ঢাকা: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আদানির সঙ্গে যে চুক্তি করা হয়েছে, তা দেশবিরোধী ও গণবিরোধী। অবিলম্বে এই চুক্তি বাতিল করতে হবে।
বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর গুলশান-২ এ একটি হোটেলে ‘মহা বিপর্যয়ে বিদ্যুৎ খাত: গভীর খাদে অর্থনীতি’ শীর্ষক গোল টেবিল আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন। আলোচনাসভার আয়োজন করে অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ।
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে তারা ঠিক করে নিয়েছে বিদ্যুৎ খাত থেকে সবচেয়ে বেশি চুরি করবে। তারা যা করে, সেটা পরিকল্পিতভাবেই করে। তারা ক্ষমতায় এসে বলতে শুরু করল বিদ্যুৎ খাতে বিএনপি সরকার কিছুই করেনি, শুধু খাম্বা তৈরি করেছে। কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এসব বলে জায়েজ করল তারা বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট জায়েজ করার জন্য তারা এসব প্রচারণা শুরু করল। অথচ আদানির সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছে, এই বিষয় তারা গোপন রেখেছে।
তিনি বলেন, লুট আর লুট, এখানে আর কিছু নেই। লুট ঠেকানোর জন্য, বাংলাদেশের মানুষকে বাঁচানোর জন্য আজ আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সব রাজনৈতিক দলকে এগিয়ে আসতে হবে। সিভিল সোসাইটিকে এগিয়ে আসতে হবে। ব্যক্তিকে এগিয়ে আসতে হবে। এছাড়া আমাদের বাঁচার কোনো পথ নেই।
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান মির্জা ফখরুল।
গোলটেবিল আলোচনায় বেশ কিছু লিখিত সুপারিশ তুলে ধরা হয়-
বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন বাতিল করতে হবে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সব দুর্নীতি-অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। রেন্টাল বা কুইক রেন্টাল কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি নবায়ন বন্ধ বা বাতিল করতে হবে। দ্রুত প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন স্থাপন করতে হবে, যাতে ক্যাপাসিটি চার্জ প্ৰদান কমানো যায়।
সংকট মোকাবিলায় পেট্রোবাংলা, বাপেক্স ইত্যাদি সরকারি সংস্থার মাধ্যমে দেশীয় খনিজ কয়লা ও গ্যাস উত্তোলনের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। একইসঙ্গে দেশীয় প্রকৌশলী ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহকে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ করে তুলতে উপযুক্ত উদ্যোগ নিতে হবে।
দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে টেকসই ও নিরাপদ করতে জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভরতা কমিয়ে ক্রমান্বয়ে মোট উৎপাদনের ৫০ শতাংশ নবায়নযোগ্য শক্তি নির্ভর জ্বালানি-নীতি নিতে হবে।
অবৈধ ও অস্বচ্ছ টেন্ডারবিহীন বিদ্যুৎ চুক্তি বাতিল করতে হবে, ক্ষেত্রবিশেষে চুক্তি সংশোধন করে দেশের স্বার্থ রক্ষা করতে হবে।
দেশের শিল্প-কারখানা, বাণিজ্যিক, আবাসিক ও অন্যান্য ক্ষেত্রে বিদ্যুতের চাহিদা নিরূপণ করে আগামী ২৫ বছরের জন্য বিদ্যুৎকেন্দ্র, সঞ্চালন লাইন ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের ধারাবাহিক পরিকল্পনা নিতে হবে।
বিদ্যুৎ খাতের সব ক্রয় ও বন্টন চুক্তির পূর্ণ তথ্য জনগণের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে। বিদ্যুৎ খাতের সব চুক্তি উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসরণ করে করতে হবে।
বর্তমানে দেশে বার্ষিক বিদ্যুৎ চাহিদা বৃদ্ধির পরিমাণ ৫-৭ শতাংশ। সেই হিসাবে আগামী ৫-৭ বছরে দেশে নতুন কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রয়োজন নেই বরং বিদ্যমান বিদ্যুৎকেন্দ্রসমূহের সংস্কার ও বিতরণ ব্যবস্থার আধুনিকীকরণের মাধ্যমেই বর্তমান সংকট থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।
আলোচনাসভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকৌশলী হাসিন আহমেদ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন প্রকৌশলী কেএম আসাদুজ্জামান চুন্নু। সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের সভাপতি প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু।
এ ছাড়া বক্তব্য রাখেন বিএনপির সহ-স্থানীয় সরকারবিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আক্তার, সহ-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী আশরাফ উদ্দিন বকুল, বাংলাদেশ পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সদস্য সচিব ও ডিইউজে সভাপতি কাদের গণি চৌধুরী প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৩ ঘণ্টা, মার্চ ৯, ২০২৩
এমএইচ/আরএইচ