ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

কার হবে জাপা, দেবর না ভাবির?

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৭ ঘণ্টা, মার্চ ৯, ২০২৪
কার হবে জাপা, দেবর না ভাবির?

ঢাকা: জাতীয় পার্টির (জাপা) একাংশ কাউন্সিল করে প্রয়াত চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদপত্নী রওশন এরশাদকে চেয়ারম্যান করা হয়েছে। আর মহাসচিব করা হয়েচে কাজী মামুনুর রশিদকে।

অন্য অংশের নেতৃত্বে আছেন এরশাদ ভ্রাতা জি এম কাদের।

নির্বাচন কমিশন (ইসি) কর্মকর্তারা বলছেন, দেবর-ভাবির এই লড়াইয়ে দলটি একীভূত থাকা অবস্থায় যে কমিটি ইসিতে জমা দেওয়া হয়েছিল, সেই কমিটির নেতারা কোনো অংশে বেশি সেটাই আমলে নিতে হবে। এক্ষেত্রে প্রেসিডিয়াম সদস্য যেই অংশে বেশি সেই অংশকেই স্বীকৃতি দেবে কমিশন। আর সেই বিচার না মানলে সংশ্লিষ্ট অংশকে যেতে হবে আদালতে।

সম্প্রতি রওশন এরশাদপন্থি কমিটিকে মূল জাপা বলে গণ্য করতে ইসিতে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। তবে তা নামঞ্জুর করে জি এম কাদের নেতৃত্বাধীন অংশকেই আমলে নিয়েছে আউয়াল কমিশন।

এ বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, প্রেসিডিয়াম সদস্য অনুযায়ী সিদ্ধান্ত আসবে। কোনো কমিটিতে কতজন প্রেসিডিয়াম সদস্য আছে সে হিসাব হবে। যাদের পাল্লা ভারী সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত হবে। এক্ষেত্রে গণতন্ত্রী পার্টির মতোও পরিস্থিতি গড়াতে পারে। দলটির দুটি অংশই নিজেদের গণতন্ত্রী পার্টি দাবি করায় সম্প্রতি তাদের নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্ত দিয়েছিল ইসি। এমনকি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের সব প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিলের সিদ্ধান্তও হয়েছিল। পরবর্তীতে তারা আলাদতে গেলে এবং ইসিতে প্রার্থীদের প্রার্থিতা বহাল রাখার আবেদন জানালে তা মঞ্জুর করে নির্বাচন কমিশন।

মূল কমিটি কার নেতৃত্বে এমন বিরোধে ইসির সিদ্ধান্ত না মানলে সেই পথেও এগোতে পারে সংস্থাটি। এক্ষেত্রে আদালতই হতে পারে জাপার শেষ আশ্রয়স্থল।
ইসির অতিরিক্ত সচিক অশোক কুমার দেবনাথ এ নিয়ে বলেন, তারা যদি কোর্ট থেকে কোনো আদেশ পারেন, তাহলে সেটাই হবে।

কোর্টের আদেশ কোনো অংশ বাদ পড়লে তারা ইচ্ছা করলে নিবন্ধন পেয়ে যাবে সহজেই। কর্মকর্তারা বলছেন, দুটি অংশ থেকেই অতীতে নির্বাচিত সংসদ সদস্য রয়েছেন। তাই নিবন্ধনের শর্ত অনুযায়ী, ইসির তালিকায় যুক্ত হতে তেমন কোনো বেগ পেতে হবে না।

শনিবার (৯ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে জাতীয় সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জাপার কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ। এতে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে রওশন এরশাদের নাম ঘোষণা করলে উপস্থিত কাউন্সিলর ও ডেলিকেটরা দুই হাত তুলে তা সমর্থন জানান। এরপর প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীর দলের অন্যান্য সিনিয়র নেতাদের নাম ঘোষণা করেন। এর মধ্যে কাজী ফিরোজ রশিদকে নির্বাহী চেয়ারম্যান, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান এবং সাহিদুর রহমান টেপা, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, আল মাহগির শাদ এরশাদ, গোলাম সারোয়ার মিলন ও সুনীল শুভ রায়কে কো-চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

এই নাম ঘোষণার পর উপস্থিত কাউন্সিলর ও ডেলিকেটদের কাছে মহাসচিব হিসেবে কাজী মামুনুর রশীদের নাম ঘোষণা করেন গোলাম সারোয়ার মিলন। এতে উপস্থিত সবাই তা সমর্থন করেন।

সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। এ সময় কৃষক শ্রমিক জনতা পার্টির সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, সাবেক মন্ত্রী এবং জাপার একাংশের মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ ইসলামি ফ্রন্টের চেয়ারম্যান এমএ মতিন, বিএলডিপি চেয়ারম্যান এম নাজিম উদ্দীন আল আজাদ অংশ নেন।

সম্মেলনে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, অতিরিক্ত মহাসচিব সাহিদুর রহমান টেপা, প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম সারোয়ার মিলন, সুনীল শুভ রায়, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, ক্বারী হাবিবুল্লাহ বেলালী, ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীর, জাফর ইকবাল সিদ্দিকী, শাদ এরশাদ, নুরুল ইসলাম নুরু, রফিকুল হক হাফিজ, এমএ গোফরান, ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াহিয়া চৌধুরী, শেখ আলমগীর হোসেন, নুরুল ইসলাম নুরু, নিগার সুলতানা রানী, এমএ কুদ্দুস খান, জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, শফিকুল ইসলাম শফিক, আমানত হোসেন, ফখরুল আহসান শাহাজাদা, হাজী তুহিনুর রহমান নূরু হাজী, মোস্তাকুর রহমান মোস্তাক, হাজী নাসিরসহ জাতীয় পার্টির অসংখ্য কেন্দ্রীয় নেতা উপস্থিত ছিলেন।  

এছাড়া সারা দেশ থেকে বিপুল সংখ্যক কাউন্সিলর ও ডেলিগেট সম্মেলনে উপস্থিত হন।

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জীবদ্দশা থেকেই জাপায় দ্বন্দ্ব চলছে রওশন এরশাদ ও জি এম কাদেরের। ২০১৯ সালে এরশাদের মৃত্যুর পর জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যস্থতায় সমঝোতা হয়। বিরোধী দলের নেতার পদ পেয়ে জি এম কাদেরকে জাপার চেয়ারম্যান হিসেবে মেনে নেন রওশন। তিন বছর পর সমঝোতা ভেঙে যায়। জি এম কাদেরকে নেতৃত্ব থেকে সরাতে ২০২২ সালের আগস্টে কাউন্সিলের ডাক দেন তিনি। পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে রওশনকে বিরোধী দলের নেতার পদ থেকে সরাতে চেষ্টা করেন জি এম কাদের। তবে সরকারের সমর্থনে টিকে যান রওশন।

২০২৩ সালের জানুয়ারিতে সরকারের মধ্যস্থতায় সমঝোতা হয় জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশনের। তবে কয়েক মাস পর তা ভেঙে যায়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রওশনপন্থিদের মনোনয়ন না দিলে সে বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। জাপার মনোনয়ন প্রত্যাখান করে নিজ হাতে জাপার কর্তৃত্ব রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎও করেন রওশন। তবে তার অংশ আর ভোট করেনি। এর মাঝে মহাজোট ২৬টি আসন ছেড়ে দিলেও ৭ জানিয়ারির ভোটে জাপা ঘরে মাত্র ১১টি আসন তুলতে পারেন কাদেরপন্থিরা। এরপর ২৮ জানুয়ারি জি এম কাদেরকে অব্যাহতি দিয়ে নিজেকে জাপার চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন রওশন এবং সম্মেলনের ঘোষণা দিয়ে নিজের কমিটিই আমলে নেওয়ার জন্য ইসিতে চিঠি দেন। তবে নির্বাচন কমিশন গত ১৯ ফেব্রুয়ারি সেই চিঠির আবেদন না মঞ্জুর করে। ২০১৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় পার্টির নবম জাতীয় সম্মেলন। বর্তমান পরিস্থিতিতে রওশন এরশাদের করা সম্মেলনের নতুন কমিটি ইসিতে এলে হিসাবে হবে কার হাতে ক’জন প্রেসিডিয়াম সদস্য।

উল্লেখ্য, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জীবিত থাকতেও বেশ কয়েকবার ভাঙনের মুখে পড়ে জাপা এবং পরে ভেঙেও যায়।

বাংলাদেশ সময়: ২০১২ ঘণ্টা, মার্চ ০৯, ২০২৪
ইইউডি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।