকল পদ থেকে অব্যাহতি দেন জিএম কাদের। এতে করে নড়ে চড়ে বসেন রওশন এরশাদ। কাউন্সিল সফল করতে অব্যাহতি দেওয়া নেতাদের আবারও দলে অন্তর্ভুক্তি করেন তিনি। তবে পুরোদমে প্রস্তুতির মধ্যে হঠাৎ করেই কাউন্সিল স্থগিতের ঘোষণা দেন রওশন। এ নিয়ে নানা সমালোচনা হলেও রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে দেখছেন রওশন পন্থীরা।

কাউন্সিল স্থগিত করলেও গত ৪ অক্টোবর জাতীয় পার্টির বহিষ্কৃত নেতা ও দলটির সাবেক এমপি জিয়াউল হক মৃধা চেয়ারম্যান হিসেবে জিএম কাদেরের দায়িত্ব পালনে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে মামলা করেন। পরে গত ৩১ অক্টোবর ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালত জি এম কাদেরের দলীয় যাবতীয় কার্যক্রমের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন। পরে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে জিএম কাদেরের দায়িত্ব পালনে নিষেধাজ্ঞার আদেশ স্থগিত করেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি রুলও জারি করা হয়। হাইকোর্টের সেই আদেশ স্থগিত করেন চেম্বার জজ আদালত।

এরই মধ্যে রওশন এরশাদ দেশে ফিরে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী হিসেবে মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার নাম ঘোষণা করলে দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা চাঙা হয়ে ওঠেন। শুধু তাই নয় রওশন এরশাদ ও জিএম কাদেরের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ দলকে ঐক্যবদ্ধ করবে বলে মনে করেন তারা। ঘর গোছাতে সর্বশেষ ২৫ ডিসেম্বর জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদের গুলশানের বাসভবনে গিয়ে দেখা করেছেন দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক (চুন্নু)।

রোববার (১ জানুয়ারি) জাতীয় পার্টির ৩৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ উপলক্ষে বিকেল তিনটার দিকে রাজধানীর কাকরাইলে কেন্দ্রীয় কার্যালয় চত্বরে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা। মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ। উপস্থিত থাকবেন জিএম কাদেরও। এ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে নতুন বছরে রওশন এরশাদ ও জিএম কাদেরের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধভাবে জনগণের দাবি নিয়ে রাজপথে থাকবে- এমনটিই প্রত্যাশা করছেন তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় নেতারা।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১, ২০২২
এসএমএকে/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।