ঢাকা: বর্তমান সময়ে অধিকাংশ বিরোধী ছাত্রনেতারা রাজপথে না নেমে মোবাইলে স্ট্যাটাস দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ছাত্রনেতাদের উদ্দেশে একপ্রকার হতাশা প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, মুখে কুলুপ এটে বসে থাকবেন না, জেগে উঠতে হবে।
বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউশনের মিলনায়তনে ‘ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্যের কনভেনশনে’ তিনি এসব কথা বলেন।
সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা, নিরাপদ ক্যাম্পাস ও ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষে ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যের এ ছাত্র কনভেনশন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে এ্যানীকে যেভাবে মেরেছে আগামীকাল আপনাদের সঙ্গেও এসব হতে হবে। তরুণদের ক্ষোভটা মোবাইল সেটে। একটি স্ট্যাটাস দিলেই শেষ। ক্ষোভটা মোবাইল সেটে দিলে হবে না, রাজপথে আসতে হবে। রাজপথে এসে তাদের পরাজিত করতে হবে, রুখে দাড়াতে হবে। জেগে উঠতে হবে। রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়ে আন্দোলন করে এ সরকারকে নামাতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমি অনেক আশাবাদী। এ দেশে যা কিছু কল্যাণকর ঘটেছে, যা কিছু মহৎ ঘটেছে, যা কিছু বদলে দিয়েছে তার সবই ছাত্র ও যুবকদের দ্বারা। আর সেজন্যই আমার অত্যন্ত আশার দিন। আমরা একটি বড় যুদ্ধে নেমেছি। সেই যুদ্ধটি হচ্ছে একটি ফ্যাসিবাদী শক্তি যারা আমাদের সব অধিকার কেড়ে নিয়ে, স্বপ্নগুলো ভেঙে খানখান করে, আপনজনদের দূরে সরে নিয়ে, আজ গুম করেছে। ১ বছরের মধ্যে ২২ জন ছাত্রনেতা, যুবনেতা ও স্বেচ্ছাসেবক নেতাকর্মীদের রাস্তায় গুলি করে মেরেছে। কোথায় বিদ্রোহ, সেই বিদ্রোহ আনতে হবে।
শুধু ভোটচোর বলেলে হবে না। শেখ হাসিনা নিপাত যাক, ফ্যাসিবাদ নিপাত যাক বলতে হবে। এ ব্যবস্থা ভেঙে যাক।
রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে সব কিছু দখল করে নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। দেশে এখন দুই শ্রেণি। একশ্রেণি পাহাড় বানিয়েছে বিত্তের, টাকা-পয়সা সম্পদের। তাদের ছেলেমেয়েরা কেউ এ দেশে পড়ে না, তারা টাকা সব বাইরে পাঠিয়ে দেয়। আর আমাদের ছেলেমেয়েরা এ দেশে পড়াশোনা করে চাকরি পায় না। অথচ এ সরকার কথা দিয়েছিল, ঘরে ঘরে চাকরি দেবে।
আ. লীগ সবসময় একটি প্রতারক দল এমন মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, মান্না সাহেব আগে বলতেন ফোর টোয়েন্টি দল। অর্থ্যাৎ, তারা মুখে বলবে একটি, কাজ করবে আরেকটি। গতকাল মার্কিন প্রতিনিধি দলকে আওয়ামী লীগ বলেছে, এখানে নাকি সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন তারাই এনেছে। গত দুই নির্বাচন তারা নাকি সুষ্ঠুভাবেই করেছে। অথচ ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৪ জন নির্বাচিত হয়েছিল, ২০১৮-তে আগের রাতে ভোট করেছে। এখন তারা বলছে আমার ওপর আস্থা রাখেন। আমি আবার সুষ্ঠু নির্বাচন করব। এটি হচ্ছে শেয়ালের কাছে মুরগি দেওয়া।
রিজার্ভ নেমে যাচ্ছে জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, কয়েকদিন পর আমদানির টাকা পরিশোধ করতে পারবে না। ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে পারছে না। গার্মেন্টস মালিকরা বলছেন, ৪২ ভাগ অর্ডার কমে গেছে, কাজ করতে পারছে না। বেতন পাচ্ছে না। বাজারে গেলে তারা চাল-ডাল নিত্যপণ্য কিনতে পারছে না। শিক্ষার্থীরা খাতা-কলম কিনে দিতে পারছে না। আর তারা অনেক আনন্দে আছেন। মানুষ বাঁচতে চায় আপনাদের হাত থেকে। আপনাদের চুরি, দুর্নীতি, নির্যাতন, যন্ত্রণা, রাষ্ট্রকে সব কিছু থেকে ধ্বংস করে দেওয়া- এসব থেকে মানুষ বাঁচতে চায়।
সরকারকে দ্রুত একটি নির্দলীয় নিরপক্ষে সরকারের অধীনে নির্বাচন দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্বাচন দিলে ল্যাঠা চুকে যাবে। এতই যদি জনপ্রিয় হন, ভোট দিতে অসুবিধা কোথায়। এতকিছু বানিয়েছেন, পদ্মাসেতু, আন্ডারগ্রাউন্ড টানেল, উড়ালসড়ক বানিয়েছেন, জনগণ তো আপনাকে ভোট দেবে। নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আপনাদের অস্তিত্ব থাকবে না। এজন্য আপনারা নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে চান না। আমাদের পবিত্র দায়িত্ব, মানুষকে এ ভয়াবহ দানবের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। নিঃসন্দেহে এ দানবের, ফ্যাসিবাদের পরাজয় ঘটবে।
ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্যের কনভেনশনের সভাপতিত্ব করেন ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান।
এতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জুনায়েদ সাকি ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক।
এছাড়া কেন্দ্রীয় নেতা, বিশিষ্ট নাগরিক ও সাবেক ছাত্রনেতারা উপস্থিত রয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০২৩
ইএসএস/জেএইচ