ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

সর্বগ্রাসী দুর্নীতিতে দেশ ফোকলা হয়ে গেছে: ফখরুল

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০২৩
সর্বগ্রাসী দুর্নীতিতে দেশ ফোকলা হয়ে গেছে: ফখরুল ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতিতে দেশ ‘ফোকলা’ হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শনিবার (১৮ মার্চ) বিকেলে এক সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ভারতে একটা স্লোগান ছিল—‘গলি গলি মে শোর হ্যায়, অমুক নেতা চোর হ্যায়’, নাম বললাম না। আজকে আমাদের স্লোগান হচ্ছে, আওয়ামী লীগ ভোট চোরের মূলনীতি, টাকা পাচার আর দুর্নীতি। একমত আছেন আপনারা?

মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগের দুর্নীতি গোটা বাংলাদেশ একটা ফোকলা অর্থনীতিতে পরিণত করেছে, গোটা দেশ ফোকলা হয়ে গেছে। এরা ভোট চোর, বাংলাদেশের অর্থনীতির চোর… এদের সরিয়ে সত্যিকার অর্থে একটা জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের কথা পরিষ্কার, আওয়ামী লীগ সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়ে একটি নিরপেক্ষ  নির্বাচন কমিশন গঠন করে তার মাধ্যমে নিরপেক্ষ নির্বাচনে সকল দলের একটি নির্বাচন করতে হবে। সেই নির্বাচনে একটি নির্বাচিত পার্লামেন্ট হবে, একটি জনপ্রতিনিধির সরকার হবে। তারাই দেশ চালাবে।

নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই সরকার যারা বিনা নির্বাচনে জোর করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে, যারা রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করছে অন্যায়ভাবে, তাদের জনগণের শক্তি দিয়ে সরে যেতে বাধ্য করতে হবে। আজকে তাই সমস্ত দেশ উত্তাল হয়ে উঠেছে। আমরা আগস্ট মাস থেকে আন্দোলন শুরু করেছি। ১৭ জন নিরীহ ভাই প্রাণ দিয়েছেন, অসংখ্য মানুষ আহত হয়েছেন, অসংখ্য নেতা-কর্মী কারাগারে গেছেন, এখনো কারাগারে আছেন তাদের যে ঋণ সেই ঋণ শোক করতে, জনগণের দাবি আদায় করতে, স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বেঁচে থাকতে এই সরকারকে অবশ্যই সরাতে হবে। সেজন্য আমাদের সবাইকে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।

টিআইবিসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সরকারের দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে যত সমস্যা দেখতে পান, এই বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি, চাল-ডাল-তেল-লবণ-রসুনের দাম বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য, ব্যাংকিং খাত, অবকঠামো খাত... সব কিছুর মূলে হচ্ছে আওয়ামী লীগের দুর্নীতি।

তিনি বলেন, এগুলো আমাদের কথা নয়, এ কথাগুলো কিছুদিন আগে পশ্চিমা বিশ্বের একটি বিখ্যাত পত্রিকা দি ইকোনোমিস্টের। সেই পত্রিকা বলেছে যে, বাংলাদেশে কিছুদিন আগেও পশ্চিমা রাজনীতি-অর্থনীতিবিদরা খুব জোরেশোরে বলতেন যে, বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের মধ্যে একটা মডেল অব ডেভেলপমেন্ট। সেই পত্রিকা এখন বলছে যে, এই মডেল অব ডেভেলপমেন্টের যে ফানুস, যে বেলুন উড়ছিল আকাশে, তা দুর্নীতির কারণে চুপসে পড়ে গেছে।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, এদেশ আর নেই, এদেশের কিছু আর অবশিষ্ট নেই। এই রাষ্ট্রকে ওরা ধবংস করে ফেলেছে। গত দুই দিন আগে সুপ্রিম কোর্টে যে ঘটনা ঘটিয়েছে, তা আপনারা দেখেছেন। তারা রাষ্ট্রের সমস্ত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে একে একে ধবংস করে ফেলেছে। এদেশে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করে ফেলে্ছে।

তিনি বলেন, ওরা শুধু ভোট চুরি না.. ওরা জনগণের পকেট কেটে বিদেশে টাকা পাচার করছে। বিদ্যুতের দাম বেড়েছে সেটাও তাদের দুর্নীতির জন্য। এভাবে তারা সব কিছু খেয়ে ফেলেছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, দেখুন আপনারা, হজের ব্যাপারে দুষ্টামি করা ওদের পুরনো অভ্যাস। আজকে সাধারণ মানুষ যারা হজে যেতে চান তাদের ৭ লাখ টাকা দিতে হবে। অথচ ভারতে আড়াই লাখ টাকা আর পাকিস্তানে ৪ লাখ টাকা। তাহলে বাংলাদেশে কেন ৭ লাখ টাকা হবে? ওই যে চুরি করেছে। বাংলাদেশ বিমান থেকে চুরি করে একেবারে শেষ করে ফেলেছে। সেই চুরিকে লোপাট করার জন্য তাদের এখন বেশি করে টাকা নিতে হবে।

মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিনের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু‘র সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, জয়নুল আবদিন ফারুক, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ফজলুল হক মিলন, নাজিম উদ্দিন আলম, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, নাসির উদ্দিন অসীম, কামরুজ্জামান রতন, রকিবুল ইসলাম বকুল, এবিএম মোশাররফ হোসেন, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, রওনাকুল ইসলাম টিপু, আমিরুজ্জামান খান শিমুল, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, সাঈদ সোহরাব প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

এছাড়া মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, সুলতানা আহমেদ, যুবদলের সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, রাজীব আহসান, মহানগর বিএনপির ইশরাক হোসেন, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, শফিকুল ইসলাম বাবুল, মৎস্যজীবী দলের রফিকুল ইসলাম মাহতাব, জাসাসের হেলাল খান, শ্রমিক দলের মুস্তাফিজুল করীম মজুমদার, ড্যাবের অধ্যাপক হারুন আল রশিদ, ছাত্রদলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাইফ মাহমুদ জুয়েল এবং সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের কাদের গনি চৌধুরী ও অধ্যাপক লুৎফর রহমান বক্তব্য রাখেন।

সমাবেশে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০২৩
এমএইচ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।