ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

এই সরকারকে যত দ্রুত বিদায় করা যায় ততই মঙ্গল: ড. মোশাররফ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৬ ঘণ্টা, মে ৬, ২০২৩
এই সরকারকে যত দ্রুত বিদায় করা যায় ততই মঙ্গল: ড. মোশাররফ

ঢাকা: বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারকে যত শিগগিরই বিদায় করা যায়, দেশ ও জনগণের ততই মঙ্গল বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। শনিবার (৬ মে) বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই মানববন্ধনের আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল।

ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিএনপি শান্তিপূর্ণ বিভাগীয় সমাবেশ কর্মসূচি দিয়েছিল। এই সরকারের পুলিশ বাহিনী, পেটুয়া বাহিনী সেখানে বাধা সৃষ্টি করেছে। সব বাধাকে উপেক্ষা করে প্রতিটি কর্মসূচিকে জনগণ সফল করেছে। এই সরকারকে যত শিগরিই বিদায় করা যায়, ততই এ দেশের এবং জনগণের মঙ্গল।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়া আর গণতন্ত্র একে অপরের সম্পূরক। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের অর্থই হচ্ছে খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়ার অর্থই হচ্ছে গণতন্ত্র। শুধুমাত্র গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করায় আজকে মিথ্যা-বানোয়াট মামলায় ফরমায়েসি রায় দিয়ে দেশনেত্রীকে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। তেমনিভাবে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকেও একটি বানোয়াট মামলায় ফরমায়েসি রায়ে বিদেশে থাকতে বাধ্য করছে।

তিনি আরও বলেন, আজকে দেশে যারা গায়ের জোরে সরকারে আছে, তারা স্বৈরাচারী। তারা গণতন্ত্রকে হত্যা করে, গণতন্ত্রের পক্ষে যারা কথা বলে তাদের কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চেয়েছে। তাদের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে আজকে দেশনেত্রী কারগারে গৃহবন্দী। তাই আজকে এদেশের মানুষ খালেদা জিয়ার মুক্তি চায়। এদেশের জনগণ গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধার চায়।

সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, গণতন্ত্রের সঙ্গে যে নেত্রীর নাম ওতোপ্রতোভাবে জড়িত, সেই নেত্রীর মুক্তি ছাড়া গণতন্ত্র মুক্তি পাবে না। সেজন্য আজকে দেশের সংকটকালে দেশকে রক্ষা, জনগণকে রক্ষা, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য খালেদা জিয়ার মুক্তি অপরিহার্য বিষয়।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, আজকে যারা সরকারে আছে, তারা স্বাধীনতার পর ক্ষমতায় এসে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত গণতন্ত্রকে হত্যা করে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করে এদেশে সারাজীবনের জন্য রাজত্ব কায়েম করতে চেয়েছিল। কিন্তু তা ব্যর্থ হয়েছে। এই আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার পর বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের নামে অর্থনীতি লুটপাট করে এদেশে দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি করেছিল। আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী তখন বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলেছিলেন।

তিনি বলেন, ১/১১ -তে যারা সংবিধান বহির্ভূতভাবে জরুরি আইন করে সরকারে ছিল, তারা এদেশ থেকে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার জন্য শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় বসিয়ে গেছে। এরপর এই সরকার গায়ের জোরে ক্ষমতায় রয়েছে। ২০১৪ এর নির্বাচন এদেশের মানুষ বয়কট করেছিল। সেই নির্বাচন বয়কট হওয়ার পরও এই সরকার গায়ের জোরে ক্ষমতায় থেকেছে। ২০১৮তে তারা দিনের ভোট রাতে ডাকাতি করেছে।

ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, জনগণের প্রতি এই সরকারের কোনো দায়বদ্ধতা নেই বলে তারা লুটপাট, দুর্নীতি, মেগা প্রজেক্টে মেগা দুর্নীতি করে, দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। ১৯৭২-৭৫ এ তারা এভাবে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। এখন আবার তারা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে, পদদলিত করেছে, অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। যার জন্য আজকে দ্রব্যমূল্যের  ঊর্ধ্বগতি এই সরকার ঠেকাতে পারছে না। কারণ, তাদের সিন্ডিকেট, তাদের ব্যবসায়ীরা এদেশের মানুষের পকেট থেকে টাকা লুটপাট করে বিদেশে পাচার করার জন্য এই পরিস্থিত সৃষ্টি করেছে।

তিনি বলেন, আজকে মধ্যবিত্ত মানুষ গরিব হয়ে যাচ্ছে, গরিব আরও গরিব হয়ে গেছে। তারা পেট চালাতে পারে না। সেই অবস্থায় আজকে দেশকে এই সরকারের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য সবাই ঐক্যবদ্ধ।

তিনি আরও বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান এবং তার তার পরিবার আওয়ামী লীগের শত্রু। কারণ আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার ঘোষণা থেকে শুরু করে যে যে ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে, সেখানে বিএনপি সফল হয়েছে। এ জন্য আজকে আওয়ামী লীগ বিএনপিকে, এ দেশের জনগণকে ভয় পায়। তাই আজকে যদি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার না হয়, তাহলে দেশের ভবিষ্যত কী হবে, কেউ বলতে পারবে না। জাতির স্বার্থে আমাদেরকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হবে।

কোনো স্বৈরাচার আপোষে কখনো ক্ষমতা ছাড়েনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাই আজকে সবার দাবি আগামী নির্বাচন হতে হবে শেখ হাসিনামুক্ত বাংলাদেশে। শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না, হতে পারে না। অতীতের নির্বাচনগুলোতে প্রমাণ হয়েছে শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্দলীয়, নিরপেক্ষা, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয়নি, ভবিষ্যতেও হবে না। তাই শেখ হাসিনাকে সরকার থেকে হটিয়ে এদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং খালেদা জিয়ার মুক্তির একমাত্র পথ এদেশে গণ আন্দোলন সৃষ্টি করা। গণ আন্দোলন ছাড়া বিকল্প নেই। সময় অতি সন্নিকটে।

জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহীম (বীর প্রতীক), বিএনপি চেয়ারপার্সেনের উপদেষ্টা ও জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ জয়নুল আবেদীন ফারুক, উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য অ্যাড. ফজলুর রহমান, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, নির্বাহী কমিটির সদস্য শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর, শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ সেলিভ ভূঁইয়া প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৬ ঘণ্টা, মে ০৬,২০২৩
এসসি/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।