ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

শাপলা চত্বরেই মহাসমাবেশ করবে জামায়াত

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০২৩
শাপলা চত্বরেই মহাসমাবেশ করবে জামায়াত

ঢাকা: রাজধানী ঢাকার মতিঝিলের শাপলা চত্বরেই আগামী শনিবার ((২৮ অক্টোবর) মহাসমাবেশ কর্মসূচি পালন করবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) ভার্চ্যুয়ালি এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান এ মহাসমাবেশ সর্বাত্মকভাবে সফল করার জন্য দেশবাসীর সার্বিক সহযোগিতার আহ্বান জানান ।

সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা দাবিতে এ সংবাদ সম্মেলন হয়।

এতে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আর মাত্র কিছু দিন পরই অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। অথচ এখনও নির্বাচনের কোনো পরিবেশ তৈরি হয়নি। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি করা পূর্ব শর্ত। কিন্তু সরকার লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি করার কোনো চিন্তাই করছে না। দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষসহ গোটা জাতি মনে করে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষে নির্দলীয় নিরপেক্ষ কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই। কারণ এর আগে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলো দেশে-বিদেশে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিল। কিন্তু সরকার গণতন্ত্রকামী মানুষের সে দাবি পাশ কাটিয়ে যেনতেন প্রকারে একতরফা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে বিনা ভোটের সরকার দলীয় বিবেচনায় প্রশাসনকে ঢেলে সাজিয়েছে।

আরও বলা হয়, ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা সদ্য অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি কেএম হাসানকে বিএনপির লোক আখ্যা দিয়ে তার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না বলে তিনি আন্দোলন শুরু করেছিলেন যাতে তিনি কেয়ারটেকার সরকার প্রধানের দায়িত্ব নিতে না পারেন। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে বহু মানুষকে হত্যা করে দেশে এক ভয়াবহ অরাজকতা তৈরি করা হয়েছিল। জাতির প্রশ্ন দলীয় লোক বিবেচনায় বিচারপতি কেএম হাসানের অধীনে যদি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না হয়, তাহলে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন কীভাবে সম্ভব? এটি শেখ হাসিনার দ্বিমুখী আচরণ। দেশবাসী মনে করে, শেখ হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন কখনই সম্ভব নয়।

মুজিবুর রহমান বলেন, বিগত ১৫ বছরে বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকার নির্বাচন ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দিয়েছে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর সাজানো ও ষড়যন্ত্রমূলক নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হয়। আওয়ামীলীগ ২০১৪ সালে ভোটারবিহীন নির্বাচনের প্রহসন করে পুনরায় ক্ষমতায় আসে। ২০১৪ সালে মূলত বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। ১৫৩টি আসনে বিনা ভোটে সংসদ সদস্যদের নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়। দেশের মানুষকে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে দেওয়া হয়নি। প্রকৃতপক্ষে এটি কোনো নির্বাচন ছিল না। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগের রাতে ভোট দিয়ে। ব্যালট বাক্স ভর্তি করে মধ্যরাতের পাতানো নির্বাচনের মাধ্যমে আবারো ক্ষমতা দখল করে আওয়ামীলীগ। ২০১৮ সালের নির্বাচন মধ্যরাতের নির্বাচন হিসেবে সারা বিশ্বে কুখ্যাতি অর্জন করে। বর্তমান জালিম সরকারের অধীনে। কোনো নির্বাচনই অবাধ, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ হতে পারে না। জামায়াতে ইসলামী বারবার বলে আসছে কেয়ারটেকার সরকার ব্যতীত জনগণ তাদের পছন্দের সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে না। সংবিধানে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা না থাকার দোহাই দিয়ে সরকার মূলত নিজেদের ছকে আরেকটি সাজানো নির্বাচনের পাঁয়তারা করছে। জনগণ সরকারের এ ষড়যন্ত্র বাস্তবায়িত হতে দেবে না, ইনশাআল্লাহ।

তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী একটি নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। বাংলাদেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামীর ঐতিহাসিক ভূমিকা রয়েছে। অথচ জামায়াতে ইসলামীকে সভা-সমাবেশ ও মিছিল করতে দেওয়া হচ্ছে না। প্রশাসনের কাছে বারবার লিখিতভাবে আবেদন জানানোর পরও প্রশাসন সভা-সমাবেশ বাস্তবায়নে সহযোগিতা না করে উল্টো বাধা দিচ্ছে। দেশে যাতে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন না হয়, সেজন্য জামায়াতের আমীরসহ শীর্ষস্থানীয় নেতাদের এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে আটক করে রেখেছে।

জামায়াতে ইসলামী তার সাংবিধানিক অধিকার অনুযায়ী আগামী ২৮ অক্টোবর রাজধানী ঢাকা মহানগরীর শাপলা চত্বরে শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ বাস্তবায়নে সহায়তা চেয়ে পুলিশ কমিশনারের কাছে লিখিতভাবে অবহিত করেছে। পক্ষপাত দুষ্ট এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেছে, জামায়াতকে সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না। পুলিশের দায়িত্ব হলো শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ বাস্তবায়নে সহযোগিতা করা, বাধা দেওয়া নয়। তার এ বক্তব্য অসাংবিধানিক, অগণতান্ত্রিক ও বেআইনি। আমরা পক্ষপাত দুষ্ট পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে রাজনৈতিক দলসমূহের সভা-সমাবেশ ও মিছিল শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করা। মিছিল, মিটিং, সভা-সমাবেশ প্রত্যেক নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। এ অধিকার যাতে তারা প্রয়োগ করতে পারে, সে ব্যাপারে সহযোগিতা করা পুলিশের দায়িত্ব। তাতে বাধা দেওয়া পুলিশের দায়িত্ব হতে পারে না। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি বিগত সময় অসংখ্যবার দেশের বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ করার সহযোগিতা চেয়ে আবেদন করা হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি। এটি সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক। পক্ষপাত দুষ্ট ভূমিকা থেকে বের হয়ে আসার জন্য আমরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নুরুল ইসলাম বুলবুলের উপস্থাপনায় সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, নায়েবে আমীর ডা.সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম হামিদুর রহমান আজাদ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের ভারপ্রাপ্ত আমীর আব্দুর রহমান মুসা ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিবুর রহমান পলাশ।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০২৩
টিএ/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।