ঢাকা: বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সংবিধানকে তারা (আওয়ামী লীগ) কেটে নিজেদের মতো করে একটা মুড়ির ঠোঙা বানিয়েছিল। নির্বাচন কমিশনের প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন করতে বেশি সময় লাগার কথা নয়।
বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী পল্লী চিকিৎসক অ্যাসোসিয়েশনের ১৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে খুন-গুমের শিকার বিএনপি নেতাকর্মীদের আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়।
ভারত ইস্যুতে রিজভী বলেন, বাংলাদেশের মানুষের তো আবেগ থাকতেই পারে। আমাকে যখন কেউ হেয় করবে, অবহেলা করবে, যখন ঘৃণা করবে এবং বাংলাদেশের নাগরিকদের নিয়ে যখন ধৃষ্টতাপূর্ণ কথাবার্তা বলবেন ভারতের একজন কেন্দ্রীয় এবং প্রভাবশালী মন্ত্রী, তখন তো আমাদের মধ্যে আবেগ আসবেই।
তিনি বলেন, ওরা তো আমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব চায় না এরা বন্ধুত্ব চায় শুধু শেখ হাসিনার মতো একজন ভয়ঙ্কর রক্তপিপাসু এক স্বৈরশাসকের সঙ্গে। বাংলাদেশের জনগণকে ওরা পছন্দ করে না। শেখ হাসিনা থাকলে বাংলাদেশে তারা মাতব্বরি করতে পারবে, শেখ হাসিনা থাকলে ভারতের আধিপত্য বাংলাদেশে বিস্তার লাভ করবে।
রিজভী বলেন, ভারতে ইলিশ মাছ পাঠানোর বিষয়ে আমাদের একজন উপদেষ্টা একটি কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, আমরা ইলিশ মাছ রপ্তানি করি। এখানে আবেগ দিয়ে কথা বললে তো হবে না। আমি এ নিয়ে বলতে পারি, বাঙালি জনগোষ্ঠী ভারতেও আছে। তাদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব হলো দুর্গাপূজা। দুর্গাপূজার সময়ে ইলিশ মাছ একটা বড় উপাদান হিসেবে কাজ করে আমরা জানি।
তিনি বলেন, আমরা কোনোদিনই ইলিশ মাছ রপ্তানিতে বাধা দিইনি। আমরা নিজেরাই মাঝারি থেকে ছোট ইলিশ এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার টাকা দিয়ে কিনি। বাড়তি দাম মেনে নিয়েও আমরা কিন্তু ইলিশ রপ্তানি করি। আমাদের অর্থ উপদেষ্টা আবেগের প্রশ্নের কথা বলেছেন। আবেগের প্রশ্ন তখনই আসছে, একই সময়ে যখন আমরা দেখছি ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, সীমান্তে বাংলাদেশি কাউকে দেখলে পা উপরের দিকে ঝুলিয়ে রেখে শাস্তি দেওয়া হবে। তখন তো আমাদের মধ্যে আবেগ তৈরি হবেই।
খালেদা জিয়া দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কখনো আপস করেননি মন্তব্য করে দলের এ মুখপাত্র বলেন, দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে তিনি কখনো আপস করেননি। আমাদের গোটা জাতি তো নিজ দেশ, নিজ রাষ্ট্রের বিষয়ে অত্যন্ত আবেগপ্রবণ। যে সময়ে আপনারা ইলিশ মাছ রপ্তানির কথা বলছেন, রপ্তানি হতেই পারে, কিন্তু যখন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঝুলিয়ে রাখার কথা বলেন, তখন আমি কেন বলব না, আমরা ইলিশ মাছ দেব না।
তিনি বলেন, আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য তো সবসময় হয়ে এসেছে। কিন্তু আবেগ তখনই আসে, যখন আমাদের সঙ্গে ক্রীতদাসের মতো আচরণ করে। তখন তো আমরা বলবই, আমরা ইলিশ মাছ কেন দেব? পেঁয়াজ আমরা আমদানি করি ভারত থেকে। ভারতে যখন সংকট হয়, তখন তো তারা পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। রপ্তানির ওপর শুল্ক বাড়িয়ে দেয়। তারা কিন্তু আমাদের এক ইঞ্চিও ছাড় দেয় না।
তিনি আরও বলেন, উপদেষ্টা ফরিদা আক্তারের বক্তব্য আমার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে। তিনি ক্ষমা চেয়ে বলেছেন, ভারতে এবার আমরা ইলিশ মাছ দিতে পারব কি না, জানি না। আমি তার বক্তব্যে এক ধরনের দেশপ্রেমের সুর ধ্বনিত হতে দেখি। তিনি এ বিষয়ে অত্যন্ত শক্ত অবস্থান নিয়ে কথা বলেছেন। মানুষ মনে করছে, তিনি জনগণের কথারই প্রতিধ্বনিত করেছেন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন, বিএনপির তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক কৃষিবিদ শামিমুর রহমান শামিম, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দীন আলম প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৪
টিএ/আরএইচ