ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩১ শ্রাবণ ১৪৩১, ১৫ আগস্ট ২০২৪, ০৯ সফর ১৪৪৬

রাজনীতি

অভিজ্ঞতা থেকেই সহিংসতা রোধে সচেষ্ট হই: বিএনপি নেতা বাচ্চু

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০২৪
অভিজ্ঞতা থেকেই সহিংসতা রোধে
সচেষ্ট হই: বিএনপি নেতা বাচ্চু

সিরাজগঞ্জ: স্বৈরাচার এরশাদ পতনের পর যেসব ঘটনা ঘটেছিল, তা নিজে চোখে দেখেছি। আর সেই অভিজ্ঞতা থেকেই হাসিনার পদত্যাগের পরপরই সচেষ্ট হই।

বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে মাঠে নেমে পড়ি। যে কারণে সিরাজগঞ্জ জেলায় সহিংসতা অনেকটাই কম হয়েছে। রক্ষা পেয়েছে জনগণের জানমাল ও সরকারি সম্পদ। নিরাপদে রয়েছেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষেরাও। এরই মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে সিরাজগঞ্জের জনজীবনে।  

বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) বাংলানিউজকে এসব কথা বলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু।  

তিনি বলেন, ১৯৯০ এর স্বৈরাচার এরশাদ পদত্যাগের পর এক শ্রেণির লুটেরা লুট করার জন্য বের হয়েছিল। এ অভিজ্ঞতা থেকে শেখ হাসিনার পতনের পরপরই মসজিদে মসজিদে গিয়ে মাইকে ঘোষণা দিয়েছি, আমার বক্তব্য ছিল, আপনারা ধৈর্য্যশীল হবেন, কেউ কারও বাড়িঘর লুটপাট করবেন না, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করবেন না, হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে আক্রমণ করবেন না, কারও বাড়িঘরে আগুন দেবেন না। বিএনপির সঙ্গে সম্পৃক্ত কেউ এগুলো করলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। অনেক রাত পর্যন্ত জেগে এগুলো করেছি। তারপরও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত কয়েকজনের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট-ভাঙচুরের খবর আমাদের কানে আসছিল, সেটা বন্ধ করার জন্য বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে তিন/চারটি মিটিং করেছি। এরপর প্রতিটি ওয়ার্ড, ইউনিয়নে কমিটি করে দিয়েছি। উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীদেরও সংযত থাকার নির্দেশনা দিই। পুলিশকে অ্যাকটিভ হওয়ার জন্য থানাগুলোতে যোগাযোগ করেছি। ট্রাক-বাস মালিকদের সঙ্গে মিটিং করে তাদের যানবাহন চালু করতে বলেছি, আশ্বস্ত করেছি। জুয়েলারি সমিতি, ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বসে তাদের দোকানপাট খুলতে বলেছি। মনসুর আলী মেডিকেলসহ সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলো চালু রাখার জন্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রতি রাতে পাহারা বসিয়েছি। এসব কারণে সিরাজগঞ্জে তেমন কোনো বড় ঘটনা ঘটে নাই। সাবেক মন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও জেলা বিএনপির সভাপতি রুমানা মাহমুদের সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে টাইম-টু-টাইম যোগাযোগ করেছি। বিএনপির নেতাকর্মীরা পূর্ণাঙ্গভাবে মাঠে থেকেছেন আন্দোলনকারী ছাত্ররাও মাঠে থেকেছেন। সবাইকে আমি ধন্যবাদ জানাই।  

জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ৪ আগস্ট সিরাজগঞ্জ শহর পুরোপুরি দখল করে নেন বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। ওই দিন বেশ কিছু ভাঙচুর ও সহিংসতার ঘটনা ঘটে। ভাঙচুর করা হয় বেশ কিছু স্থাপনা। আওয়ামী লীগের কাছে হামলার শিকার হয়ে পাল্টা আক্রমণ করেন ছাত্র-জনতা। পুড়িয়ে দেওয়া হয় আওয়ামী লীগ কার্যালয়, সাবেক ও বর্তমান সংসদ সদস্যদের বাড়ি। ওই দিনের ঘটনায় পুলিশসহ ২৭ জন নিহত হন। এর মধ্যে সিরাজগঞ্জ পৌর শহরে তিন যুবদল-ছাত্রদল নেতাকর্মী, রায়গঞ্জে এক সাংবাদিক ও  পাঁচ আওয়ামী লীগ নেতা এবং এনায়েতপুরে তিন আন্দোলনকারী ছাত্র ও ১৫ পুলিশ সদস্য নিহত হন।  

পরদিন ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগের পরপরই উত্তাল হয়ে ওঠে সিরাজগঞ্জ। পাড়ায় মহল্লায় আনন্দ মিছিল ছড়িয়ে পড়ে। ঠিক তখনই জনগণের জানমাল রক্ষায় কাণ্ডারি হয়ে সামনে আসেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু।  

৫ আগস্ট সিরাজগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট ওয়াজ করোনি লকেটের চেম্বারে লুটপাট হয়। এরপর সেইসব মালপত্র উদ্ধার করে  লকেটের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেন বিএনপি নেতা বাচ্চু ও জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলাম।  

প্রথমেই তিনি শহরে মাইকিং করে সবাইকে শান্ত থাকতে বলেন। সহিংসতা থেকে বিরত থাকতে বিএনপি নেতাকর্মী ও আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে বিরত থাকতে বলেন। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে আশ্বস্ত করেন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা এবং সার্বিক নিরাপত্তা দেওয়ার আশ্বাস দেন।  

এরপর থেকে প্রতিদিনই বিভিন্ন মহল্লায় মহল্লায় গিয়ে দলীয় নেতাকর্মী, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মিটিং করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সচেষ্ট হন তিনি। এছাড়া বিভিন্ন ইস্যুতে সংযত থাকার জন্য নিজ ফেসবুক পেইজে নিয়মিত ভিডিও বক্তব্য আপলোড করেন বাচ্চু। জনজীবন স্বাভাবিক করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করেন।  

এদিকে জনজীবন স্বাভাবিক করতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীরাও মাঠে নেমে পড়েন। তারা শহর পরিচ্ছন্ন, গ্রাফিতি অঙ্কন ছাড়াও পুলিশের অনুপস্থিতিতে সড়ক-মহাসড়কে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করেন। সেই সঙ্গে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরাও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের পাশে দাঁড়ান। তারে ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে এসেছে সিরাজগঞ্জে।  

স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা বলেন, সাইদুর রহমান বাচ্চুর নেতৃত্বে বিএনপি কার্যকর ভূমিকা রাখায় আমরা নিরাপদ রয়েছি। তিনি শুরু থেকেই সহিংসতা থেকে বিরত থাকার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন। ফলে জেলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক কম হয়েছে।  

সিরাজগঞ্জ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নরেশ চন্দ্র ভৌমিক বলেন, ৪ তারিখের পর তেমন বড় কোনো সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু ও জামায়াত নেতারা আমাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তারা আমাদের সার্বিক নিরাপত্তা দিয়েছেন। এরপর থেকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষগুলো নিরাপদেই রয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০২৪
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।