ঢাকা: দলীয় সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচন রুখে দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিকালে ঢাকা জেলা বিএনপির উদ্যোগে নবাবগঞ্জের পদযাত্রাপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এই হুঁশিয়ারি দেন।
তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনও (জাতীয় নির্বাচন) তারা (সরকার) আগের মতো করতে চায়। আগের মতো আবার তারা ভোট লুট করে নিয়ে যাবে, চুরি করে নিয়ে যাবে. আমরা কী সেই নির্বাচন করতে দেব? আমরা কী রুখে দাঁড়াবো না? অবশ্যই দাঁড়াব। আমাদের অস্তিত্বের জন্য, আমাদের অধিকারের জন্য, আমাদের বাংলাদেশকে রক্ষা করবার জন্য, বাংলাদেশের মানুষকে রক্ষা করার জন্য আমাদের রুখে দাঁড়াতেই হবে। এই অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। আমরা বার বার মার খাচ্ছি বাংলাদেশের মানুষ। এবার আর মার খেতে রাজি নই।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার যদি নিরপেক্ষ থাকতো আপনার ভোট আপনি দিতে পারতেন। যাকে খুশি তাকে দিতে পারতেন। এখন কী সেটা হয়, হয় না। এখন ওদের (আওয়ামী লীগ সরকার) কথা হচ্ছে, আমার ভোট আমি দেব, তোমার ভোটও আমি দেব।
এজন্য এখন মানুষ বলতে শুরু করেছে আগে যদি জানতাম তোর ভাঙা নৌকায় উঠতাম না। এই নৌকা মানুষ নেবে না। কারণ এই নৌকা নিয়ে আওয়ামী লীগ এদেশের অর্থনীতিকে ধবংস করে দিয়েছে। চুরির শেষ নাই… এবং কাজ না করে টাকা নিয়ে চলে যায়। আর ১০ টাকার জিনিস ১০০ টাকা বিল করে নিয়ে চলে যায়।
তিনি বলেন, পদ্মাসেতু করেছে খুব ভালো। কিন্তু ১০ হাজার কোটি টাকার পদ্মা সেতু ৩০ হাজার কোটি টাকায় করেছে। উন্নয়নের নদী বয়ে যাচ্ছে। কিন্তু উন্নয়নে সাধারণ মানুষের উপকার হচ্ছে না। এই সরকার যদি আবার আসে তাহলে এদেশের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না, জাতির কোনো অস্তিত্ব থাকবে না।
ক্ষমতাসীনদের ব্যাপক দুর্নীতির উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এরা ফুলে ফুলে সব কলা গাছ হয়ে গেছে। যার পায়ে স্যান্ডেল ছিল না সে এখন বিরাট গাড়ি চালায় এবং বড় বড় বাড়ি তৈরি করেছে সব আওয়ামী লীগের লোকেরা। এই বাংলাদেশের মানুষের রক্ত চুষে নিয়ে, ট্যাক্স চুরি করে নিয়ে। আর বক্তব্য নয়। এখন আমাদের শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে সোচ্চার হয়ে সরকারকে জানিয়ে দিতে চাই, আমরা ১০ দফা দিয়েছি.. তোমরা অবিলম্বে পদত্যাগ করো, সংসদকে ভেঙে দাও এবং একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দাও। সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিরপেক্ষভাবে একটা নির্বাচন কমিশন গঠন করবে, সেই কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান করবে জনগণ সেখানে ভোট দেবে। যার ভোট সে দেবে, যাকে খুশি তাকে দেবে। সেখানে যদি আওয়ামী লীগ নির্বাচিত হয়ে আসে আসুক, আপত্তি নেই। কিন্তু জনগণের ভোটে আসতে হবে।
তিনি বলেন, এই সংগ্রাম আমরা শুরু করেছি বাংলাদেশকে রক্ষা করার জন্য, বাংলাদেশের মানুষকে রক্ষা করার জন্য। তাই আসুন আমরা বিশেষ করে তরুণ যুব সমাজকে আহ্বান জানাব, বাংলাদেশে যত পরিবর্তন হয়েছে, ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৯০ আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ সবকিছু তরুণ-যু্বকরা করেছে। তরুণদের বলব, এগিয়ে আসুন; পরিবর্তনের নেতৃত্ব দিতে হবে, পরিবর্তন করতে হবে। গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করে এই ভয়াবহ দানবীয় সরকার যারা আমাদের সমস্ত অর্জনকে ধবংস করে দিয়েছে তাদেরকে পরাজিত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করব।
ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরীর সঞ্চলনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপির শিরিন সুলতানা, দেওয়ান মো. সালাহউদ্দিন, তমিজ উদ্দিন, নাজিম উদ্দিন মাস্টার, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
পদযাত্রায় মহাসচিব, কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ জেলার বিভিন্ন ওয়ার্ড ও যুব দল, মহিলা দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদলসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কয়েক হাজার নেতা-কর্মী অংশ নেন।
গ্যাস-বিদ্যুৎ-নিত্যপণ্যের দাম কমানো, সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে বিএনপি সারাদেশে জেলায় জেলায় ২৫ ফেব্রুয়ারি পদযাত্রা করে। রোববার ঢাকা জেলার এই পদযাত্রার কর্মসূচিটি হলো।
নবাবগঞ্জ শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে দুই কিলোমিটার পদযাত্রা করে বক্সবাজার মোড়ে গিয়ে এই পদযাত্রা শেষ হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৩
এমএইচ/এমএমজেড