ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

লক্ষ্মীপুর-৩ উপনির্বাচন

ব্যালটে সিল মারার সেই ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন ইসিতে

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট     | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০২৩
ব্যালটে সিল মারার সেই ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন ইসিতে

লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনের উপ-নির্বাচনে ভোটগ্রহণের সময় ৫৭ সেকেন্ডে ৪৩টি ব্যালটে পেপারে অবৈধভাবে সিল মারার ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন নির্বাচন কমিশনে (ইসি) জমা দেওয়া হয়েছে।  

শনিবার (১১ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে উপ-নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কুমিল্লা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ফরহাদ হোসেন এ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।

রাত সোয়া ৮টার দিকে বাংলানিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন তিনি।  

মো. ফরহাদ হোসেন বলেন, তদন্ত প্রতিবেদনটি ইসিতে জমা দিয়েছি। তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করেপরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত নেবে ইসি। লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারের (এসপি) তদন্তও শেষ হয়েছে। তাদের প্রতিবেদনও আজ ইসিতে জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।  

গত ৭ নভেম্বর লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের উপনির্বাচনের ফলাফলের গেজেট প্রকাশ স্থগিত রেখে ভোটকেন্দ্রে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নেয় ইসি। এরই ধারাবাহিকতায় উপ-নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা, লক্ষ্মীপুরের ডিসি ও এসপিকে ব্যালট পেপারে অবৈধভাবে সিল মারার বিষয়টি পৃথকভাবে তদন্তের নির্দেশ দেয় কমিশন। তাদের তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

৮ নভেম্বর লক্ষ্মীপুর জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে ওই কেন্দ্রে ভোট নেওয়া কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টদের সাক্ষাৎকার নেয় রিটার্নিং কর্মকর্তার গঠিত তদন্ত কমিটি। জেলা পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও তদন্ত করা হয়।  

এদিকে, ব্যালটে সিল মারার ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর সুষ্ঠু ভোট নিয়ে সারা দেশে সমালোচনা শুরু হয়। ঘটনার পর পলাতক থাকে মূলহোতা বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতা আজাদ হোসেন। এরপর ১০ নভেম্বর ভোরের দিকে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে আজাদকে চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের দেওপাড়া গ্রাম থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। ১১ নভেম্বর দুপুরে ৫৪ ধারায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করে চন্দ্রগঞ্জ থানা পুলিশ।  পরে পরে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে জেলা কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।  

গত ৫ নভেম্বর লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনের একটি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়নের ১১৫টি কেন্দ্রে উপ-নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে দিঘলী ইউনিয়নের দক্ষিণ খাগুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতা আজাদ ব্যালট বইয়ে নৌকায় মার্কায় অনবরত সিল মারেন। এ ঘটনার ৫৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এতে ওই নেতাকে ৪৩টি ব্যালট পেপারে নৌকা প্রতীকে সিল মারতে দেখা যায়।  

আজাদ হোসেন লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দিঘলী ইউনিয়নের দক্ষিণ খাগুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকার কর্মী হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। তিনি চন্দ্রগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। এর আগে দিঘলী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন তিনি। গত অক্টোবরে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাকে বহিষ্কার করে জেলা ছাত্রলীগ।

তবে গত ৭ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনে নৌকা প্রতীকে বিজয়ী প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু দাবি করেন, ব্যালটে সিল মারা আজাদ হোসেন ছাত্রলীগের কেউ নন। ছাত্রলীগ থেকে তাকে আগেই বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি শিবিরকর্মী।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শাহজাহান কামাল মারা যান। ৩ অক্টোবর আসনটি শূন্য ঘোষণা করে ইসি। ৪ অক্টোবর উপ-নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, জাকের পার্টির, জাতীয় পার্টি ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির প্রার্থী অংশ নেন। মোট ১১৫টি কেন্দ্রে ব্যালটের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।

নির্বাচনের দিন দুপুরেই অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ এনে জাপা ও জাকের পার্টির প্রার্থী ভোট বর্জন করেন।

এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই আসনের ফলাফলের গেজেট স্থগিত রেখেছে ইসি। একই সঙ্গে জেলা প্রশাসক (ডিসি), জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) ও উপ-নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তাকে পৃথকভাবে ঘটনাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়।  

** নৌকায় ৫৭ সেকেন্ডে ৪৩ সিল মেরে ভাইরাল ছাত্রলীগ নেতা
** প্রকাশ্যে নৌকায় ছাত্রলীগ নেতার সিল মারার ঘটনায় তদন্ত কমিটি
**৫৭ সেকেন্ডে ৪৩ ব্যালটে নৌকায় সিল মারার ঘটনায় তদন্ত শুরু
** নৌকায় সিল মারা আজাদ শিবিরকর্মী, দাবি জয়ী আ. লীগ প্রার্থীর

** নৌকায় সিল মারা সেই আজাদ কারাগারে 

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০২৩
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।