ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

শাহরিয়ার আলমের কুশপুতুল পোড়াল যুবলীগ-ছাত্রলীগ, অবাঞ্ছিত ঘোষণা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৫ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০২৪
শাহরিয়ার আলমের কুশপুতুল পোড়াল যুবলীগ-ছাত্রলীগ, অবাঞ্ছিত ঘোষণা

রাজশাহী: জানাজার মাঠে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে কটাক্ষ করা এবং মামলার হুমকির প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচি হয়েছে।  

শুক্রবার (২৮ জুন) বিকেলে রাজশাহী মহানগরে যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এই বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন।

এসময় সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও এমপি শাহরিয়ারের কুশপুতুলে জুতার মালা পরিয়ে তাতে জুতাপেটা করেন লিটনের অনুসারী নেতা-কর্মীরা। তারা এমপি শাহরিয়ার আলমের হুমকির প্রতিবাদ জানান এবং বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে এমপি শাহরিয়ারকে রাজশাহীতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।

রাজশাহী মহানগর যুবলীগ সভাপতি মনিরুজ্জামান মণির সভাপতিত্বে ও মহানগর ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক ডা. সিরাজুম মুনির সবুজের সঞ্চালনায় নগরের সাহেববাজার জিরোপয়েন্ট বড় মসজিদ এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়। মিছিল পরবর্তী বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌরিদ আল মাসুদ রনি, সাংগঠনিক সম্পাদক অরবিন্দ দত্ত বাপ্পি, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি আব্দুল মোমিন, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রকি কুমার ঘোষ, বর্তমান সভাপতি নূর মোহাম্মদ সিয়ামসহ অনেকেই।

এর আগে একটি বিক্ষোভ মিছিল কুমারপাড়ায় থাকা রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়। বিক্ষোভ মিছিলটি মহানগরীর বিভিন্ন প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে মহানগরীর প্রাণকেন্দ্র সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে গিয়ে শেষ হয়। সেখানেই আয়োজন করা হয় বিক্ষোভ সমাবেশের।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, রাজশাহীর বাঘায় দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় নৃশংস হামলায় উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল গুরুতর আহত হন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে ২৬ জুন তার মৃত্যু হয়। এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। কারণ তাদের একটা লাশের প্রয়োজন ছিল। অথচ এই ঘটনা ভিন্ন দিকে মোড় ঘোরাতে বাবুল হত্যাকাণ্ডের মদদদাতা হিসেবে স্থানীয় এমপি শাহরিয়ার আলম আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের নাম জড়িয়েছেন। এটি করে তিনি চরম ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন। হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত ঘটনা আড়াল করতেই এমপি শাহরিয়ার দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতা খায়রুজ্জামান লিটনকে জড়িয়ে জানাজার মাঠে এমন বক্তব্য দিয়েছেন। তারা সমাবেশ থেকে এমপি শাহরিয়ারকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) রাজশাহীর বাঘা মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নিহত আওয়ামী লীগ বাবুলের জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় গিয়ে সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এবং রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের বর্তমান সদস্য শাহরিয়ার আলম এ সময় সরাসরি দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের বিরুদ্ধে এই হত্যাকাণ্ডে ইন্ধন যোগানোর অভিযোগ তোলেন।

শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘আমরা জবাব চাই, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের কাছে। অ্যাডভোকেট লায়েব উদ্দিন লাবলুর কাছে জবাব চাই, সে কেন আজ পলাতক?’ 

এছাড়া হত্যাকাণ্ডের পেছন থেকে মদদদাতা হিসেবে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান আসাদ, খায়রুজ্জামান লিটন ও বাঘা উপজেলার নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট লায়েব উদ্দিন লাবলুর নামে মামলা করার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন শাহরিয়ার আলম। এর সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত মাঠে থাকার ঘোষণা দেন।  

এমপি শাহরিয়ারের এমন বক্তব্যের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) বিকেলে নিজ দপ্তরে প্রেস ব্রিফিং করে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানান সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।

তিনি বলেন, ‘বাবুল সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী ও নেতা এবং আমার অনেক স্নেহভাজন ছিল। আমি আমার রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই তাকে পাশে পেয়েছি। তিনি নিবেদিত প্রাণ আওয়ামী লীগ নেতা ছিলেন। তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত করার মতো নিন্দনীয়-নৃসংশ ঘটনার সঙ্গে আমার কোনোভাবে জড়িত থাকার কোনো কারণ নেই, কোনো সুযোগ নেই, যুক্তিও নেই। আজ মরহুমের জানাজায় আমাকে দায়ী করে, সরাসরি আমার নাম ধরে, আমার দলীয় পদ উল্লেখ করে, আমার পাশাপাশি আমাদের আরেকজন সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান আসাদসহ আরও কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে বাঘা-চারঘাটের বর্তমান এমপি কীভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ঈর্ষাপরায়ণভাবে এমন উক্তি করতে পারেন, সেটা আমার বোধগম্য নয়। জানাজা নামাজ একটি পবিত্র কাজ, যেখানে মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করা হয়, সেখানে এভাবে মামলা করা হবে, মোবাইল কললিস্ট চেক করা হোক, মামলার আসামি করা হবে-এই সমস্ত কথা তার কাছ থেকে আমি আশাই করিনি। তিনি কী উদ্দেশ্যে বলেছেন, কেন বলেছেন তা তিনিই বলতে পারবেন। যারা রাজনীতি সচেতন ও বিবেকসম্পন্ন মানুষ তারা নিশ্চিয় এ রকম কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করবেন না। করার কোনো কারণ নেই। ’

বাংলাদেশ সময়: ২১২০ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০২৪
এসএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।