ঢাকা: জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের এমপি বলেছেন, লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। একই সঙ্গে বাড়ছে মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা।
বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বনানীস্থ কার্যালয় মিলনায়তনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের মতবিনিময় ও যোগদান সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জি এম কাদের বলেন, প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ নতুন করে ডেঙ্গু আক্রান্ত হবে আর এর মধ্য থেকে কিছু সংখ্যক মারা যাবে, এটিই যেন স্বাভাবিক। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মানুষ মারা যাবে এটি স্বাভাভিক ঘটনা হতে পারে না। ডেঙ্গুর ভয়াবহতা নিয়ন্ত্রণে কারো যেন দায় নেই। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, এ মাসের ১৯ দিনেই ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। এ বছর এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ৮৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে, সাধারণ মানুষের ধারণা এ মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেশি। এ পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে ১ লাখ ৭৩ হাজার ৭৯৫ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, ডেঙ্গুর লার্ভা কমছে না, তাই আক্রান্তের সংখ্যাও কমছে না। ডেঙ্গু বিষয়ে সাধারণ মানুষ অধিক শোকে পাথর হয়ে গেছে। তারা আর এ বিষয়ে কথা বলতে চায় না। হাসপাতালে জায়গা দেওয়ার ক্ষমতা নেই। আমরা ডেঙ্গু নিয়ে কথা বললে নাকি দেশের ভাবমূতি নষ্ট হচ্ছে। তাই এটিকে তারা রাষ্ট্রদ্রোহ বিবেচনা করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বানাতে চাচ্ছে।
জি এম কাদের আরো বলেন, রাজধানীতে ডেঙ্গু নিধনে দুই সিটি করপোরেশন নাটক করছে। ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দেখলেই বোঝা যায়, তাদের কোনো সফলতা নেই। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, রাজধানীর বাইরেও ডেঙ্গু নিধনে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই। আবার, ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য পর্যাপ্ত স্যালাইন পাওয়া যাচ্ছে না। প্রভাবশালী একটি গোষ্ঠী জীবন রক্ষাকারী স্যালাইন কালোবাজারে নিয়ে কয়েকগুণ মুনাফা করছে, সরকারের যেন কিছুই করার নেই। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ, আক্রান্ত রোগীদের সুচিকিৎসা ও স্যালাইন সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান।
তিনি আরও বলেন, পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনের প্রধান কাজ হচ্ছে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা। মশা-মাছি নিয়ন্ত্রণ করতে তাদের ভূমিকাই বেশি। এখন আমদের দেশের শহরগুলো আফ্রিকার অনেক শহরের চেয়েও নোংরা। পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের কাজ এখন বড় বড় ভবন করা ও ঠিকাদারের সঙ্গে কমিশন ম্যানেজমেন্ট করা। সেখানে এ লীগ, সে লীগসহ বিভিন্ন লীগকে চাঁদা দিতে হচ্ছে। আবার, সিঙ্গাপুরের নাম করে মশা নিধনে একটি ভেজাল ওষুধ আমদানি করা হয়েছে। পরে সিঙ্গাপুর বলেছে, ওই ঔষুধ সিঙ্গাপুরের নয় বা তারা ওই ঔষুধ বাংলাদেশে দেয়নি। মশা নিধনের চেয়ে তারা এমন কাজ-কর্মে বেশি ব্যস্ত। আসল কাজ থেকে পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন অনেক দূরে চলে গেছে।
এ সময় জাতীয় পার্টি মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেন, জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জি এম কাদের এমপির নেতৃত্বে পল্লীবন্ধুর সৈনিকেরা ঐক্যবদ্ধ আছে। কোনো ষড়যন্ত্রে জাতীয় পার্টির ঐক্যে ফাটল ধরানো যাবে না। যারা জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করবে তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে যাবে। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির অগ্রযাত্রা কেউ রোধ করতে পারবে না। দেশের মানুষ জাতীয় পার্টিকে আবারও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় দেখতে চায়।
সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় পার্টি কো চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি বলেন, দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষের মাঝে হাহাকার উঠেছে। হতদরিদ্রের আর্তনাদ যেন শোনার কেউ নেই।
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার সভাপতিত্বে এ যোগদান অনুষ্ঠান মতবিনিময় সভা পরিচালনা করেন মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবু রহমান খশরু।
নিউ সুপার মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হাজী মোহাম্মদ হোসেন, বিশিষ্ট সাউন্ড সিস্টেম ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ আল মামুন, বলাকা শপিং কমপ্লেক্স ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি মো. আব্দুর রহিম অপু, আনিছুর রহমানসহ শতাধিক ব্যবসায়ী ও সমাজ সেবক জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপির হাতে ফুল দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৩
এসএমএকে/জেএইচ